14 Oct 2017

ম্যালওয়্যার যখন গুপ্তচর


ফর্মবুক একটি ম্যালওয়্যার তথা স্পাইওয়্যারএটি যে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বিপজ্জনক কোনো ম্যালওয়্যার, তা মোটেই নয়।
Photo Credit : Pixabay
কিন্তু গত এক বছর ধরে এই ম্যালওয়্যারটি সাইবার ওয়ার্ল্ডে বিশেষ কুখ্যাতি অর্জন করেছে অন্য কারণে। কারণটি হল, ফর্মবুক ম্যালওয়্যার বর্তমানে সাইবার এসপিওনেজ অর্থাৎ ইনটারনেটের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞাটাই পালটে দিয়েছে।
আজ থেকে বছর কুড়ি আগেও অন্যদেশের কাজকর্মের উপর গোপনে নজরদারির জন্য গুপ্তচর সংস্থাগুলি তাদের এজেন্ট অর্থাৎ গুপ্তচরদের মূলত কাজে লাগাত। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে গুপ্তচরগিরির কাজে এজেন্টদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্পাইওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। স্পাইওয়্যার নামক বিশেষ ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে অন্যদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আমলাদের কম্পিউটারে, প্রতিরক্ষা মণ্ত্রকের কম্পিউটারে, পারমাণবিক ও মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলির কম্পিউটারে হামলা চালিয়ে সেখান থেকে গোপনীয় ফাইল,পাসওয়ার্ড ইত্যাদি চুরি করা হয়। সাইবার এসপিওনেজের জন্য বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নিজস্ব হ্যাকার রয়েছে। মূলত তাদের মাধ্যমে নিত্যনতূন স্পাইওয়্যার তৈরি করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি অন্যদেশের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলির কম্পিউটার সিস্টেমে হামলা চালায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ধরা পড়ার সমস্যা রয়েছে প্রতিটি ব্যক্তির হাতের লেখার যেমন আলাদা বৈশিষ্ট রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন দেশের হ্যাকার গ্রুপগুলির তৈরি ম্যালওয়্যারগুলিরও নিজস্ব বৈশিষ্ট রয়েছে। তাই যখন কোনো ম্যালওয়্যার কম্পিউটার সিস্টেমে হামলা চালায়, তখন সেই ম্যালওয়্যারটিকে বিশ্লেষণ করে বোঝা সম্ভব যে, ম্যালওয়্যারটি কোন দেশের হ্যাকাররা তৈরি করেছে অর্থাৎ কোন দেশের গুপ্তচর সংস্থা এই হামলা পেছনে রয়েছে
তাই ধরা পড়ার হাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এখন নিজেদের হ্যাকারদের দিয়ে স্পাইওয়্যার তৈরি করছে না। তার বদলে তারা বাজার থেকে রেডিমেড স্পাইওয়্যার কিনছে বা ভাড়া করছেএই ধরণের ম্যালওয়্যারকে বলা হয় "malware-as-a-service"।  ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন ধরণের ম্যালওয়্যারের বিশাল বাজার রয়েছে। সেখানে এই ধরনের রেডিমেড ম্যালওয়্যার কেনা বা ভাড়া পাওয়া যায়ফর্মবুক হল এমনই একটি রেডিমেড ম্যালওয়্যার যা ডার্ক ওয়েবে ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়ার রেট প্রতি সপ্তাহে $২৯, আর যদি এক মাসের জন্য ভাড়া নিতে চান, তবে অনেকটাই ছাড় মিলবে, সেক্ষেত্রে ভাড়ার পরিমাণ মাত্র $৫৯ 

 বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এখন ফর্মবুক ভাড়া নিয়ে তার সাহায্যে অন্য দেশগুলির কম্পিউটার সিস্টেমের উপরে গোপনে নজরদারি চালাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে ডার্ক ওয়েবের বাজারে এই ম্যালওয়্যারটি ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এমন কিছু ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে এই ম্যালওয়্যারের সাহায্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভারতের বিভিন্ন কম্পিউটার সিস্টেমের উপর গোপনে নজরদারি চালানো হয়েছিল বা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।

ফর্মবুক স্পাইওয়্যারের সুবিধা হল এই ম্যালওয়্যারটি নির্দিষ্ট কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হ্যাকাররা তৈরি করেনি। সাধারণত এই ধরনের রেডিমেড ম্যালওয়্যার ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারদের গ্রুপগুলি (বিভিন্ন দেশের হ্যাকাররা যার সদস্য) তৈরি করে। তাই এই ধরণের ম্যালওয়্যারের মধ্যে এমন কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট থাকে না, যার সাহায্যে বোঝা সম্ভব সেটি কোন দেশে তৈরি। সুতরাং কোনো দেশ যদি এই ম্যালওয়্যার ভাড়া করে ভারতের কম্পিউটার সিস্টেমের উপর হামলা চালায়, সেক্ষেত্রে কোন দেশ ম্যালওয়্যারটি ভাড়া নিয়ে এই হামলা চালিয়েছিল, তা বোঝা খুবই মুশকিল।


আরও পড়ুনঃ




2 comments:

জনপ্রিয় পোস্ট