অনেকের ধারণা যে, অ্যাপলের কম্পিউটারে কোনো
অ্যান্টিভাইরাস প্রয়োজন নেই।
কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অ্যাপলের কম্পিউটারে ভাইরাস হামলা যে একেবারেই হয় না, তা নয়।
তবে হামলার
পরিমাণ উইনডোজ কম্পিউটারের থেকে অনেকটাই কম। কারণ ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে রয়েছে
ইউনিক্স কোর। কিন্তু একটা তথ্য অনেকেই হয়তো জানেন না যে, বিশ্বে প্রথম ভাইরাসটি
তৈরি করা হয়েছিল অ্যাপলের কম্পিউটারে হামলা চালানোর জন্য। তাই এটা ভাবার কোনো কারণ
নেই যে, অ্যাপলের কম্পিউটার পুরোপুরি ভাইরাস হামলা ঠেকাতে সক্ষম।’ সে অবাক হয়ে
বলল, ‘তাই, জানতাম না তো!’
Photo Credit: Pixabay |
আমার সেই পরিচিত ব্যক্তির দোষ নেই। এই তথ্যটা শুনলে
অনেকেই অবাক হয়ে যান যে, বিশ্বে প্রথম ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছিল অ্যাপলের কম্পিউটারে
হামলা চালানোর জন্য। যেহেতু সেই সময় অ্যান্টিভাইরাস বলে কিছু ছিল না, তাই ভাইরাসটি
সফল ভাবে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল। এই ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত যে, বিশ্বে কোনো
কোম্পানির কম্পিউটারই পুরোপুরি ভাইরাস প্রুফ নয়।
গত
শতাব্দীর আটের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে স্টিভ জোবসের তৈরি অ্যাপল
ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছিল। সেই সময় ওই দেশের পেনসিলভিনিয়ায়
মাউন্ট লেবানন হাইস্কুলে পড়তো রিচার্ড ‘রিখ’ স্ক্রেনটা নামে এক ছাত্র। রিখ স্কুলে থাকতেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেছিল। কম্পিউটার
সম্পর্কে রিখের আকর্ষণের সূত্রপাত ১৯৮০ সালে। সেই বছর বড়দিনের উপহার হিসাবে রিখ
পেয়েছিল অ্যাপল ℿ কম্পিউটার। রিখ
তখন সবে ক্লাশ সেভেনে পড়ে। সেই সময় রিখের বন্ধুদের অনেকের বাড়িতেই কম্পিউটার এসে
গিয়েছে। কম্পিউটার মানে তারা তখন শুধু বুঝতো কম্পিউটার গেম। সেটাই ছিল তাদের কাছে
মূল আকর্ষণ। কিন্তু কম্পিউটার নিয়ে রিখের আকর্ষণ ছিল একটু অন্যরকম। সমবয়সী বন্ধুরা
যখন কম্পিউটারে গেম খেলতে বা পাইরেটেড সফট্ওয়্যার নিজেদের মধ্যে এক্সচেঞ্জ করতে
ব্যস্ত থাকতো, তখন রিখ ব্যস্ত থাকতো কম্পিউটারে বিভিন্ন সফট্ওয়্যার প্রোগ্রাম এবং
গেম তৈরিতে। ১৯৮১ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই রিখ তার বন্ধুদের মধ্যে ‘কম্পিউটার গিক’
হিসাবে সুখ্যাতি ও কুখ্যাতি দুটোই অর্জন করেছিল। ওই বয়সেই রিখ নিজেই কম্পিউটারে
একটি টেক্সট বেসড্ অ্যাডভেঞ্চার গেম তৈরি করে ফেলেছিল। সেই দক্ষতা রিখকে তার
স্কুলে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে তার প্র্যাংক বা ইয়ার্কি
বন্ধুদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও প্রায়ই বিপাকে ফেলত। রিখের বন্ধুরা বিভিন্ন গেম ও
সফট্ওয়্যারের পাইরেটেড ভার্সন ফ্লপির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে এক্সচেঞ্জ করতো। সেই
সমস্ত ফ্লপির মধ্যে রিখ গোপনে নিজের লেখা কিছু প্রোগ্রামিং কোড ঢুকিয়ে দিত, ফলে সেই ফ্লপিগুলি যখন অন্য কম্পিউটারে ইনসার্ট করা হত, তখন সেই কম্পিউটারগুলিতে নানা সমস্যা হত। যেমন সেই কোড সহ ফ্লপি অন্য কম্পিউটারে ঢোকালে কম্পিউটারটি অটোমেটিক শাটডাউন
হয়ে যেত বা ডেস্কটপ ব্ল্যাংক হয়ে যেত। রিখের এই ধরনের রসিকতার জন্য বন্ধুরা তার
সঙ্গে ফ্লপি এক্সচেঞ্জ করা বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে রিখ চিন্তা করলো এমন কোনো
কম্পিউটার কোড কি তৈরি করা সম্ভব যা নিজেই নিজেকে কপি করে এক কম্পিউটার থেকে অন্য
কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়বে। সময়টা ছিল ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর। স্কুলে শীতের ছুটি পড়ে
গিয়েছে। সেই সময় আমেরিকায় গজিয়ে উঠেছিল একাধিক কম্পিউটার ক্লাব (অনেকটাই এখনকার ইন্টারনেট কাফের মতো)। রিখ ছিল তেমনই এক ক্লাবের সদস্য। সদস্যরা ক্লাবের কম্পিউটারগুলি শিক্ষামূলক বা
অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারতেন। রিখ ঠিক করলো সে কম্পিউটার ক্লাবের
কম্পিউটারগুলির মাধ্যমে এমন একটি কোড ছড়িয়ে দেবে যেটি নিজেই নিজেকে রেপ্লিকেট বা
কপি করতে পারবে। যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। ১৯৮২ সালের জানুয়ারিতে মাত্র দুই সপ্তাহের
মধ্যে রিখ অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজে লিখে ফেলল একটি সেল্ফ রেপ্লিকেটিং প্রোগ্রাম।
রিখের বয়স তখন মাত্র ১৪ এবং সে জানতো না যে, সে খেলাচ্ছলে
বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসটি তৈরি করে ফেলেছে। রিখের তৈরি ৪০০ লাইনের সেই
প্রোগ্রামটি অ্যাপল ম্যাকিনটোশের ৩.৩ অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করতো। রিখ তার সেই
প্রোগ্রামটির নাম দিয়েছিল এলক্ ক্লোনার। তবে মজার ব্যাপার হল ১৯৮২ সালে প্রথম
কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করলেও ‘কম্পিউটার ভাইরাস’ শব্দটির কিন্তু প্রচলন হয় তারও
দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে।
No comments:
Post a Comment