17 Aug 2018

আপনার মোবাইল ফোনে কি AI ক্যামেরা আছে?

Image Credit: Pixabay

স্যামসাঙ কোম্পানির গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন হাই-এন্ড স্মার্ট ফোনের (এস নাইন নোট) অন্যতম বৈশিষ্ট হল এর AI ক্যামেরা। AI ক্যামেরা হল এমন ক্যামেরা যার সেটিংস Artificial Intelligence বা মেশিন লার্নিং সফটওয়্যারের সাহায্যে কাজ করে। 


কী কী সুবিধা

এখন শুধু অ্যাপল, গুগল, স্যামসাঙের মতো কিছু নামী কোম্পানির দামি অর্থাৎ হাই-এন্ড স্মার্ট ফোনগুলিতেই AI ক্যামেরার সুবিধা রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে AI টেকনোলজি নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন কোম্পানির তরফে গবেষণা চলছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে প্রায় সমস্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির লো-এন্ড ফোনেও এই ক্যামেরা থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন হল AI ক্যামেরা কী এবং ফোনে এই ক্যামেরা থাকলে ছবি তোলার ক্ষেত্রে কী কী সুবিধা পাওয়া যায়?


প্রযুক্তির উন্নতি

গত কয়েক বছরে স্মার্ট ফোনের ক্যামেরার প্রযুক্তির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতি বলতে আমি বলতে চাইছি, ক্যামেরার সেনসরের অনেক উন্নতি হয়েছে, মেগাপিক্সল বেড়েছে (এখন অনেক মিডল রেঞ্জের বা মাঝারি দামের ফোনেও ১২ MP ক্ষমতার সেলফি ক্যামেরা বা ফ্রন্ট ক্যামেরা থাকছে, রিয়ার ক্যামেরার ক্ষমতা ১৬ MP বা তারও বেশি থাকছে অনেক ক্ষেত্রে)। এছাড়া ক্যামেরার সেটিংসেও অনেক নতুন ফিচার অ্যাড করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকেই এখনও মোবাইল ফোনে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের মতো ভালো ছবি তুলতে পারে না। 

প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি 

গুগল সার্চবক্সে আপনি যদি street photography লিখে সার্চ করেন, তবে প্রচুর ভালো কোয়ালিটির ছবি দেখতে পাবেন। প্রতিটি ছবির বিষয়বস্তু রাস্তাঘাটে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কিছু মুহূর্ত। কিন্তু বিষয়বস্তু সাধারণ হলেও ফটোগুলি এমনভাবে তোলা হয়েছে যে, সেগুলির প্রত্যেকটিই অসাধারণ। এটাই হল প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি। একজন সাধারণ মানুষ যখন তার মোবাইল ফোনে ফটো তোলে, তখন সে সাবজেক্ট অর্থাৎ বিষয়বস্তুর দিকে ক্যামেরার লেন্স তাক করে শাটার বাটন ট্যাপ করে। কিন্তু একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার যখন মোবাইল ফোনে ফটো তোলে তখন সে ক্যামেরার সেটিংসে গিয়ে আগে হোয়াইট ব্যালেন্স, শাটার স্পিড, অ্যাপারচার, ISO ইত্যাদি ঠিক করে নেয়।

ক্যামেরায় AI টেকনোলজি

AI টেকনোলজি হল Artificial Intelligence টেকনোলজি বা কৃত্রিম বুদ্ধি সম্পন্ন প্রযুক্তি। AI প্রযুক্তিকে কোনও বিশেষ বিষয়ের উপর প্রয়োজনীয় তথ্য যদি দেওয়া হয়, তবে সেই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রযুক্তি নিজেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে পারে। ক্যামেরায় ব্যবহৃত AI টেকনোলজির সফটওয়্যারে কয়েক লক্ষ (কয়েক কোটিও হতে পারে) বিভিন্ন ধরনের ছবি সম্পর্কে তথ্য বা ডেটা প্রথমে ইনপুট করা হয়। বিভিন্ন ধরণের ছবি বলতে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর ছবি (যেমন, মানুষ, পশুপাখি, পাহাড়, নদী, রাস্তাঘাট, বাড়ি ইত্যাদি), বিভিন্ন সময়ে (সকালে, ভোরে, সন্ধ্যায়, মেঘলা দিনে, রাত্রে ইত্যাদি) তোলা ও বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে (লং শট, ক্লোজ আপ ইত্যাদি) তোলা ছবি।


ফটো তুলতে সাহায্য

AI টেকনোলজিকে যেহেতু আগে থেকেই প্রচুর ছবি সম্পর্কে এভাবে নানা তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাই সেই সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোন সময়ে কোন বস্তুর ছবি কোন অ্যাঙ্গেলে সবচেয়ে ভালোভাবে তোলা সম্ভব। যদি আপনি বিকালে আকাশে উড়ে যাওয়া পাখির ছবি তুলতে চান, সেক্ষেত্রে আকাশে আলোর পরিমাণ কতটা, পাখিগুলি কতটা দ্রুত উড়ছে, আপনি পাখিগুলির থেকে কতটা দূরে রয়েছেন ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে AI নিজেই একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের মতো ক্যামেরার হোয়াইট ব্যালেন্স, শাটার স্পিড, অ্যাপারচার, ISO ইত্যাদি সেটিংস ঠিক করে ফটো তুলবে। ফলে ক্যামেরার সেটিংসের খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা না ঘামিয়েই আপনি একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের মতো ভালো কোয়ালিটির ছবি তুলতে পারবেন।

বোকে এফেক্ট

বোকে কথাটা জাপানি শব্দ, এর অর্থ হল Blur বা ঝাপসা। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের ছবিতে এই এফেক্ট প্রায়ই দেখা যায়। ধরুন, রাস্তার পাশে একটি ভিখারি বসে আছে। তাঁর পেছন দিয়ে চলে যাচ্ছে লোকজন, গাড়ি ইত্যাদি। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাররা যখন এমন ছবি তোলেন, তখন ছবির মেন সাবজেক্ট অর্থাৎ সেই ভিখারিকে সামনে রেখে পেছনের লোকজন, গাড়ি অর্থাৎ পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড ঝাপসা করে দেন। একে বলে বোকে এফেক্ট। কিন্তু সাধারণ মোবাইল ফোনের ডুয়াল ক্যামেরায় এই বোকে এফেক্ট আনতে গেলে আপনাকে প্রথমে ম্যানুয়ালি ক্যামেরার সেটিংস ঠিক করে নিয়ে তারপর ছবি তুলতে হবে। কিন্তু মোবাইল ফোনে AI ক্যামেরা থাকলে সে নিজেই বুঝে নেবে যে, ভিখারি আপনার সাবজেক্ট এবং সেই অনুসারে সে নিজেই ক্যামেরার সেটিংস চেঞ্জ করে সাবজেক্টের ব্যাকগ্রাউন্ড ঝাপসা করে দেবে। 

আউট অফ ফোকাস

যারা প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার নন, তাঁদের তোলা ছবি অনেক সময় আউট অফ ফোকাস হয়। অর্থাৎ ছবির মূল সাবজেক্টের উপর লেন্সের ফোকাস থাকে না। তা ছাড়া অনেক সময় লেন্সের উপর অসাবধানতায় আঙুল পড়ে গেলে ছবির কোনও একটা সাইড কালো হয়ে যায়। AI ক্যামেরায় ছবি তোলার ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। কারণ আপনি AI ক্যামেরা একসঙ্গে একই সাবজেক্টের একাধিক ছবি তুলবে। তারপর প্রতিটি ছবি আলাদাভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেবে কোনটি  ঠিকঠাক উঠেছে। সেই ছবিটি রেখে বাকি ছবিগুলি (যেগুলি আউট অফ ফোকাস হয়েছে, বা লেন্সে আঙুল পড়ে গেছে বা অন্য কোনও ছবিতে কোনও সমস্যা রয়েছে) ডিলিট করে দেবে।      

প্রয়োজন নেই ডুয়াল লেন্সের

সাধারণ মোবাইল ফোনে তোলা ছবিতে বোকে এফেক্ট আনার জন্য কিংবা ছবিতে ফোরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ড (ছবির মূল সাবজেক্ট এবং তার পেছনের বিষয়বস্তু)-এর মধ্যে ডেপথ্ বা দূরত্ব আনার জন্য আজকাল অনেক ফোনে ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরা থাকে অর্থাৎ ফোনের পেছনে দুটি ক্যামেরা থাকে। কিন্তু ফোনের ক্যামেরা অ্যাপে যদি AI টেকনোলজি থাকে তবে ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরার কোনও দরকার নেই। আর এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল গুগল কোম্পানির পিক্সল ফোন। গুগলের পিক্সল সিরিজের লেটেস্ট ফোনে (পিক্সল ২ - এক্স এল) একটি মাত্র রিয়ার ক্যামেরা যার ক্ষমতা ১২.২ MP। কিন্তু এটি AI ক্যামেরা। তাই একটি মাত্র ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও পিক্সল ফোনের সাহায্যে তোলা ছবিতে আপনি সহজেই বোকে এফেক্ট এবং ছবির ফোরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে ডেপথ আনতে পারবেন। এছাড়া ছবিতে আরও অনেক এফেক্ট অ্যাপ্লাই করতে পারবেন যেগুলি সাধারণ মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা ছবিতে করা যায় না। 

আইফোন এক্স

AI ক্যামেরার সবচেয়ে আধুনিক উদাহরণ অ্যাপলের আইফোন এক্স-এর ক্যামেরা। এই ফোনে রয়েছে ফেস আনলক সিস্টেম। অর্থাৎ এই ফোনে প্রথমে আপনাকে একটি সেলফি তুলে সেটি ফোনে স্টোর করে রাখতে হবে। পরবর্তীতে আপনি যখনই ফোনটিকে নিজের মুখের সামনে ধরবেন, তখন ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা আপনার মুখের ছবির সঙ্গে আগে থেকে স্টোর করা সেই সেলফি মিলিয়ে দেখে নেবে দুটি ছবি একই কিনা। যদি ছবি দুটি এক হয়, তবেই ফোন আনলকড হবে। 
কিন্তু মানুষের মুখ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটাই বদলে যায়। তা ছাড়া আজ আপনার একগাল দাড়ি, কিন্তু দুই মাস পর হয়তো আপনি দাড়ি কেটে ফেললেন। কিংবা আজ আপনার চশমা নেই, কিন্তু একবছর পর হয়তো আপনি চশমা পরতে শুরু করলেন। কিংবা আজ আপনার মাথা ভর্তি চুল, কিন্তু পাঁচ বছর পর হয়তো চুল পড়ে গিয়ে আপনার মাথায় টাক পড়ল। কিন্তু আপনার মুখের যতই পরিবর্তন হোক না কেন, আইফোনের AI ক্যামেরা আগে থেকে ফোনে স্টোর করে রাখা সেলফির সঙ্গে আপনার বর্তমান মুখের ছবি মিলিয়ে দেখে সেই পার্থক্য বুঝে নিতে পারবে।

টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


ফোনে সহজে 3D ছবি তুলুন


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন।


  


4 comments:

জনপ্রিয় পোস্ট