13 Oct 2017

কীভাবে কাজ করতো বিশ্বের প্রথম ভাইরাস এলক্ ক্লোনার?




বিশ্বে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসটি তৈরি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা মাত্র ১৪ বছরের এক কিশোর রিচার্ড স্ক্রেনটা, যার ডাক
Photo Credit : Pixabay

নাম ছিল রিখতার তৈরি ভাইরাসটির নাম ছিল এলক্ ক্লোনার। ভাইরাসটি তৈরি করা হয়েছিল অ্যাপল কোম্পানির কম্পিউটারে হামলা চালানোর জন্য। কীভাবে কাজ করতো এলক্ ক্লোনার?

গত শতাব্দীর আটের দশকের প্রথম দিকে অ্যাপল যে কম্পিউটারগুলি তৈরি করেছিল, সেগুলি সাধারণত বুট করা হত ফ্লপি ডিস্ক দিয়ে। সেই সময় স্ট্যান্ডার্ড ফ্লপি ডিস্কের সাইজ ছিল ৫.২৫ ইঞ্চি। তাই এলক্ ক্লোনার মূলত ওই সাইজের ফ্লপির মাধ্যমেই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে হামলা চালাতো। রিখ প্রথমে তার তৈরি ভাইরাসটিকে একটি কম্পিউটার গেমের মধ্যে এমন ভাবে অ্যাটাচ করেছিল যাতে ভাইরাসটিকে আলাদাভাবে কেউ চিহ্নিত করতে না পারে। এরপর ভাইরাস সহ গেমটিকে সে ৫.২৫ ইঞ্চির একটি ফ্লপিতে সেভ করে। সেই ফ্লপিটি কম্পিউটার ক্লাবের একটি কম্পিউটারের ফ্লপি ড্রাইভে ইনসার্ট করে। এলক্ ক্লোনার ভাইরাসটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে, এটি কম্পিউটারের বুট আপ প্রসেসের সময় সক্রিয় হয়ে উঠতো অর্থাৎ ভাইরাসটি কম্পিউটারের বুট সেক্টরের উপর হামলা চালাতো। আমরা এখন যে সমস্ত বুট সেক্টর ভাইরাস দেখতে পাই তাদের শুরুটা হয়েছিল এলক্ ক্লোনার ভাইরাস দিয়ে। অর্থাৎ এলক্ ক্লোনার শুধু প্রথম কম্পিউটার ভাইরাসই নয়, এটি একই সঙ্গে বিশ্বের প্রথম বুট সেক্টর ভাইরাসও বটে। বুট সেক্টর ভাইরাসের বৈশিষ্ট হল কম্পিউটার টার্ন অন করার পর এই ধরনের ভাইরাস প্রথমে নিজেকে বুট আপ করবে, তারপর কম্পিউটারকে বুট আপ করার সুযোগ দেবেতবে পরবর্তীতে মাইক্রোসফট উইনডোজ অপারেটিং সিস্টেমে বিশেষ UEFI ফিচারের সাহায্যে কম্পিউটারে বুট সেক্টর ভাইরাসের হামলা অনেকাংশে ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। যাই হোক, ফিরে আসি এলক্ ক্লোনার প্রসঙ্গে। অ্যাপলের কম্পিউটারগুলিকে বুট করার জন্য এলক্ ক্লোনার ভাইরাস রয়েছে এমন কোনো ফ্লপিকে কম্পিউটারের ফ্লপি ড্রাইভে ইনসার্ট করলে ভাইরাসটি প্রথমে চেক করে নিত সেই কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কে অর্থাৎ মেমরিতে আগে থেকেই এলক্ ক্লোনার ভাইরাস রয়েছে কিনা, যদি না থাকতো তবে ভাইরাসটি নিজের একটি কপি তৈরি করে সেই কম্পিউটারের মেমরিতে সেভ করে দিত। পরবর্তীতে এলক্ ক্লোনার নেই এমন কোনো ফ্লপিকে সেই কম্পিউটারটিতে ইনসার্ট করলে ভাইরাসটি ফের নিজের একটি কপি তৈরি করে সেই কপি ফ্লপিতে স্টোর করতো। এরপর সেই ফ্লপি যখন অন্য কোনো কম্পিউটারে ইনসার্ট করা হত তখন ভাইরাসটি ফের নিজেকে রেপ্লিকেট করে অর্থাৎ কপি করে সেটি কম্পিউটারের মেমরিতে পাঠিয়ে দিত। এইভাবে এলক্ ক্লোনার এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে হামলা চালাতো। এলক্ ক্লোনার কোনো কম্পিউটারে হামলা চালানোর পর প্রত্যেক ৫০তম বুট আপ—এর সময় সেই কম্পিউটারের ডেস্কটপ ব্ল্যাংক করে দিত এবং সেখানে রিখের লেখা একটি কবিতাটি মেসেজ হিসাবে ডিসপ্লে হত। মেসেজটি এরকম —


This photo is a property of teknowbits.blogspot.com



অর্থাৎ এই ভাইরাস তৈরির পেছনে রিখের উদ্দেশ্য ছিল নিছক মজা। সেই কবিতাটি ডেস্কটপে ডিসপ্লে করা ছাড়া এলক্ ক্লোনার কম্পিউটারের আর কোনো ক্ষতি করতো না। কিন্তু এখনকার ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যারের মতো এলক্ ক্লোনার যদি কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ক্ষতি করতো বা কম্পিউটার থেকে পাসওয়ার্ড সহ অন্যান্য তথ্য চুরি করতো, তবে কী হত বলা মুশকিল। কারণ সেই সময় কোনো অ্যান্টিভাইরাস বাজারে পাওয়া যেত না। তবে রিখ নিছক মজা করার জন্য ভাইরাসটি তৈরি করলেও তার এই কান্ডে অনেকেই বিরক্ত হয়েছিলেন। স্কুলের অংকের শিক্ষকের কাছে এজন্য রিখকে কড়া ধমক খেতে হয়েছিল। কারণ সেই শিক্ষকের কম্পিউটারেও ভাইরাসটি হামলা চালিয়েছিল।
এলক্ ক্লোনার কম্পিউটারের কোনো ক্ষতি না করলেও বিশ্বে প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস হিসাবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে নিছক মজা করার জন্য ক্লাশ নাইনের ছাত্র রিখ যখন এলক্ ক্লোনার তৈরি করেছিল, তখন সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে, যতদিন কম্পিউটার প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে, ততদিন লোকে তাঁর নাম মনে রাখবে।

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট