5 Jul 2020

এই ফোনে কথা বলা যায় না, অথচ প্রতি ৬ মাসে খরচ দেড় লাখ টাকা !

Image courtesy: encrochat.fr

কখনও শুনেছেন এমন এক ফোন যার কোনও ক্যামেরা নেই, মাইক্রোফোন নেই, জিপিএস নেই অথচ সেই ফোন ব্যবহার করার জন্য প্রতি ছয় মাস পরপর আপনাকে ১৫০০ পাউন্ড বা ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করতে হয় ? অদ্ভুত শোনালেও এটা সত্যি । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেকেই এতদিন এই ফোন ব্যবহার করতেন । কিন্তু কেন এত দাম সেই ফোনের আর পুলিশই বা তদন্ত করে কী জানতে পারল, সেই গল্পটা খুবই ইন্টারেস্টিং ।



টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  




ইউরোপের নেদারল্যান্ডে একটি কোম্পানি এই বিশেষ ফোন বিক্রি করত । কোম্পানির নাম এনক্রোচ্যাট । এনক্রিপ্টেড চ্যাট শব্দ দুটিকে সন্ধি করে ‘এনক্রোচ্যাট’ । হ্যাঁ, এই ফোনে কোনও ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, ইউএসবি পোর্ট ও জিপিএস সেনসর নেই । 

কিন্তু কেন?

তার কারণ সিকিউরিটি অর্থাৎ আপনার প্রাইভেসির সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । অনেক অ্যাপ আমরা প্লে স্টোর থেকে ইনস্টল করি বা ফোনে প্রিইনস্টলড থাকে, সেগুলি ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, জিপিএস অ্যাকসেস চায় । সেই অ্যাকসেস পেয়ে অ্যাপগুলি ইচ্ছে করলেই ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন গোপনে অন করে আমাদের ছবি তুলতে পারে বা কথা শুনতে পারে । জিপিএস অন করে আমাদের লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে । টিকটক তো আমাদের ফোনের ক্লিপবোর্ড পর্যন্ত অ্যাকসেস করত অর্থাৎ আমরা কী টেক্সট কপি করছি বা পেস্ট করছি সেটাও জানতে পারত । 






তাই প্রাইভেসি যাতে সুরক্ষিত থাকে সেজন্য এনক্রোচ্যাট ফোনে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি থাকে না । ইউএসবি পোর্ট থাকে না কারণ তার সাহায্যে কেউ যাতে ফোনটি কম্পিউটারের সঙ্গে কানেক্ট করে ডেটা চুরি করতে না পারে । আরও একটি বৈশিষ্ট হল এই ফোনে কোনও সিম কার্ড থাকে না । অর্থাৎ ফোনে কোনও সিম থাকে না । কারণ সিম নাম্বার ট্র্যাক করে সহজেই জানা যায় সিমটি কার নামে কেনা বা ফোনটি কে ব্যবহার করছে । 


মাইক্রোফোন নেই, সুতরাং বুঝতেই পারছেন এই ফোনের মাধ্যমে আপনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না । 

তাহলে এই ফোন নিয়ে লাভ ? 

আসলে এই ফোনে থাকে বিশেষ অপারেটিং সিস্টেম EncroChat OS । এই অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে এনক্রোচ্যাট মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে আপনি অন্য কোনও ব্যক্তি (যার এনক্রোচ্যাট ফোন রয়েছে)-র সঙ্গে মেসেজে যোগাযোগ করতে পারবেন । মেসেজগুলিও এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড থাকে অর্থাৎ সহজে হ্যাক করা সম্ভব নয় । যেহেতু সিম কার্ড থাকে না, তাই যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ।






তা ছাড়া সুরক্ষার জন্য এই ফোনে আরও কিছু সুবিধা রয়েছে যেমন, ‘প্যানিক ওয়াইপ’ অর্থাৎ বিশেষ কোনও পরিস্থিতিতে দেখলেন আপনি বিপদে পড়েছেন, আপনার ফোনে স্টোর করা গুরুত্বপূর্ণ ডেটা ডিলিট করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে ফোনের লকস্ক্রিনের উপরেই আপনি বিশেষ একটি নম্বর টাইপ করলে সমস্ত ডেটা ডিলিট হয়ে যাবে । এছাড়া আছে পাসওয়ার্ড ওয়াইপ । কেউ যদি বারবার নানারকম পাসওয়ার্ড টাইপ করে আপনার ফোনটিকে আনলক করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে আপনার ফোনের সমস্ত ডেটা নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যাবে । এছাড়া এই ফোনের মাধ্যমে কাউকে পাঠানো মেসেজ আপনি যে কোনও সময় সেই ব্যক্তির ফোন থেকেও ডিলিট করে দিতে পারেন ।  প্রাইভেসির জন্য এত সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকায় ফোনটির এত দাম । 


বিশ্বে বিভিন্ন দেশের একাধিক ব্যক্তি, যাদের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন, গত সপ্তাহ পর্যন্ত এই ফোন ব্যবহার করতেন । ১৪০টি দেশের এনক্রোচ্যাটের ৬০,০০০ গ্রাহক ছিল । তাদের মধ্যে ইংল্যান্ডেই ছিল ১০,০০০ জন । এছাড়া একাধিক দেশে এনক্রোচ্যাট কোম্পানির অফিসও ছিল ।


গত কয়েকমাস ধরে ইংল্যান্ড সহ ইউরোপের একাধিক দেশের পুলিশ এই ফোন ব্যবহারকারীদের উপর নজর রাখছিল । পরবর্তীতে পুলিশ হ্যাকারদের সাহায্য নেয় । বেশ কয়েক মাসের চেষ্টায় হ্যাকারদের টিম এনক্রোচ্যাট কোম্পানির সার্ভার হ্যাক করতে সক্ষম হয় । 



এনক্রোচ্যাটের সার্ভার হ্যাক করার পর এনক্রোচ্যাট ফোন ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে কী কী মেসেজ আদান-প্রদান করছে, তা জানতে পারে পুলিশ । আর সেই মেসেজ দেখে পুলিশের চোখ কপালে । পুলিশ দেখে যে, এনক্রোচ্যাট ফোনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে ইংল্যান্ড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কুখ্যাত অপরাধীরা ড্রাগের চোরাচালান, অপহরণ, কাউকে খুনের সুপারি দেওয়া, অস্ত্র কেনা-বেচা থেকে শুরু করে এমন কোনও অপরাধ নেই যা করছে না । 


এরপরেই পুলিশ আর দেরী না করে গত কয়েকদিন ধরে সেই সমস্ত অপরাধীদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে । এখনও পর্যন্ত পুলিশি অভিযানে ধরা পড়েছে একশোর বেশি অপরাধী, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, এ কে ফর্টিসেভেন রাইফেল ও গ্রেনেড সহ প্রায় ৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র, প্রচুর ড্রাগ, ৫৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ইত্যাদি । ইংল্যান্ড ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে অপরাধীরা এনক্রোচ্যাট ফোন ব্যবহার করত তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে । 





পুলিশ যে তাদের সার্ভার হ্যাক করেছে তা একেবারে শেষ মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিল এনক্রোচ্যাট । কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না । তাই পুলিশের এই অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই অফিসে তালা মেরে এনক্রোচ্যাট কোম্পানির কর্তা থেকে কর্মীরা সবাই এখন বেপাত্তা । 






টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।

টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 

2 comments:

  1. এর থেকেই বোঝা যায়, বিশ্বে এমন কোনো নেটওয়ার্ক নেই, যা হ্যাক করা যায় না। যতই সাবধানতা থাকুক, Security Breach হবেই। আর ঘটনা থেকে স্পষ্ট, Privacy Breach হওয়া যেমন কাম্য নয় তেমনি আবার হওয়াও জরুরী।

    ReplyDelete
  2. কভি কভি লাগতা হ্যায় আপুনছি হ্যাকার হ্যায়

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট