ভারতে এখন মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা কত?
সমীক্ষা অনুসারে (সূত্রঃ Statista)
এদেশে চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের শেষে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর
সংখ্যা বেড়ে
দাঁড়াবে প্রায় ৭৩০ মিলিয়ন বা ৭৩ কোটি। ২০১৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫২.৪৯ কোটি। অর্থাৎ পাঁচ বছরে গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে চলেছে প্রায় ২০ কোটি।
সমীক্ষা অনুসারে ২০১৮ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৮২ কোটি। তার মানে আগামী পাঁচ বছরে সংখ্যাটি ১০০ কোটি ছুঁতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
Photo Credit : Pixabay |
স্মার্ট ফোনের সংখ্যা অর্ধেক
কিন্তু সমস্যা হল এখন মোবাইল ফোন আর
শুধু কথা বলা ও শোনা এবং এসএমএস পাঠানোয় সীমাবদ্ধ নেই। মোবাইল ফোন এখন আমদের
দৈনন্দিন জীবনের একটি প্রয়োজন যার মাধ্যমে শপিং করা, ব্যাংকিং লেনদেন, বিদ্যুৎ,
গ্যাস ইত্যাদির বিল মেটানো, জীবনবিমা পলিসির প্রিমিয়াম দেওয়া, টেলিমেডিসিনের
মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করা, ভার্চুয়াল ক্লাশরুমের মাধ্যমে পড়াশোনা করা সহ আরও
নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা সম্ভব। কিন্তু এই সমস্ত সুবিধা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
তখনই পাওয়া সম্ভব যখন আপনার মোবাইল ফোনটি হবে স্মার্ট ফোন। বেসিক ফিচার ফোন বা
সাধারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিন্তু এই সমস্ত সুবিধা আপনি পাবেন না। ভারতে ২০১৭
সালের শেষে মোবাইল ফোনের মোট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭৩ কোটি ছুঁতে চললেও স্মার্ট
ফোনের গ্রাহক সংখ্যা কিন্তু তার অর্ধেকেরও কম, মাত্র ৩৪ কোটি। অর্থাৎ স্মার্ট
ফোনের যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা মানুষের জীবনে গত দশ বছরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে,
সেই সমস্ত সুবিধা থেকে আমাদের দেশের অর্ধেকের বেশি মোবাইল ফোন গ্রাহক এখনো বঞ্চিত।
এটা শুধু যে ভারতের সমস্যা তা নয়। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে —
যেখানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও দারিদ্রসীমার নীচে, যেখানে অনেক এলাকায় এখনো
ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ পরিসেবা পৌঁছায়নি, যেখানে একটি মিড বাজেট সেগমেন্টের স্মার্ট
ফোনের দাম অনেক মানুষের সারা মাসের রোজগারের থেকে বেশি — সেই সমস্ত দেশে এই সমস্যা
রয়েছে।
নজর দেওয়া প্রয়োজন
তাই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ,
ফিলিপিনস্, তাইল্যান্ড সহ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল
দেশগুলিতে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যদি আরও বাড়াতে হলে, তথা স্মার্ট
ফোনের মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষকে দৈনন্দিন
জীবনে ইন্টারনেট ভিত্তিক পরিসেবাগুলি সহজে দিতে হলে একাধিক বিষয়ে নজর দেওয়া
প্রয়োজন। সেগুলি হল —
বিশ্বে ভারত প্রথম
বিশ্বে
এখন গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওএস বেসড্ ফোন ও ট্যাবের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। ভারতে বর্তমানে
যাঁরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন, তাঁদের অর্ধেকও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে না, তা
সত্ত্বেও ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের মধ্যে ভারতে অ্যান্ড্রয়েড ফোন
ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোর থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার (৬০০ কোটি) অ্যাপ
ডাউনলোড করেছেন। সুতরাং ভারতে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যদি আরও বাড়ানো
যায়, তবে আমাদের দেশ যে আগামী দিনে গুগলের কাছে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ও লাভজনক একটি বাজার হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তাই সেই বাজারের দখল পেতে
ইতিমধ্যে গুগল একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। যেগুলির মধ্যে অন্যতম ‘গুগল স্টেশন’
প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে গুগল আমাদের দেশের ৪০০টির বেশি রেল স্টেশনে নিখরচায়
হাইস্পিড ওয়াইফাই পরিসেবা দিচ্ছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্মার্ট সিটি-তে গুগল নিখরচায় হাইস্পিড ওয়াইফাই
পরিসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে গুগল পুনে শহরে এই পরিসেবা দিচ্ছে।
এন্ট্রি লেভেল ফোন
কিন্তু শুধু ফ্রি ইন্টারনেট
পরিসেবা দিলেই তো হবে না, দেশের নিম্নবিত্ত মানুষের একটি বড় অংশ যাতে খুব সস্তায়
স্মার্ট ফোন কিনতে ও ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য লো-এন্ড সেগমেন্ট
তথা এন্ট্রি লেভেল স্মার্ট ফোন যেমন বাজারে আনা উচিত, তেমনি এমন ওএস এবং অ্যাপ
তৈরি করা উচিত যেগুলি সহজেই সস্তার স্মার্ট ফোনে ব্যবহার করা সম্ভব।
ভারতে যদি
আগামী দিনে এন্ট্রি লেভেলে ব্র্যান্ডেড স্মার্ট ফোনের দাম ₹ ৩০০০/- বা তারও নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়, তবে নিশ্চিত
স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে। কিন্তু এটাও ঘটনা যে, ফোনের দাম ₹ ৩০০০/- টাকার নীচে নামিয়ে আনলে তার হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশনে
অনেকটাই ঘাটতি থাকবে। সাধারণত ওই ধরনের ফোনে ইন্টারনাল মেমরি ১৬ GB-র বেশি হবে না, র্যাম সাইজ হবে ১ GB-৫১২ MB, প্রসেসরের ক্লক স্পিড হবে ১ GHz। সমস্যা হল এখন গুগল প্লে স্টোরে যে সমস্ত অ্যাপ রয়েছে, সেগুলির প্রায় কোনোটাই
এই হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশনের ফোনে ঠিকমতো চালানো সম্ভব নয়। এমনকী এই ধরনের ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ওএস চালাতেও সমস্যা হবে। সুতরাং ব্যাপারটা
দাঁড়াল এই যে, শুধু সস্তার ফোন তৈরি করলেই হবে না, সেই ফোনে সহজে অপারেট করা যায়
এমন ওএস এবং অ্যাপ তৈরি করাও প্রয়োজন। আর সেজন্যই গুগল ২০১৭ সালের মে মাসে তাদের I/O কনফারেন্সে ঘোষণা করেছিল যে,
শীঘ্রই তারা এমন অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ আনতে চলেছে, যা এন্ট্রি লেভেল ফোনে
মিনিমাম হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশনেও ভালো ভাবে কাজ করবে।
গুগলের উদ্যোগ
গুগল তাদের প্রতিশ্রুতি রেখেছে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলির জন্য ৫ ডিসেম্বর
গুগল রিলিজ করেছে অ্যান্ড্রয়েড ওরিঅ (৮.১) গো এডিশন। এটি
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওরিঅ অপারেটিং সিস্টেমের ‘লাইট এডিশন’। সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড
ওরিঅ ফোনে ইনস্টল হতে প্রায় ১ GB ইন্টারনাল মেমরি নেয়,
কিন্তু ওরিঅ-র গো এডিশন নেবে মাত্র ৫১২ MB। শুধু তাই নয়, এই অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করার জন্য গুগল তাদের প্লে স্টোরে
যে জনপ্রিয় অ্যাপগুলি রয়েছে সেগুলির ‘গো ভার্সন’ বা ‘লাইট ওয়েট ভার্সন’ তৈরির কাজ
শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে গুগল ডেভেলপ করেছে ‘ইউটিউব গো’, ‘ফাইলস গো’ এবং ‘গুগল
গো’ অ্যাপ। আগামীতে প্লে স্টোরের অন্যান্য অ্যাপগুলিরও ‘গো ভার্সন’ রিলিজ করা হবে। পরবর্তীতে
গুগল ‘প্লে স্টোর গো’ নামে একটি একটি আলাদা অ্যাপ স্টোর লঞ্চ করবে, যেখানে ‘প্লে
স্টোর’-এ এখন যে
অ্যাপগুলি রয়েছে, সেগুলি ‘গো ভার্সন’ বা ‘লাইট ওয়েট’ ভার্সন থাকবে। কোনো অ্যাপের
সাধারণ (নেটিভ) ভার্সনের তুলনায় তার ‘গো ভার্সন’ ফোনে ইনস্টল হতে গড়ে অর্ধেক মেমরি
স্পেস নেবে। সুতরাং একটি এন্ট্রি লেভেল স্মার্ট ফোনে খুব কম মেমরি খরচ করে একাধিক
‘গো ভার্সন’ অ্যাপ ইনস্টল করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এই অ্যাপগুলি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে
যে, সেগুলি ৫১২ র্যাম সাইজ ফোনেও ভালো ভাবে কাজ করবে। তা ছাড়া ‘গো
ভার্সন’ অ্যাপগুলি তাদের নেটিভ ভার্সনের তুলনায় ১৫ শতাংশ দ্রুত কাজ করবে। ‘গো
ভার্সন’ অ্যাপগুলি কাজ করতে অনেকটাই কম বিদ্যুৎ খরচ করবে, তাই ফোনের ব্যাটারি
চার্জ বাবদ বিদ্যুৎ খরচও অনেকটাই কম হবে।
গো এডিশন ওএস
অ্যান্ড্রয়েড ওরিঅ (৮.১) গো এডিশন ওএস এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যে সেটি এন্ট্রি লেভেল স্মার্ট
ফোনে ন্যূনতম হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশনেও ভালোভাবে কাজ করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই
অপারেটিং সিস্টেম সস্তার স্মার্ট ফোনের জন্য তৈরি করা হলেও ফোনের সেফটি ও
সিকিউরিটির বিষয়ে গুগল বিশেষ নজর দিয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ওরিঅ (৮.১) গো এডিশন ওএস-এ রয়েছে ‘গুগল প্লে প্রোটেক্ট’
ফিচার। এই ফিচার প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ইনস্টল করার সময় সেটিকে যেমন স্ক্যান করবে,
তেমনি ফোনে ইনস্টলড্ অ্যাপগুলিকেও নিয়মিত স্ক্যান করে দেখবে সেগুলিতে কোনো
ম্যালওয়্যার রয়েছে কিনা। এই অপারেটিং সিস্টেমে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল
ডেটা সেভার ফিচার। এই ফিচারের সাহায্যে ফোনে কোন অ্যাপগুলি ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘অন’ বা
‘অফ’ থাকবে, তা কন্ট্রোল করা যাবে এবং তার ফলে বছরে গড়ে ৬০০ MB ডেটা সেভ করা সম্ভব হবে। ফলে ফোন ব্যবহারকারীর ডেটা প্যাক বাবদ খরচও কমবে। আরও একটি প্রয়োজনীয় তথ্য হল
অ্যান্ড্রয়েড ওএস-এর নেটিভ
ভার্সন এবং গো ভার্সন-এর আপডেট গুগল এখন থেকে একই সঙ্গে
রিলিজ করবে।
পাওয়া যাবে আগামী বছর
ইতিমধ্যে একাধিক ফোন কোম্পানির
সঙ্গে গুগলের চুক্তি হয়েছে, যারা খুবই সস্তার এন্ট্রি লেভেল স্মার্ট
ফোন তৈরি করবে এবং সেগুলিতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যান্ড্রয়েড ওরিঅ (৮.১) গো এডিশন ওএস এবং বিভিন্ন অ্যাপের ‘গো ভার্সন’ প্রিইনস্টলড্ থাকবে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকেই সস্তার ‘অ্যান্ড্রয়েড গো’ স্মার্ট ফোন বাজারে আসবে।
No comments:
Post a Comment