3 Dec 2017

৩২ বিট Vs. ৬৪ বিট

টেকনোবিটসের বহু পাঠক মেল করে জানতে চান,
Photo Credit : Pixabay
তাঁদের বাজেট এত টাকা, তাঁরা সেই দামের মধ্যে একটি ভালো স্মার্ট ফোন কিনতে চান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখেছি যে, ভালো স্মার্ট ফোন বলতে লোকে বোঝে বেশি মেগাপিক্সলের ক্যামেরা, বেশি সাইজের
র‍্যাম ও ইন্টারনাল মেমরি এবং হাই ক্যাপাসিটির ব্যাটারি।

ভালো ফোন বলতে সাধারণ লোক যে শুধুমাত্র এই বিষয়গুলি বোঝে, সেজন্য তাঁদের কোনো দোষ নেই। কারণ ফোন কোম্পানিগুলি নিজেদের বিজ্ঞাপনে মূলত এই বিষয়গুলি উল্লেখ করে। আর সেই বিজ্ঞাপনের প্রভাবে সাধারণ মানুষ মনে করে একটি ফোন ভালো, না খারাপ তা বোধহয় শুধুমাত্র ওই কয়টি বিষয়ের উপরেই নির্ভরশীল।

বিট আর্কিটেকচার


আমি বলছি না যে, ফোন কেনার সময় ব্যাটারির ক্যাপাসিটি, ইন্টারনাল মেমরি বা র‍্যাম সাইজ কত, সেসবের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু যে বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা হল ফোনটির প্রসেসরের বিট আর্কিটেকচার। পাঠকদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আছেন যাঁরা ফোন কেনার সময় দেখে নেন প্রসেসরটি কোয়ালকম কোম্পানির তৈরি, নাকি মিডিয়াটেকের, কিংবা প্রসেসরটির জেনারেশন কত।

কিন্তু এসবের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল প্রসেসরটির বিট আর্কিটেকচার কী, অর্থাৎ প্রসেসরটি ৩২ বিট ক্ষমতার, নাকি সেটির ক্ষমতা ৬৪ বিট।

⇒ রেজিস্টার

কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন কাজ করার সময় যে কোনো ডেটাকে ‘০’ বা ‘১’ এই দুটি সংখ্যায় কনভার্ট করে। এই ‘০’ বা ‘১’-কে বলা হয় বিট। কোনো প্রসেসর একসঙ্গে যত বেশি বিট নিয়ে কাজ করতে পারবে, সেই প্রসেসরের ক্ষমতা তত বেশি। প্রসেসরের মধ্যে থাকে রেজিস্টার। প্রসেসর যখন কোনো কাজ করে তখন সেই কাজের জন্য যে ডেটা প্রয়োজন হয় তা ফোন বা কম্পিউটারের ইন্টারনাল মেমরি থেকে র‍্যাম-এ এসে জমা হয়। এবার র‍্যামের কোথায় কোন ডেটা এসে জমা হয়েছে, তা প্রসেসরকে বলে দেয় রেজিস্টার। অর্থাৎ রেজিস্টার হল যেন একটি পোস্ট অফিস। র‍্যাম-এর কোন অংশে কোন ডেটা এসে জমা হয়েছে, তার ঠিকানা থাকে রেজিস্টারের কাছে। প্রসেসরের কাজ করার জন্য যখন যে ডেটার প্রয়োজন হয়, সেই ডেটার ঠিকানা অর্থাৎ সেই নির্দিষ্ট ডেটা র‍্যাম-এর কোন অংশে এসে জমা হয়েছে, তা প্রসেসরকে বলে দেয় রেজিস্টার। রেজিস্টারের কাছ থেকে ঠিকানা জেনে প্রসেসর র‍্যাম-এর সেই নির্দিষ্ট অংশে গিয়ে নির্দিষ্ট ডেটা কালেক্ট করে।

⇒ বিট ও রেজিস্টার

রেজিস্টার কেন প্রসেসরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সেটা আমরা জানলাম। এবার দেখা যাক কোন প্রসেসরে রেজিস্টারের সংখ্যা কত। যে প্রসেসর ৩২ বিটের অর্থাৎ ৩২ বিট আর্কিটেকচারের, সেই প্রসেসরে রেজিস্টারের সংখ্যা ২ অর্থাৎ ৪২৯৪৯৬৭২৯৬টি। প্রতিটি রেজিস্টারে এক বাইট ডেটার অ্যাড্রেস (মেমরি অ্যাড্রেস) থাকে, সুতরাং ৪২৯৪৯৬৭২৯৬টি রেজিস্টারে ৪২৯৪৯৬৭২৯৬ বাইট ডেটার অ্যাড্রেস থাকবে। আবার ৪২৯৪৯৬৭২৯৬ বাইট ডেটা মানে প্রায় ৪ GB ডেটা। সুতরাং বিষয়টি দাঁড়াল এই যে ৩২ বিট প্রসেসর তার রেজিস্টারের সাহায্যে প্রতিবার একসঙ্গে র‍্যাম থেকে ৪ GB ডেটা কালেক্ট করতে পারবে। তবে বাস্তবে ৩২ বিট প্রসেসর একসঙ্গে সাধারণত ৩.GB ডেটা কালেক্ট করতে পারে, কারণ প্রসেসরের সমস্ত রেজিস্টার মেমরি অ্যাড্রেস স্টোর করতে ব্যবহৃত হয় না, রেজিস্টারগুলির একটি অংশ টেম্পরারি ভ্যালু স্টোর করতেও ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে ৬৪ বিট আর্কিটেকচারের প্রসেসরে রেজিস্টারের সংখ্যা ২৬৪ অর্থাৎ ১৮৪৪৬৭৪৪০৭৩৭০৯৫৫১৬১৬টি রেজিস্টার ৬৪ বিট প্রসেসরে থাকে। সুতরাং এই প্রসেসরের রেজিস্টারে ১৮৪৪৬৭৪৪০৭৩৭০৯৫৫১৬১৬টি বাইটের অ্যাড্রেস থাকে। তাই এই রেজিস্টারের সাহায্যে প্রসেসর র‍্যাম থেকে একসঙ্গে ১৮৪৪৬৭৪৪০৭৩৭০৯৫৫১৬১৬ বাইট বা প্রায় ১৬ GB ডেটা কালেক্ট করতে পারে। সুতরাং এই হিসেবটা থেকে এটা স্পষ্ট যে, একটি ৩২ বিট প্রসেসরের তুলনায় একটি ৬৪ বিট প্রসেসর প্রায় ৪ গুণ ডেটা র‍্যাম থেকে একসঙ্গে কালেক্ট করে প্রসেস করতে সক্ষম। অর্থাৎ একটি ৩২ বিট প্রসেসরের তুলনায় একটি ৬৪ বিট প্রসেসর প্রায় ৪ গুণ শক্তিশালী।

 র‍্যাম ও প্রসেসর

যেহেতু একটি ৩২ বিট প্রসেসর র‍্যাম থেকে একসঙ্গে ৪ GB-র বেশি ডেটা কালেক্ট করতে পারে না, তাই ৩২ বিট প্রসেসরের কোনো ফোনে র‍্যাম সাইজ যদি ৪ GB-র বেশি থাকে, তবে সেই অতিরিক্ত র‍্যাম  কিন্তু কোনো কাজে লাগে না। তেমন ফোন না কেনাই ভালো। অন্যদিকে ৬৪ বিট প্রসেসর যেহেতু একসঙ্গে প্রায় ১৬ GB ডেটা কালেক্ট করতে পারে, তাই ৬৪ বিট প্রসেসরের ফোন ১৬ GB মেমরি সাইজ পর্যন্ত র‍্যাম সাপোর্ট করতে সক্ষম।

 অপারেটিং সিস্টেম

অ্যাপলের আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম iOS7 বা তার পরের সমস্ত ভার্সন ৬৪ বিট আর্কিটেকচারের প্রসেসর সাপোর্ট করে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে ললিপপ ও তার পরবর্তী সমস্ত ভার্সন ৬৪ বিট আর্কিটেকচার সাপোর্ট করে।

 অ্যাপ সাপোর্ট

বর্তমানে এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স), (ভিআর) ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং এআর (অগমেন্টেড রিয়ালিটি) নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এমন প্রচুর অ্যাপ লঞ্চ করা হবে যেগুলি এআই, ভিআর বা এআর বেসড্। সেই অ্যাপগুলির কাজকর্ম যেহেতু অত্যন্ত জটিল হবে, তাই তাদের কাজের জন্য একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ডেটা প্রসেস করার দরকার পড়বে। তাই সেই অ্যাপগুলি একমাত্র ৬৪ বিট প্রসেসর রয়েছে এবং ন্যূনতম ৬ GB র‍্যাম রয়েছে এমন মোবাইল ফোনেই ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে গুগলের প্লে স্টোরে বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে এমন বেশকিছু অ্যাপ লঞ্চ করা হয়েছে যেগুলির ৩২ বিট ও ৬৪ বিট দুটো ভার্সনই রয়েছে। আগামীতে এমন অ্যাপের সংখ্যা আরও বাড়বে।

⇒ চেক করুন

আপনার ফোনটি ৩২ বিট আর্কিটেকচারের, নাকি ৬৪ বিটের? প্লে স্টোর থেকে Antutu Benchmark অ্যাপটি ইনস্টল করে সেটি ওপেন করুন এবং অ্যাপের ইনফো অপশনে গিয়ে দেখে নিন আপনার ফোনটির প্রসেসর কত বিট আর্কিটেকচারের।

3 comments:

  1. আমার ফোনের RAM 4 GB এবং 64 BIT এক্ষেত্রে কি পারফরমেন্স কেমন হতে পারে ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন, কিন্তু সেখানে দয়া করে কোনো প্রশ্ন করবেন না। প্রশ্ন পাঠাতে হলে ‘যোগাযোগ’ অপশনের সাহায্য নিন। ধন্যবাদ।

      Delete
  2. Ekta valo jinis jante parlam

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট