14 Dec 2017

আপনার ফোন কি হ্যাকড্ হয়েছে?

আমাদের দেশের বিরোধী দলগুলির রাজনৈতিক নেতারা মাঝেমধ্যেই অভিযোগ করেন যে, তাঁদের মোবাইল ফোন শাসক দলের তরফে হ্যাক বা ট্যাপ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ যে শুধু আমাদের

Photo Credit : Pixabay
দেশের ক্ষেত্রেই হয় এমনটা নয়, ফোন হ্যাকিং বা ট্যাপিং এখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের সমস্যা। বছরখানেক আগে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, আমেরিকার এনএসএ (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি) বিশ্বের ৩৫টি দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং চ্যান্সেলরের ফোন হ্যাক করে গোপনে তাঁদের কথাবার্তা শুনেছে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের স্মার্ট ফোনে সাইবার সিকিউরিটিতে সাধারণত কোনো ফাঁক রাখা হয় না।
তা সত্ত্বেও যদি তাঁদের ফোন হ্যাক করা সম্ভব হয়, তবে আমার, আপনার মতো সাধারণ লোকের ফোন হ্যাক করা যে খুবই সহজ, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না। 
অতএব এটা ঘটনা যে, আপনি ফোনের সিকিউরিটির ক্ষেত্রে যতরকম প্রোটেকশনই নিন না কেন, ফোন হ্যাকিং ১০০ শতাংশ ঠেকানো সম্ভব নয়।


কী কী প্রোটেকশন নেওয়া উচিত?



  • ফোনে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন 

  • ফোনের ওএস এবং অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট করুন

  • ফোন নিয়মিত স্ক্যান করুন

  • আইফোনের ক্ষেত্রে ‘অ্যাপ স্টোর’, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে ‘প্লে স্টোর’ এবং উইনডোজ ফোনের ক্ষেত্রে ‘মাইক্রোসফট্ স্টোর’ ছাড়া কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড বা ইনস্টল করবেন না। 

  • ব্লুটুথ বা শেয়ারইট-এর মাধ্যমে অন্যের ফোন থেকে কোনো অ্যাপ নিয়ে তা ইনস্টল করবেন না। 

  • অন্যের ফোনের এসডি কার্ড কখনো নিজের ফোনে ব্যবহার করবেন না। 

নিজের ফোনে এই সমস্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা অবশ্যই নেবেন। কিন্তু এই পদক্ষেপগুলি নিলেও আপনার ফোন হ্যাকড্ হবে না, এমন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। আপনাকে রাস্তায় ট্রাফিক আইন মেনে বাইক চালাতে হবে -সেটা যেমন ঠিক, তেমনি ট্রাফিক আইন মেনে বাইক চালালেও আপনার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে - সেটাও ঠিক।
স্মার্ট ফোন হ্যাকড্ হওয়া যেমন পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব নয়, তেমন এমন কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই যার সাহায্যে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, ফোন হ্যাকড্ হয়েছে কিনা। তবে ফোন হ্যাকড্ হলে ফোনের কাজকর্মে বিশেষ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েআমি সেই পরিবর্তনগুলি নিয়ে আলোচনা করবো। এমনটা হতেই পারে যে, সেই বিশেষ পরিবর্তনগুলির একটি বা দুটি হয়তো আপনার ফোনের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনার ফোন হ্যাকড্ হয়েছে। তবে যদি বেশকিছু এমন পরিবর্তন দীর্ঘদিন ধরে আপনার ফোনকে সমস্যায় ফেলে, তবে অবশ্যই সতর্ক হবেন।


স্পাই অ্যাপ 

স্পাই অ্যাপের মাধ্যমে আপনার ফোন যদি কেউ হ্যাক করে, তবে আপনার ফোনের ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে। ফোনে স্পাই অ্যাপ সর্বদা সক্রিয় থাকে এবং ফোন থেকে যাবতীয় তথ্য (কথপোকথন, চ্যাট হিস্ট্রি, লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি) গোপনে সংগ্রহ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো সার্ভারে পাঠায় এবং সেখান থেকে হ্যাকার তা কালেক্ট করে।  আগে অধিকাংশ স্পাইওয়্যারের কোডিং খুবই নিম্নমানের ছিল, তাই সেগুলি বেশি ব্যাটারি খরচ করতো। যে অ্যাপের কোডিং যত নিম্নমানের হয়, সেই অ্যাপ তত বেশি ব্যাটারি খরচ করে। তবে এখন বেশকিছু স্পাই অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে যেগুলির কোডিং খুবই উন্নত এবং সেগুলি কিন্তু বেশি ব্যাটারি খরচ না করেই আপনার ফোনের উপর নজরদারি চালাতে পারে। তাই ফোনে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে গেলেই যে আপনার ফোন হ্যাকড্ হয়েছে, তা নয়। তবে আপনার ফোনের ক্ষেত্রে যদি দীর্ঘদিন ধরে এমনটা ঘটে তবে অবশ্যই সতর্ক হন 


ডেটা খরচ 

আপনার ফোন যদি হ্যাক করা হয় তবে ফোনের নেটপ্যাক খরচ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাবে। এর কারণ ফোনে স্পাই অ্যাপ বা স্পাইওয়্যার হামলা চালানোর পর ফোন থেকে যে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করবে, সেগুলি সে নিয়মিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো সার্ভারে পাঠাবে আর এজন্য আপনার নেট প্যাক অ্যাকাউন্ট থেকে ডেটা খরচ হবে। যদি আপনার ফোনের ইন্টারনেট ডেটা খরচ হঠাৎ অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তবে সতর্ক হন। ফোনে প্রতিদিন কত ডেটা খরচ করেন তার হিসাব রাখাটা জরুরি। এজন্য অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের জন্য দুটি ভালো অ্যাপ রয়েছে, সেগুলি হল মাই ডেটা ম্যানেজার (অ্যান্ড্রয়েড ফোন) এবং ডেটা ইউজেস (আইফোন) 
কোনো কোনো স্পাইওয়্যার কাজ করার সময় মূলত সেলুলার ডেটা খরচ করে। তাই ফোনে ওয়াইফাই অন করে নেট সার্ফ করার সময় যদি দেখেন যে, সেলুলার নেটপ্যাক খরচ হচ্ছে, তবে ফোন হ্যাকড্ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 


ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড 

ফোনে কথা বলার সময় সর্বদা যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে বিপ সাউন্ড বা অন্য কোনো যান্ত্রিক শব্দ শুনতে পান, তবে অবশ্যই সতর্ক হন। কারণ আপনার ফোন যদি হ্যাকড্ হয়, তবে আপনি যখন ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলবেন, তখন স্পাই অ্যাপ আপনার কথাবার্তা রেকর্ড করবে। স্পাই অ্যাপগুলি যখন এভাবে কথা রেকর্ড করে, তখন সেই রেকর্ডিংয়ের জন্য অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে বিভিন্ন যান্ত্রিক শব্দ পাওয়া যায়। 


অদ্ভুত আচরণ 

ফোনে স্পাই অ্যাপ হামলা চালালে অনেক সময় ফোন অদ্ভুত আচরণ করে। যেমন আচমকা ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বলে ওঠে। ফোন আইডল থাকলেও হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনের আলো জ্বলে ওঠে। ঘন ঘন ফোন ক্র্যাশ করে বা হ্যাং হয়। এছাড়া অনেক সময় আপনি অদ্ভুত সব এসএমএস পাবেন, যেগুলির মধ্যে কিছু সংখ্যা ও স্পেশাল ক্যারেক্টার ছাড়া আর কিছু থাকে নাআসলে সেই এসএমএসগুলি পাঠানোর কথা ছিল হ্যাকারকে, কিন্তু ভুল করে স্পাই অ্যাপ আপনাকে তা পাঠিয়েছে। ওই এসএমএসগুলিতে আপনার ফোন থেকে চুরি করা তথ্য লুকানো থাকে। তাই যদি কখনো এমন অদ্ভুত এসএমএস পান, তবে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিন। 


ফোন অস্বাভাবিক গরম 

ফোনে যখন আমরা কথা বলি বা নেট সার্ফ করি, তখন ফোনের ব্যাটারি গরম হয়। এটা  কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু যখন ফোনে কথা বলছেন না, বা নেট সার্ফ করছেন না, তখনো যদি ফোন গরম হয়, তবে অবশ্যই সতর্ক হন। কারণ ফোন যখন আইডল থাকে, তখনো স্পাই অ্যাপ কাজ করে আর তার জেরে ফোন গরম হয়। 


ফোন স্লো 

ফোনে স্পাই অ্যাপ হামলা চালালে ফোন স্লো হয়। আপনার ফোন ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎ যদি দেখেন যে, ফোনটি স্লো হয়ে গিয়েছে, তবে সতর্ক হন। মনে করার চেষ্টা করুন বিশেষ কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার পর আপনার ফোনটি স্লো হয়েছে কিনা। যদি তাই হয় তবে সেই অ্যাপটি আনইনস্টল করুন এবং ফোনটি অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করে দেখুন সমস্যা মিটেছে কিনা। 


ফিশিং সাইট 

কোনো কোনো স্পাই অ্যাপ পাসওয়ার্ড ও লগইন আইডি চুরি করার জন্য ফোনের ব্রাউজারকে ফিশিং সাইটে রিডাইরেক্ট করে। ধরা যাক আপনি অনলাইনে টাকা লেনদেন করার জন্য কোনো ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গেলেন। কিন্তু স্পাই অ্যাপ আপনার ফোনের ব্রাউজারকে ব্যাংকের অরিজিনাল ওয়েবসাইটের বদলে ঠিক সেইরকম দেখতে নকল একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে গেল। এবার সেখানে গিয়ে আপনি যখন আপনার নেট ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড টাইপ করবেন, তখন তা স্পাই অ্যাপ রেকর্ড করে হ্যাকারের কাছে পাঠিয়ে দেবে।
উপরে যে সমস্যাগুলি উল্লেখ করলাম তার মধ্যে যদি একাধিক সমস্যা আপনার ফোনে দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তবে অবশ্যই ফোনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটার ব্যাক আপ রেখে ফোনটি ফ্যাক্টরি রিসেট করুন।

1 comment:

জনপ্রিয় পোস্ট