10 Nov 2017

iPhone X তৈরির খরচ


Photo Credit: Pixabay
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন আইফোনের নতুন মডেল — iPhone8 iPhoneX কেনার জন্য ক্রেতারা অ্যাপল স্টোরের সামনে লাইন দিচ্ছেন। গত ১০ বছরের আইফোনের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দাম চলতি বছর লঞ্চড্ হওয়া অ্যাপলের এই দুটি ফোনের। কিন্তু এই আকাশছোঁয়া দামও ক্রেতাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি।

ইউরোপ,  আমেরিকার ধনী দেশগুলির কথা ছেড়েই দিন, ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে, যেখানে মূলত মিড-বাজেট বা লো-বাজেট সেগমেন্টের অ্যান্ড্রয়েড ফোন বেশি বিক্রি হয়, সেখানেও লাইন দিয়ে আইফোনের নতুন মডেল কিনছেন ক্রেতারা। iPhone8 iPhoneX অ্যাপল ভারতে লঞ্চ করেছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। এই দুটি ফোনের মধ্যে iPhoneX ফোনটির দাম ভারতে ১ লক্ষ টাকারও বেশি। কিন্তু লঞ্চ হওয়ার একমাসের মধ্যেই ভারতে সমস্ত iPhoneX বিক্রি হয়ে গিয়েছে! আইফোন বিক্রি করার জন্য আমাদের দেশে যে সমস্ত অনলাইন স্টোর এবং নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে অ্যাপল চুক্তি করেছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল জিও, এয়ারটেল, ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজন। এদের মধ্যে এয়ারটেলে iPhone8 iPhoneX – এর সমস্ত স্টক শেষ (১০ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী)। এছাড়া ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজনে অনলাইন স্টোরেও iPhoneX-এর স্টক শেষ হয়ে গিয়েছে। 

অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এখন তাঁদের ফোন মোটামুটি ৩-৪ বছর পরপর পাল্টান। তাই এক লক্ষ টাকারও বেশি দাম যে ফোনের, সেই iPhoneX আমাদের দেশে কতটা চলবে, সেই বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু সমস্ত সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে ভারতে এখন iPhoneX ফোনের স্টক কার্যত শেষ। এটা সত্যিই এক বিস্ময়কর ঘটনা। কিন্তু তার থেকেও বিস্ময়কর হল এক লক্ষ টাকার বেশি দামের এই ফোনটি তৈরি করতে অ্যাপলের কত টাকা খরচ হয়েছে সেই তথ্যটি। সেই তথ্য জানলে চমকে উঠতে হবে। 
প্রথমে দেখে নেওয়া iPhoen8 এবং iPhoneX – এর ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট কত অর্থাৎ ফোন দুটি তৈরি করতে অ্যাপলের কত টাকা খরচ পড়েছে। iPhoen8 প্লাস তৈরি করতে অ্যাপলের ম্যানুফ্যাকচারিং কস্ট পড়েছে ২৯৫ ডলার (ইউএস) এবং ফোনটির বাজারে ন্যূনতম দাম হল ৭৯৯ ডলার (ইউএস)। সুতরাং এক্ষেত্রে তৈরির খরচের থেকে প্রায় ১৭০% বেশি হারে ফোনটি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ভাবা যায়! অন্যদিকে iPhoneX তৈরির খরচ পড়েছে ৫৮১ ডলার (ইউএস) অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ₹ ৩৮০০০/-।  কিন্তু ফোনটি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৯৯ ডলারে (ইউএস)। সুতরাং এক্ষেত্রে অ্যাপল ফোনটি তৈরির খরচের তুলনায় প্রায় ৭১% বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। 
কিন্তু উপরের হিসাবটি আমেরিকার। ভারতে কিন্তু iPhoneX ফোনটির দাম আরও বেশি। আমেরিকায় iPhoneX ফোনটির ৬৪ GB মডেলটির দাম $ ৯৯৯/-। এবার ডলার ও ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্য যদি বিচার করি তবে সেই হিসাবে আমাদের দেশে iPhoneX ফোনটির ৬৪ GB মডেলটির দাম হওয়া উচিত ৬৫০০০/- (১০ অক্টোবর, ২০১৭-র মুদ্রা বিনিয়ম হার অনুযায়ী)। কিন্তু আমাদের দেশে  iPhoneX ফোনটির ৬৪ GB মডেলটির দাম ৮৯০০০/-, অর্থাৎ আমেরিকার তুলনায় প্রায় ২৪ হাজার টাকা বেশি। অন্যদিকে iPhoneX ফোনটির ২৫৬ GB মডেলটির দাম আমেরিকায় $ ১১৪৯/-, সেক্ষেত্রে মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী ফোনটির দাম ভারতে হওয়া উচিত ছিল ৭৫০০০/- (প্রায়)। কিন্তু ফোনটির ভারতে দাম ১,০২০০০/-। অথচ এই লাগামছাড়া দাম সত্ত্বেও আমাদের দেশে এখন ফোনটি বেশির ভাগ রিটেইলারের কাছে আউট অফ স্টক! অনেকেই হয়তো বলবেন, এটা কিছু মানুষের পাগলামি। কিন্তু সেক্ষেত্রে যে প্রশ্নটা অনিবার্য ভাবে উঠে আসে তা হল এই পাগলামির কারণ আসলে কী? উত্তর একটাই তা হল অ্যাপলের ব্র্যান্ড ভ্যালু। বিশ্বে এখন অ্যাপলের ব্র্যান্ড ভ্যালু এক নম্বরে (ফোর্বসলিস্ট-২০১৭), সুতরাং আইফোন কেনার জন্য লোকজন এই পাগলামি যে করবে, সেটা তো অনিবার্য। কেউ কেউ বলেন, অ্যান্ড্রয়েড ফোনই বা কম কীসে? কিন্তু যাঁরা অ্যাপলের প্রোডাক্ট জীবনে অন্তত একবার ব্যবহার করেছেন - তা সে আইফোন, আইপড বা আইপ্যাড- যাই হোক না কেন, তাঁরা জানেন অ্যাপলের প্রোডাক্টের সঙ্গে বাকি কোম্পানির প্রোডাক্টের পার্থক্য কোথায়। 

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট