ফাইল সিস্টেম সফট্ওয়্যার কম্পিউটার এবং ফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কম্পিউটার বা ফোনের মেমরিতে আমরা যখন কোনো
ফাইল সেভ করি তখন
সেই ফাইলটি মেমরির কোন লোকেশনে সেভ হবে, পরবর্তীতে আমরা যখন সেই ফাইলটি অ্যাকসেস
করবো তখন মেমরির যে জায়গায় ফাইলটি রয়েছে সেখান থেকে ফাইলটি খুঁজে বের করে সেটিকে
অ্যাকসেস করা কিংবা মেমরিতে সেভ করা ফাইলটিকে এনক্রিপট করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজের
জন্য যে বিশেষ সফট্ওয়্যারের প্রয়োজন, তাকে বলে ফাইল সিস্টেম।
Photo Credit : Pixabay |
প্রধান দুটি ফাইল
সিস্টেম হল NTFS এবং FAT32 যা মূলত উইনডোজ প্ল্যাটফর্মে কাজ করে। FAT শব্দটির
পুরো অর্থ হল File Allocation Table। FAT তৈরি করা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এই ফাইল
সিস্টেম তৈরির উদ্যোক্তা ছিলেন মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস্ এবং
মার্ক ম্যাডোনাল্ড। FAT তৈরি হওয়ার পর সেটির পরবর্তীতে অনেক
পরিবর্তন এবং উন্নতি হয়েছে। FAT ফাইল সিস্টেমের ভার্সনগুলি
হল FAT, FAT8, FAT12, FAT16, FAT32। এখন আমরা একটি
সাধারণ ল্যাপটপেও ন্যূনতম ৫০০ GB মেমরি পাই। একটু দামি ল্যাপটপ বা পিসি-তে এখন ১ বা ২
TB মেমরি থাকে। কিন্তু ২০০০ সালেও একটি পিসি-র মেমরি ছিল গড়ে মাত্র ১০ GB। তারও আগে কম্পিউটারের
হার্ড ড্রাইভে মেমরির পরিমাণ ছিল আরও কম, গড়ে মাত্র ৪ GB। FAT শব্দটির পর যে সংখ্যাটি রয়েছে,
সেটি হল বিট সংখ্যা। গত শতাব্দীর আশির দশকে কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে মেমরির
পরিমাণ যেহেতু খুবই কম ছিল, তাই তখন ফাইল ম্যানেজমেন্টের জন্য FAT-এর প্রয়োজন হত সাধারণত ১৬ বিট বা ২ বাইট (১ বাইট = ৮
বিট)। তাই তখন FAT16 ভার্সন কম্পিউটারে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে
কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভে মেমরির সাইজ বৃদ্ধি পেলে FAT-এর
কাজ করার জন্য আরও বেশি বাইট-এর প্রয়োজন হয়। তাই FAT-এর আপগ্রেডেশন হয় এবং FAT32 সিস্টেম চালু হয়। এই
সিস্টেমের কার্য ক্ষমতা তার আগের ভার্সনের তুলনায় অনেকটাই বেশি কারণ FAT32 একসঙ্গে ৩২ বিট বা ৪ বাইট নিয়ে কাজ করতে সক্ষম। FAT32-র ক্ষমতা বেশি তাই যে সমস্ত ডিভাইসে ২ TB পর্যন্ত হার্ড
ড্রাইভ মেমরি রয়েছে, সেখানে এই ফাইল সিস্টেম কার্যকরী। তাই এখন উইনডোজ
কম্পিউটারগুলিতে মূলত FAT32 ফাইল সিস্টেম রয়েছে। তবে FAT32 মূলত পোর্টেবল মেমরি বা পোর্টেবল মিডিয়া ডিভাইসে ভালো কাজ করে যেমন, MP3
প্লেয়ার, ফ্ল্যাশ ড্রাইভ, মেমরি কার্ড ইত্যাদি।
কম্পিউটারের ফাইল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে আরও উন্নত করতে ১৯৯৩ সালে তৈরি করা
হয়েছিল NTFS (New Technology File System)। এই ফাইল সিস্টেম
সফট্ওয়্যার যৌথ উদ্যোগে তৈরি করেছিল মাইক্রোসফট্ কর্পোরেশন এবং আইবিএম
(ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস)। NTFS মূলত উইনডোজ NT প্ল্যাটফর্মে কাজ করার জন্য তৈরি
করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই ফাইল সিস্টেমকে আরও ডেভেলপ করা হয় যাতে সেটি মাইক্রোসফটের
উইনডোজ ভিস্টা, এক্সপি ইত্যাদি সহ অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমেও কাজ করতে পারে। NTFS-এর ফাইল সিকিউরিটি এবং এনক্রিপশন সিস্টেম FAT32-এর
থেকে অনেক উন্নত। তবে কম্পিউটারে যদি একাধিক অপারেটিং সিস্টেম রান করাতে হয়,
সেক্ষেত্রে FAT32 বিশেষ কার্যকরী।
⇒ অ্যান্ড্রয়েড একাধিক ফাইল সিস্টেম সাপোর্ট করে
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সাধারণত ব্যবহৃত হয় YAFFS (Yet Another Flash File System)। এছাড়া
অ্যান্ড্রয়েড ext (Extended File
system), RFS (Remote File System), f2fs (Flash Friendly File system) ইত্যাদি ফাইল সিস্টেমও সাপোর্ট করে। তবে এদের মধ্যে YAFFS সবচেয়ে আধুনিক ফাইল সিস্টেম। কোন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কোন ফাইল সিস্টেম
থাকবে তা মূলত নির্ভর করে ফোনের ম্যানুফাকচারিং কোম্পানির উপর।
অন্যদিকে
অ্যাপল এতদিন তাদের ডিভাইসে ব্যবহার করতো HFS+ (Hierarchical File System)এই ফাইল
সিস্টেমে অ্যাপল প্রায় ৩০ বছর আগে তৈরি করেছিল। তবে সম্প্রতি তারা একটি নতুন
ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করছে, যার নাম APFS (Apple File System)। এই
ফাইলটি সিস্টেমটিও যথেষ্ট উন্নত এবং এটি অ্যাপলের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ফোন এবং
ঘড়িতে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment