22 Aug 2020

অনলাইন শপিংয়ে প্রতারণার নতুন ফাঁদ, আপনি সাবধান তো ?

Image courtesy: Pixabay

লকডাউনের জেরে গত কয়েক মাসে আমাদের জীবনযাত্রা অনেকটাই পালটে গিয়েছে । ঘরে বসে অফিসের কাজ থেকে অনলাইনে স্কুল, কলেজের ক্লাস করা সহ একাধিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে আমাদের । পোশাকী ভাষায় এই নতুন ধরনের জীবনযাত্রাকে বলা হচ্ছে নব্য স্বাভাবিক (New Normal) । লকডাউনে পাড়ার দোকান থেকে শপিংমল সবই এতদিন বন্ধ ছিল । এখন কিছু কিছু দোকান খুললেও সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই সেখানে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে শপিং করতে ভরসা পাচ্ছেন না । আর এর জেরে গত কয়েক মাসে অনলাইন শপিংয়ের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে । আর সেই সুযোগে বেড়েছে সাইবার ক্রাইম । 





টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  



কীভাবে অনলাইন শপিংয়ের ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে সাইবার ক্রিমিনালরা ? তারা সাধারণত দুইভাবে প্রতারণা চালাচ্ছে । 


প্রতারণা ১ : এই পদ্ধতিতে প্রতারণা করার জন্য সাইবার ক্রিমিনালরা প্রথমে ফিশিং ওয়েবসাইট (কোনও আসল ওয়েবসাইটের নকল সাইট) তৈরি করে । তারপর ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো পেজ খোলে । সেই পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট তারা ফেসবুকের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেয় । এই ধরনের পোস্টগুলিতে ফ্লিপকার্ট, আমাজন, আলিবাবা বা অন্য কোনও জনপ্রিয় শপিংসাইটের লোগো থাকে । এছাড়া থাকে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি গ্যাজেটের লেটেস্ট মডেলের ছবি । পোস্টে লেখা থাকে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের জন্য আকর্ষণীয় ছাড়ে ওই সমস্ত গ্যাজেট কেনার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের । সাধারণত এই ছাড় হয় অস্বাভাবিক কম । যেমন, সম্প্রতি একটি ভুয়ো পোস্ট আমার চোখে পড়েছিল যাতে ফ্লিপকার্টের লোগো দিয়ে লেখা রয়েছে স্যামসাঙের গ্যালাক্সি সিরিজের লেটেস্ট মডেলের ফোনের দামে ৮০ শতাংশ ছাড় ।





এবার ক্রেতা যদি লোভে পড়ে সেই পোস্টে ক্লিক করেন তবে অবিকল ফ্লিপকার্টের সাইটের মতো দেখতে একটি ফিশিং সাইটে তিনি পৌঁছে যাবেন । সেখানে ফোন কেনার জন্য নির্দিষ্ট বাটনে ক্লিক করলে ক্রেতাকে জানানো হবে যে, ক্যাশ অন ডেলিভারিতে এই বিশেষ ছাড়ের সুবিধা নেই । এই বিশেষ ছাড় পেতে হলে ফোনটি অর্ডার দেওয়ার সময়ে অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে । 

ইন্টারনেটে বিনোদ এখন ভাইরাল, চেনেন তাঁকে ?



অনেক ক্রেতা এই অস্বাভাবিক কম দামে লেটেস্ট মডেলের ফোন বা কম্পিউটার কেনার জন্য এভাবে অনলাইনে আগেই দাম মেটান । কিন্তু তারপর বলাইবাহুল্য অর্ডার দেওয়া সেই ফোন বা কম্পিউটার আর তাঁরা ডেলিভারি পান না । এভাবে লকডাউনের সময় অ্যামেরিকা, ইউরোপ সহ ভারতেও অনেক ক্রেতা ঠকেছেন ।






প্রতারণা ২ : এই পদ্ধতিতেও সাইবার ক্রিমিনালরা প্রথমে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো পোস্ট করে । সেই পোস্টগুলিতেও আকর্ষণীয় অফারে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিক্রির অফার থাকে । ক্রেতা যদি সেই পোস্টে ক্লিক করেন তবে তাঁকে বলা হয় এই বিশেষ ছাড়ের সুবিধা পাওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে একটি বিশেষ অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে । ক্রেতার ফোনে সেই অ্যাপের ডাউনলোড লিঙ্ক পাঠিয়ে দেয় সাইবার ক্রিমিনালরা । ক্রেতা সেই লিঙ্ককে ক্লিক করে অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করলে অ্যাপটির মধ্যে লুকিয়ে রাখা ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে ফোনের কন্ট্রোল সাইবার ক্রিমিনালদের হাতে চলে যায় ।




এরপর ক্রেতাকে সাইবার ক্রিমিনালরা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার পাঠায় । তারা ক্রেতাকে নির্দেশ দেয়, পছন্দের প্রোডাক্টটি বুক করতে হলে আগে ওই অ্যাকাউন্টে ১০ টাকা পাঠাতে হবে । বাকি টাকা প্রোডাক্টের ডেলিভারি পাওয়ার পর দিলেই চলবে । সেই টাকা পাঠাতে ক্রেতা তাঁর ফোনে নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্টে লগইন করার জন্য যখন লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড টাইপ করেন, তখন ম্যালওয়্যারের সাহায্যে সেই তথ্য সাইবার ক্রিমিনালরা জেনে নেয় । এরপর টাকা ট্রান্সফারের জন্য ক্রেতার ফোনে ব্যাঙ্কের তরফে এসএমএস-এর মাধ্যমে যে OTP পাঠানো হয়, সেটিও ম্যালওয়্যারের সাহায্যে জেনে যায় সাইবার ক্রিমিনালরা । তারপর ক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তারা তুলে নেয় । 

হোয়াটসঅ্যাপে আর ভুয়ো খবর নয়, এল নতুন ফিচার Search the web



সুতরাং বুঝতেই পারছেন অনলাইনে সামান্য অসতর্কতার জেরে কতবড় বিপদ হতে পারে । তাই শেষে টেকনোবিটসের পাঠকদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ


অনলাইনে শপিং করার সময় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে দেওয়া কোনও লিঙ্কে ক্লিক করবেন না । যে কোম্পানির অনলাইন স্টোর থেকে শপিং করবেন তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যান অথবা তাদের অফিশিয়াল অ্যাপ (অ্যান্ড্রয়েড) সর্বদা গুগলের প্লে স্টোর (অন্য কোনও লিঙ্ক বা স্টোর থেকে নয়) বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর (আইফোন) থেকে ডাউনলোড করে ফোনে ইনস্টল করে তার মাধ্যমে শপিং করুন । 


কী করে চিনবেন কোন ওয়েবসাইট আসল আর কোনটি নকল বা ফিশিং সাইট ?


অ্যাড্রেসবারে ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসটি ভালো করে দেখে নিন । ফিশিং সাইটের অ্যাড্রেসে একটা বা দুটো অক্ষর বা লেটার আলাদা থাকে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখ এড়িয়ে যায় । যেমন, flipkart.com সাইটের ফিশিং সাইট কেউ তৈরি করলে তার অ্যাড্রেস হতে পারে fliipkart.com । 
তারপর দেখুন, অ্যাড্রেসবারে প্যাডলক সাইন (তালা চিহ্ন) রয়েছে কি না । এই সাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সমস্ত অরিজিনাল সাইটে সাধারণত এই সাইন থাকে । এই সাইনে ক্লিক করলে একটি উইনডো ওপেন হবে । সেখানে দেখুন ‘Connection is secure’ লেখা রয়েছে কি না । 


Image courtesy: Flipkart


‘Certificate’ অপশনে ক্লিক করে দেখে নিন সাইটটির সার্টিফিকেট গো ড্যাডি, ডিজিকার্ট গ্লোবাল বা ওই জাতীয় কোনও কোম্পানি থেকে ইশু করা কি না । সাইটটি যে নামে রয়েছে সেই নামেই সার্টিফিকেট ইশু করা হয়েছে কি না সেটাও দেখে নিন । সার্টিফিকেটের তারিখ চেক করে দেখে নিন সেটির ভ্যালিডিটি এক্সপায়ার করে গেছে কি না । সঙ্গে দেওয়া ছবিটি দেখলে বিষয়টি বুঝতে পারবেন । মনে রাখবেন একটি অরিজিনাল সাইটে প্যাডলক সাইন, সিকিওর কানেকশনের সুবিধা ও ভ্যালিড সার্টিফিকেট থাকবে ।


Image courtesy: Google play store


অ্যাপের ক্ষেত্রে প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে ‘Additional information’ অপশনে গিয়ে দেখুন অ্যাপটি কোন কোম্পানির তৈরি এবং তার ইমেল আইডি ও অ্যাড্রেস কী দেওয়া রয়েছে । ধরা যাক কেউ আমাজনের ফেক অ্যাপ তৈরি করল । সেক্ষেত্রে ‘Additional information’ – এ অ্যাপ ডেভেলপারের জায়গায় কিন্তু আমাজন কোম্পানির নাম থাকবে না, অন্য কোম্পানি বা ব্যক্তির নাম থাকবে । এভাবে বোঝা যাবে কোনও অ্যাপ আসল, না নকল ।






অনলাইন শপিং করার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে দাম মেটানোর চেষ্টা করবেন ।


যাঁরা অনলাইনে নিয়মিত জিনিসপত্রের দাম মেটানো, বিল জমা দেওয়া সহ বিভিন্ন  প্রকার আর্থিক লেনদেন করেন, তাঁদের বলব, দুটো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রাখুন । তারমধ্যে যে কোনও একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের জন্য । সেই অ্যাকাউন্টে সর্বদা কম পরিমাণ টাকা রাখুন । বেসরকারি ব্যাঙ্ক হলে ন্যূনতম ₹ ১০,০০০ আর  সরকারি ব্যাঙ্ক হলে তার থেকেও কম টাকা রাখতে পারবেন । এই অ্যাকাউন্টের ডেবিট কার্ড বা নেট ব্যাঙ্কিং আইডি ব্যবহার করে অনলাইনে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন করুন । এতে একটা সুবিধা হল, যদি কোনওভাবে আপনার সেই অ্যাকাউন্ট দুষ্কৃতীরা হ্যাক করে তবুও তারা আপনার বেশি ক্ষতি করতে পারবে না ।






টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে। টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ধন্য়বাদ। 

1 comment:

  1. খুব ভালো লাগলো ব্লগটি পড়ে। ধন্যবাদ স্যার

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট