10 Aug 2020

ইন্টারনেটে বিনোদ এখন ভাইরাল, চেনেন তাঁকে ?

Image courtesy: Internet memes

বিনোদ (Binod) । একটা সাধারণ নাম । ভারতে এমন নামের মানুষ হয়তো কয়েক লাখ (কোটিও হতে পারে) রয়েছে । শুধু ভারত নয়, নেপাল ও বাংলাদেশেও এই নাম যথেষ্ট প্রচলিত । বলিউডে বিনোদ নামে দুইজন নায়ক ছিলেন । একজন Vinod Khanna (অক্ষয় খান্নার বাবা) ও অন্যজন Vinod Mehra (বাংলায় অবশ্য উচ্চারণ হত বিনোদ খান্না ও বিনোদ মেহরা ) । তাঁরা ছাড়া বিনোদ নামে আর কোনও তেমন বিখ্যাত ব্যক্তি ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলিতে নেই (অন্তত আমার জানা নেই) । কিন্তু কিছুদিন হল বিনোদ নামটি ইন্টারনেটে ভাইরাল । ইতিমধ্যে বিনোদ-এর মিমে ছয়লাপ ইন্টারনেট । কিন্তু প্রশ্ন হল কে এই বিনোদ আর নামটি এভাবে ভাইরাল হলই বা কেন ?



টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  



একটি মিম কীভাবে ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় ? সেই বিষয়ে আসার আগে সংক্ষেপে জেনে নেই মিম-এর ইতিহাস । ‘মিম’ শব্দটার উৎপত্তি আজ থেকে ৪৪ বছর আগে ইংল্যান্ডে । ১৯৭৬ সালে রিচার্ড ডকিন্স (Richard Dawkins) নামে এক ভদ্রলোক একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম দ্য সেলফিশ জিন (The Selfish Gene)। বইটিতে তিনি একটি গ্রিক শব্দ ‘Mimeme’ ব্যবহার করেছিলেন । গ্রিক ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘অনুকরণযোগ্য কোনও বিষয়’ । এই ‘Mimeme’ পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘Meme’ হিসেবে জনপ্রিয় হল ও ইংরেজি অভিধানের অন্তর্ভুক্ত হল । ডকিন্সের হাত ধরে ‘Meme’ ইংরেজি অভিধানের অন্তর্ভুক্ত হল বটে, তবে তখন তার অর্থ অনেকটাই পালটে গেল । অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারিতে এখন মিমের মানে এমন কোনও ইমেজ, টেক্সট বা ভিডিয়ো যার ভিন্ন ভিন্ন অর্থ করে বহু লোক তা কপি বা শেয়ার করে । যেমন, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অনুব্রত মণ্ডলের একাধিক উক্তির মিম সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা বিভিন্নভাবে (নিছক মজা, বিদ্রুপ সহ নানা অর্থে) ব্যবহার করি । 






কিন্তু এবার প্রশ্ন হল প্রতিদিন হাজার হাজার মিম তৈরি করা হয়, কিন্তু তারমধ্যে কোনগুলি ভাইরাল হয় এবং কেন হয় । সত্যি কথা বলতে কী এর কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই । কয়েক বছর আগে আমেরিকা ও কানাডার বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘ভাইস’ এই বিষয়ে মিম বিশেষজ্ঞ অ্যারি স্পুলের (Ari Spool) – এর ইন্টারভিউ নিয়েছিল । সেখানে ভদ্রলোক বলেছিলেন, অনেকক্ষেত্রেই মিম ভাইরাল হয় তার ভিশুয়াল অ্যাসপেক্টের জন্য । অর্থাৎ মিমে যে ইমেজ বা ভিডিয়োটি ব্যবহৃত হচ্ছে, তা দর্শকের মনে কতটা হাসি বা রাগের উদ্রেক করছে তার উপর । কিন্তু সেটাই যে সর্বদা কোনও মিম ভাইরাল হওয়ার কারণ, তা নয় । তাই অ্যারি স্পুল বলেছেন, এমন বহু মিম ভাইরাল হয়েছে যার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই । ঠিক যেমন ‘বিনোদ’ মিমটির ভাইরাল হওয়ার পেছনেও কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই ।


হোয়াটসঅ্যাপে নতুন ফিচার Search the web



আসলে গোটা ব্যাপারটি শুরু হয়েছিল ইউটিউবের একটি ভিডিয়ো থেকে । স্লে পয়েন্ট (Slayy Point) নামে ইউটিউবে একটি চ্যানেল আছে । তারা সপ্তাহখানেক আগে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে । ভিডিয়োর নাম ছিল "Why Indian Comments Section is Garbage (BINOD)" । অর্থাৎ ভারতীয়রা কমেন্ট বক্সে এত ভুলভাল লেখে কেন । 


এভাবে পাঠানো গোপন whatsapp মেসেজ নিজেই ডিলিট হবে



ইউটিউব, ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কমেন্ট বক্স থাকে তার উদ্দেশ্য হল সংশ্লিষ্ট ভিডিয়ো বা পোস্টটি দেখে দর্শক বা পাঠকরা যাতে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন । কিন্তু এমন প্রচুর কমেন্ট (বিশেষ করে ইউটিউব ভিডিয়োর ক্ষেত্রে) দেখা যায় যেগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পোস্ট বা ভিডিয়োর কোনও সম্পর্ক নেই । অর্থাৎ সেই কমেন্টগুলো পুরোপুরি অর্থহীন । যেমন, কিছুদিন আগে আমি ইউটিউবে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর উপর একটি ভিডিয়ো দেখছিলাম । দেখলাম একজন কমেন্ট বক্সে লিখেছে ‘Boycott China’ । অভিষেক বচ্চন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন । সেই ভিডিয়োর নিচে কমেন্ট বক্সে লেখা ‘Mumbai mein itna barish kaiko hai?’ ।   


Image courtesy: Internet meme


এই ধরনের অর্থহীন কমেন্ট নিয়ে স্লে পয়েন্ট ভিডিয়ো তৈরি করে পোস্ট করেছিল । ভিডিয়োয় তারা এমন বেশ কিছু অর্থহীন কমেন্টের উদাহরণ দিয়েছিল । তারমধ্যে একটি কমেন্ট ছিল ‘Binod’। যিনি কমেন্টটি করেছিলেন সেই ব্যক্তির নাম বিনোদ থারু (Binod Tharu)। লোকটির নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে । কিন্তু সেটি তেমন জনপ্রিয় নয় । তাই বেচারা নিজের চ্যানেলকে জনপ্রিয় করতে অন্য জনপ্রিয় চ্যানেলগুলির ভিডিয়োর নিচে কমেন্ট বক্সে নিজের নাম লেখেন । তাঁর আশা এভাবে নিজের নামের মাধ্যমে তিনি তাঁর চ্যানেলকে জনপ্রিয় করবেন । কিন্তু বিষয়টি হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছে যায় । যেমন, ইউটিউবে আমাজন হয়তো তাদের কোনও প্রোডাক্টের ভিডিয়ো পোস্ট করল, তিনি সেই ভিডিয়োর কমেন্ট বক্সে লিখলেন ‘বিনোদ’ । ইউটিউবে নতুন কোনও মুভির টিজার পোস্ট হল, কমেন্ট বক্সে তিনি লিখলেন ‘বিনোদ’ । 






কমেন্ট বক্সে অনেকেই অদ্ভুত সব কথা লেখে (আগেই দুটো উদাহরণ দিয়েছি), কিন্তু কেউ যে নিজের নামও লেখে সেটা সত্যিই অভিনব ! তাই বিনোদ থারুর ‘Binod’ কমেন্ট নিয়ে স্লে পয়েন্ট তাদের "Why Indian Comments Section is Garbage (BINOD)" ভিডিয়োতে যথেষ্ট হাসি-ঠাট্টা করেছিল । কিন্তু স্লে পয়েন্ট তখন ভাবতেও পারেনি যে, তাদের সেই হাসি-ঠাট্টা রাতারাতি কীভাবে ইন্টারনেটে ‘বিনোদ’-কে ভাইরাল করে দেবে । 


Image courtesy: Paytm


স্লে পয়েন্টের সেই ভিডিয়ো দেখে অনেকেই মজা করে তারপর ফেসবুকে ও টুইটারে লেখে ‘My name is Binod’ । এভাবে ‘বিনোদ’ ক্রমশ জনপ্রিয় হতে হতে এখন ভাইরাল । বিনোদের উপর ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মিম তৈরি হয়েছে । আর এখন তো ট্যুইটারে এক নম্বর ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ ‘Binod’ । বিনোদের জনপ্রিয়তা এখন এমন পর্যায়ে যে পেটিএম পর্যন্ত গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য সম্প্রতি তাদের টুইটার হ্যান্ডেলের নাম পালটে ‘Binod’ করেছিল । বুঝুন কাণ্ড ! ইন্টারনেট কতদিন এই বিনোদ-এর বিনোদনে মেতে থাকে, সেটাই এখন দেখার ।






টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।  টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ধন্য়বাদ। 

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট