26 Jan 2019

মোবাইল ফোনে আর স্পিকার থাকবে না, শুরুটা করল ভিভো

Image Credit: Vivo
ফোনটির সামনের পুরো অংশটা জুড়েই স্ক্রিন এবং পেছনের মেটাল কেসের পুরোটাই ঢাকা অর্থাৎ কোনও ওপেনিং বা ছিদ্র নেই – মানে কোনও পোর্ট বা হেডফোন জ্যাক নেই। তাহলে হেডফোনের পিন কোথায় কানেক্ট করবেন? চার্জিং কেবল ও ডেটা কেবলের পোর্ট অর্থাৎ ইউএসবি পোর্ট না থাকায় ফোনটি কীভাবে চার্জ করবেন বা ডেটা কেবল কীভাবে ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করবেন? মেটাল কেসে কোনও স্পিকার গ্রিল, ইয়ারপিস ও মাইক নেই। তাহলে ফোনে ভয়েস কল কীভাবে করবেন? গান শুনবেন বা মুভি দেখবেন কীভাবে? যে ফোনটির কথা বলছি সেটা হল ভিভো কোম্পানির নতুন 5G ফোন Apex 2019। নিঃসন্দেহে Apex 2019 মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিতে এক নতুন মাইল স্টোন। আগামী বছরগুলিতে মোবাইল ফোনের প্রযুক্তিতে কী কী পরিবর্তন আসতে চলেছে, তার উদাহরণ ভিভো কোম্পানির এই নতুন ফোন। 



স্ক্রিন ও বেজেল


ফোনটির সামনের অংশের প্রায় পুরোটা জুড়েই স্ক্রিন। কোনও নচ ডিসপ্লে নেই। স্ক্রিনের চারপাশে বেজেল খুবই সরু। বেজেলের মাপ মাত্র ১.৮ মিমি। 


ফিঙারপ্রিন্ট সেনসর


ফোনটির স্ক্রিনের পুরোটাই ফিঙারপ্রিন্ট সেনসর হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ স্ক্রিনের যে কোনও অংশে আঙুল প্রেস করলেই ফোন আনলক হবে। ফোনটির ফিঙারপ্রিন্ট সেনসরে বিশেষ ফিঙারপ্রিন্ট লাইট ফিচার ব্যবহার করা হয়েছে। ফোন আনলক করার সময় স্ক্রিনের যে অংশে আঙুল প্রেস করবেন, তার চারপাশে কিছুটা জায়গায় আলো জ্বলে উঠবে যাতে সেনসর আপনার আঙুলের ছাপের ইমেজ ঠিকভাবে রিড করতে পারে।





ম্যাগপোর্ট


সাধারণ মোবাইল ফোনের বডিতে অন্তত পাঁচটি ওপেনিং বা ছিদ্র থাকে। সেগুলি হল ইয়ারপিস (কথা শোনার জন্য), মাইক (কথা বলার জন্য), স্পিকার (গান শোনা, মুভি দেখা এবং রিংটোনের জন্য), হেডফোন জ্যাক (হেডফোন বা ইয়ারফোন প্লাগের জন্য) এবং ইউএসবি পোর্ট (পাওয়ার কেবল ও ডেটা কেবল ইনসার্ট করার জন্য)। কিন্তু Apex 2019 ফোনে এই ওপেনিংগুলি নেই। তার বদলে এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাগনেটিক পোর্ট (সংক্ষেপে ম্যাগপোর্ট) ফিচার। 


ম্যাগপোর্ট ফিচারটি আসলে ওয়্যারলেস উইনস কেবল টেকনোলজি। ফোনটির পেছনের মেটাল কেসটি ম্যাগনেটিক পোর্ট হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে ফোনটির মেটাল কেস ওয়্যারলেস চার্জিং পডের উপর রাখলেই ফোনটি চার্জ হবে। ফোনটির মেটাল কেস অন্য ফোনের পাশে নিয়ে গেলেই এক ফোন থেকে অন্য ফোনে ডেটা ট্রান্সফার হবে। 


বডি সাউন্ড কাস্টিং টেকনোলজি


আগেই বলেছি ফোনটিতে কোনও স্পিকার নেই। তাহলে কীভাবে সাউন্ড শোনা যাবে? এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বডি সাউন্ড কাস্টিং টেকনোলজি। এই টেকনোলজিতে ফোনটির স্ক্রিনটাই স্পিকার হিসেবে কাজ করবে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা সত্যি। কাচের ভাইব্রেটিং পাওয়ার অর্থাৎ কম্পন ক্ষমতা রয়েছে। বডি সাউন্ড কাস্টিং টেকনোলজি কাচের সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ফোনের স্ক্রিনটিকে স্পিকার হিসেবে কাজ করায়। আজকাল অনেক টিভি সেটেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে টিভিতে আলাদা করে স্পিকার ব্যবহার করার দরকার পড়ছে না। টিভির স্ক্রিনটাই স্পিকার হিসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে টিভি বা ফোনের স্ক্রিন থেকে যে সাউন্ড বের হয় তার কোয়ালিটি সাধারণ স্পিকারের থেকে উন্নত। শুধু তাই নয়, এই প্রযুক্তির ব্যবহারে ফোনের ব্যাটারি খরচও অনেক কম হয়। ইয়ারফোন বা হেডফোনে গান শোনার ক্ষেত্রে অবশ্য এই ফোনের জন্য ব্যবহার করতে হবে ব্লুটুথ সেট। 
    

টাচ সেন্স টেকনোলজি


Apex 2019 হ্যান্ডসেটে কোনও পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম কন্ট্রোল বাটন নেই। বাটনের বদলে এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে টাচ সেন্স টেকনোলজি। এই প্রযুক্তিতে ফোনটির মেটাল কেসের সাইডের অংশটি ক্যাপাসিটিভ টাচ ও প্রেশার সেনসিং বাটন হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ ফোনের সাইডে মেটাল কেসের উপর আপনি কতটা জোরে আঙুল প্রেস করবেন তার উপর নির্ভর করে ভলিউম আপ ও ডাউন এবং পাওয়ার অন ও অফ ফিচারগুলি কাজ করবে।


ডুপ্লেক্স পিসিবি ডিজাইন


Apex 2019 হল ভিভোর প্রথম ফোন, যা 5G নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করবে। কিন্তু 4G ফোনের তুলনায় 5G ফোনের সার্কিটের সাইজ অনেকটাই বড়। সেক্ষেত্রে সাধারণ পিসিবি (প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড) ব্যবহার করলে সার্কিটের সাইজ বেড়ে যাওয়ার জন্য ফোনের সাইজও বাড়াতে হত। সেটা যাতে না করতে হয় সেজন্য এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে ডুপ্লেক্স পিসিবি ডিজাইন। সাধারণ সার্কিট বোর্ডে একটি দিকেই সার্কিটগুলি লাগানো সম্ভব। কিন্তু ডুপ্লেক্স পিসিবি ডিজাইনে বোর্ডের দুটো দিকেই সার্কিট লাগানো হয়। ফলে সার্কিটের সাইজ বাড়লেও সার্কিট বোর্ডের সাইজ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না।  

স্পেসিফিকেশন


ভিভো কোম্পানি তাদের এই নতুন ফোনটির ফুল স্পেসিফিকেশন এখনও ঘোষণা করেনি। তবে যতটুকু জানা গেছে তা হল ফোনটিতে রয়েছে স্ন্যাপড্রাগন কয়ালকম ৮৫৫ প্রসেসর, ১২ GB ব়্যাম এবং ২৫৬ GB ইন্টারনাল স্টোরেজ। 




এছাড়া ফোনটিতে রয়েছে ই-সিম এবং ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরা। কিন্তু ফোনের সামনে কি কোনও ক্যামেরা থাকবে না? যেহেতু ফোনটিতে কোনও নচ ডিসপ্লে নেই এবং মেটাল কেসে কোনও ওপেনিং নেই, তাই ধরেই নেওয়া যায় ফোনটিতে পপ আপ বা স্লাইডিং ফ্রন্ট ক্যামেরা থাকবে না। তাহলে কি ইনহোল ডিসপ্লে ক্যামেরা থাকবে? কিন্তু ভিভো সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানায়নি। আগামী মাসে স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফোনটি সবার সামনে আনবে ভিভো। তখনই পাওয়া যাবে এই প্রশ্নের উত্তর।   


শেষে আর একটি তথ্য 


ভিভোর আগে চিনের আরও একটি কোম্পানি মেইজু (Meizu) লঞ্চ করেছিল Meizu Zero  হ্যান্ডসেট। এই ফোনটিতেও কোনও পোর্ট ছিল না। 





টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ।


No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট