28 Jul 2020

চিনের ৪৭টি ক্লোন অ্যাপ নিষিদ্ধ করল ভারত, সত্যিই কি তাই ?

Image courtesy: Oppo

গত মাসে চিনের ৫৯টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল ভারত সরকার । তারপর ফের আরও ৪৭টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে । একাধিক পোর্টাল ও সংবাদপত্রে দেখলাম লেখা হয়েছে, এই ৪৭টি অ্যাপের অধিকাংশ না কি আগের ৫৯টি অ্যাপের ক্লোন অ্যাপ । কিন্তু আদতে এই ৪৭টি অ্যাপের অধিকাংশ আগের ৫৯টি অ্যাপের লাইট ভার্সন । একটি অ্যাপের লাইট ভার্সনকে টেকনিক্যালি তার মেন ভার্সনের ক্লোন বলা যায় না । কারণ ক্লোন অ্যাপ বিষয়টা একেবারেই আলাদা । 




টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  



যাঁরা মিডল এবং লো এন্ড সেগমেন্টের ফোন ব্যবহার করেন বা যে সমস্ত এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ অতটা জোরদার নয়, সেই সব ক্ষেত্রে ভারী অ্যাপ অর্থাৎ যে অ্যাপগুলির ফাইল সাইজ ও ফিচার বেশি সেগুলি ঠিকমতো কাজ করে না । কারণ সেই অ্যাপগুলির কাজ করার জন্য ফোনে পাওয়ারফুল প্রসেসরের পাশাপাশি ব়্যাম ও ইন্টারনাল স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বেশি থাকা দরকার । 






এই বিষয়টি মাথায় রেখে বিভিন্ন অ্যাপের এখন মেইন ভার্সনের পাশাপাশি লাইট ভার্সন তৈরি করা হয়, যেগুলির সাইজ সাধারণত ১০ MB-র মধ্যে থাকে । সাধারণত ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের যে সমস্ত দেশে অধিকাংশ লোকের হাই এন্ড স্মার্ট ফোন কেনার ক্ষমতা নেই এবং নেটওয়ার্ক কানেকশন সব জায়গায় অতটা ভালো নয়, সেই সমস্ত দেশের জন্য বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপের ‘Lite’ ভার্সন তৈরি করা হয় । যেমন রয়েছে ফেসবুক অ্যাপের ‘Lite’ ভার্সন ‘Facebook Lite’ । 



আপনার চাইনিজ ফোনের সিকিউরিটি অ্যাপটি কতটা বিপজ্জনক জানেন ?


তেমনি, চিনের বিভিন্ন জনপ্রিয় অ্যাপের ‘Lite’ ভার্সন রয়েছে । যেমন, TikTok Lite, Helo Lite, Shareit Lite ইত্যাদি । কিন্তু এই অ্যাপগুলিকে টেকনিক্যালি TikTok, Helo, Shareit ইত্যাদি অ্যাপের ক্লোন বলা যায় না । কারণ কোনও অ্যাপের মেন ভার্সন ও লাইট ভার্সনের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, ভার্সন সবই আলাদা হয় । আসলে ভারত সরকার যখন প্রথম দফায় চিনের অ্যাপগুলি নিষিদ্ধ করেছিল তখন সেই অ্যাপের মেন ভার্সনগুলিকেই নিষিদ্ধ করেছিল । কিন্তু সেগুলির ‘Lite’ ভার্সনগুলিকে তখন নিষিদ্ধ করা হয়নি । তাই এবার দ্বিতীয় দফায় ‘Lite’ ভার্সনগুলিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ।

তাহলে এবার প্রশ্ন হল ক্লোন অ্যাপ কাকে বলা হয় ?


উত্তরটা হল, আপনি যদি আপনার ফোনে একই অ্যাপ আলাদা আলাদা করে ইনস্টল করে তাদের মাধ্যমে আলাদা অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন তাহলে সেই অ্যাপদুটিকে একটির আর একটির ক্লোন বলা হয় । 


ধরা যাক আপনার ফেসবুকে দুটো অ্যাকাউন্ট রয়েছে । প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা আইডি রয়েছে । সেক্ষেত্রে কম্পিউটারে আপনি আলাদা আইডি ব্যবহার করে দুটো অ্যাকাউন্টই ওপেন করে অপারেট করতে পারবেন । কিন্তু মোবাইল ফোনে অ্যাপের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা পাবেন না । কারণ সাধারণ পদ্ধতিতে ফোনে আপনি একটাই ফেসবুক অ্যাপ ইনস্টল করতে পারবেন এবং অ্যাপটিকে আপনি একটি আইডি-র মাধ্যমেই আপারেট করতে পারবেন । একইভাবে মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রেও আপনি ফোনে অ্যাপটিকে একটিমাত্র নাম্বারের মাধ্যমেই অপারেট করতে পারবেন । 




এই অ্যাপগুলি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেনি তো ?



কিন্তু বিশেষ কিছু অ্যাপ রয়েছে যাদের বলা হয় App Cloner । এই অ্যাপগুলির সাহায্যে আপনি আপনার ফোনে দুটি ফেসবুক অ্যাপ, দুটো হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি একসঙ্গে রেখে দুটো অ্যাকাউন্টই একসঙ্গে অপারেট করতে পারবেন । এভাবে আপনি যদি ফোনে দুটি হোয়াটসঅ্যাপ বা দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একসঙ্গে ব্যবহার করেন, তবে তখন একটি অ্যাপকে অন্যটির ক্লোন বলা হয় । 






এই ধরনের একাধিক App Cloner প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যায় যেমন, Clone App, Multiple Accounts, Multi Parallel, Do Multiple Accounts, Dr.Clone, Clone App-Run Multiple Accounts, Dual Space ইত্যাদি । এছাড়া আরও একটি অ্যাপ রয়েছে তার নাম Parallel Space, তবে সেটি চিনের অ্যাপ, বর্তমানে ভারতে নিষিদ্ধ । 






টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।

টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ধন্য়বাদ। 

1 comment:

  1. সেটাই তো কথা। "ক্লোন অ্যাপ ব্লক করা হয়েছে", এই কথাটা টেকনিক্যালি কার্যত ভিত্তিহীন। এভাবে খবর প্রচার করা কিছুটা টেকনোলজিক্যাল মূর্খতার পরিচয় দেয়। কিন্তু যাই হোক, আমার একটা প্রশ্ন খুব মনে জাগছে। এভাবে কতো কতো চিনা অ্যাপকে ভারত ব্যান করবে ? চিন দেশটা তো বিশ্বের তথ্য চুরির জন্য ব্যাধ সেজে জাল বিছিয়ে রেখেছে। সেই জাল কেটে এতো তাড়াতাড়ি মুক্ত হওয়া অতো সস্তা না। বেশ কিছুদিন ধরে একটা ঘটনাও লক্ষ্য করেছি। প্লে স্টোরে অধিকাংশ চিনা অ্যাপগুলোর "Developer Contact" মেনুতে চিনের সার্ভার অ্যাড্রেস মুছে ফেলা হয়েছে। কোনো জিজ্ঞাসার জন্য যোগাযোগ করার জন্য শুধু ইমেল আইডি দিয়ে রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে এটা সত্যিই লক্ষণীয় ঘটনা।
    আপনার লেখা পড়ে একদিন জেনেছিলাম, চিনে অন্য দেশের অ্যাপের সেরকম প্রচলন নেই। অন্য দেশ যাতে তথ্য চুরি করতে না পারে সেজন্য সরকারি চাপে চিনবাসীদের শুধু নিজের দেশের তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। আমি বলবো, ভারতীয়দের এটা দেখে একটু শিক্ষা নেওয়ারও প্রয়োজন আছে।

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট