30 Mar 2019

জঙ্গিরা ব্যবহার করে এই বিশেষ মোবাইল সিম, কেন জানেন ?

পুলওয়ামা হামলা । Image courtesy: Business Standard

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ প্রেমদিবসে রক্তাক্ত হয়েছিল কাশ্মীর। সেই রাজ্যের পুলওয়ামা জেলায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিল ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান। জখম হয়েছিল বহু। হামলার ঘটনায় পুলিশ ও  গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তদন্ত চলছে। এখনও পর্যন্ত তদন্তে যে তথ্য জানা গেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হামলার সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য জঙ্গিরা ব্যবহার করেছিল ভার্চুয়াল মোবাইল সিম। 


টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  



পুলওয়ামা হামলায় আরডিএক্স ভর্তি জিপ নিয়ে জইশ ই মহম্মদ সংগঠনের জঙ্গি আদিল সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়ে হামলা চালায়। এই হামলা চালানোর আগে আদিল মোবাইল ফোনে পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা জইশ নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিল। এই কথাবার্তা বলার জন্য আদিল তার ফোনে ব্যবহার করেছিল ভার্চুয়াল সিম।


ভার্চুয়াল সিম কাকে বলে?


আমরা সাধারণত মোবাইল ফোনে যে সিম কার্ড ব্যবহার করি সেগুলি সাধারণ সিম। এয়ারটেল, জিও, ভোডাফোন বা অন্যান্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থাগুলির আউটলেটে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে, ফটো ও পরিচয়পত্রের কপি জমা দিয়ে সেই সিম কার্ড কিনতে হয়। কিন্তু আর এক ধরনের সিম রয়েছে যাকে বলা হয় ভার্চুয়াল সিম। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভার্চুয়াল সিমের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 






এখন আমাদের প্রায় সবারই একাধিক ফোন নাম্বার। অর্থাৎ আমরা একের বেশি সিম কার্ড ব্যবহার করি। তাই অধিকাংশ মোবাইল ফোনেই এখন সাধারণত দুটি সিম কার্ড স্লট থাকে। কিন্তু সমস্যা হল এতে ফোনের ভেতর অনেকটা স্পেস নষ্ট হয়। প্রতিটি কোম্পানি এখন চেষ্টা করছে কীভাবে তাদের ফোন আরও স্লিম বা পাতলা করা যায় এবং ব্যাটারির সাইজ বাড়ানো যায়। সেজন্য ফোনের ভেতর স্পেস বাঁচাতে সার্কিটের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে অ্যাপল তাদের আইফোনে স্পেস বাঁচানোর জন্য হেডফোন জ্যাক বন্ধ করে দিয়েছে (আইফোনের নতুন মডেলে এখন শুধু ব্লুটুথ ইয়ারফোন কাজ করে)। একইভাবে স্পেস বাঁচানোর জন্য অদূর ভবিষ্যতে ফোনে সিম কার্ড স্লটও রাখা হবে না। তখন সমস্ত ফোনেই ব্যবহৃত হবে ভার্চুয়াল সিম।

সাধারণ সিম কার্ডের অন্যতম সমস্যা হল এর রোমিং ফেসিলিটির চড়া রেট। এখন যদিও ভারতের সমস্ত রাজ্যেই অধিকাংশ কোম্পানি ফ্রি রোমিং ফেসিলিটি দেয়। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল রোমিং রেট এখনও যথেষ্ট চড়া। ধরুন আপনি জিও সিম ব্যবহার করেন। আপনি যদি আমেরিকায় যান এবং সেখান থেকে জিও সিম ব্যবহার করে কথা বলেন, তবে প্রচুর টাকা রোমিং চার্জ দিতে হবে। কিন্তু আপনি সহজেই আমেরিকার কোনও কোম্পানির ভার্চুয়াল সিম কিনে তার সঙ্গে আপনার জিও সিমের নাম্বার অ্যাড করে লোকাল কল রেটে কথা বলতে পারবেন। 


ভার্চুয়াল সিম কার্ড কেনার জন্য আপনাকে কোনও পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে না। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টেলিগ্রাম বা টুইটারে অ্যাকাউন্ট থাকলেই চলবে। সেই অ্যাকাউন্টগুলিকে আপনার পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে ধরা হয়। ফলে আপনার আলাদা করে কোনও পরিচয়পত্রের প্রমাণ দেওয়ার দরকার নেই। যে কোম্পানিগুলি ভার্চুয়াল সিম বিক্রি করে, তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে টাকা জমা দিয়ে ভার্চুয়াল সিম কিনতে হয়। সিম কেনার পর কোম্পানি আপনাকে ভার্চুয়াল সিমের নাম্বার দেবে। আপনি সেই নাম্বার ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খুবই কম চার্জে কল করতে পারবেন বা কল রিসিভ করতে পারবেন। এসএমএস বা ভয়েস মেসেজও পাঠাতে পারবেন। 


একাধিক নাম্বার ব্যবহার সম্ভব


তা ছাড়া ভার্চুয়াল সিমের নাম্বারের সঙ্গে আপনি আপনার অন্য ফোন নাম্বারগুলিও অ্যাড করতে পারবেন। ধরা যাক আপনার জিও এবং এয়ারটেলের দুটি ফোন নাম্বার রয়েছে। আপনি ভার্চুয়াল সিমের নাম্বারটির সঙ্গে জিও এবং এয়ারটেলের সেই দুটি ফোন নাম্বার অ্যাড করতে পারবেন। ফলে সেই দুটি নাম্বারে আপনাকে যখন কেউ কল করবে তখন সেই কল আপনি ভার্চুয়াল সিমের নাম্বারের মাধ্যমে রিসিভ করতে পারবেন। একইভাবে ভার্চুয়াল সিম ব্যবহার করে আপনি সেই দুটি নাম্বারের সাহায্যে কাউকে কল করতে পারবেন। ভার্চুয়াল সিম ব্যবহার করার জন্য আপনাকে ফোনে বিশেষ অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে। গুগলের প্লে স্টোরে এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে একাধিক এমন অ্যাপ রয়েছে।

সাধারণ সিমের তুলনায় ভার্চুয়াল সিমের সুবিধা অনেক বেশি, তাই এই সিম ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু তার ফায়দা লুটছে জঙ্গি সহ অনেক দুষ্কৃতী। 


কেন?


তার কারণ ভার্চুয়াল সিম পাওয়া খুবই সহজ। আপনারা জানেন সাধারণ সিম কেনার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করার পাশাপাশি ফটো ও পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে। কোম্পানি থেকে আপনাকে ভেরিফিকেশন কল করা হবে। তারপর আপনার সিম অ্যাক্টিভেট হবে। কিন্তু ভার্চুয়াল সিম পাওয়ার জন্য এত কিছু করার দরকার নেই। আপনার ফেসবুক বা ওই ধরনের কোনও সোশাল নেটওয়ার্কিং অ্যাকাউন্ট থাকলেই চলবে। 






তাই জঙ্গি বা অন্যান্য দুষ্কৃতী ভুয়ো নামে সোশাল নেটওয়ার্কিং অ্যাকাউন্ট খুলে তার মাধ্যমে ভার্চুয়াল সিম কিনে ব্যবহার করছে। এভাবে জঙ্গিরা ভুয়ো নামে ভার্চুয়াল সিম ব্যবহার করায় পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলির পক্ষে তাদের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করতে সমস্যা হচ্ছে। জঙ্গিরা মোবাইল ফোনে কার সঙ্গে কী কথা বলছে তা পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যাতে ধরতে না পারে সেজন্য পুলওয়ামা হামলায় ভার্চুয়াল সিম ব্যবহার করা হয়েছিল।

ভার্চুয়াল সিম বিক্রি করে এমন কোম্পানিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল WorldSIM, Freezvon ইত্যাদি। 





টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


3 comments:

জনপ্রিয় পোস্ট