16 Dec 2018

পর্ন সাইট বন্ধ হওয়ায় সমস্যা বাড়বে

Image Credit: Pixbay

চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট একটি নির্দেশ জারি করেছিল। সেই নির্দেশে ভারত সরকারের ইলেক্ট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রককে বলা হয়েছিল ৮২৭টি পর্ন ওয়েবসাইটকে যেন ব্লক করা হয়। অর্থাৎ ওই সাইটগুলি যেন আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দেখতে না পান। 


আদালতের নির্দেশ শিরোধার্য। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই ইলেক্ট্রনিক্স ও আইটি মন্ত্রক DoT (Department of Telecom)-কে নির্দেশ দেয় আদালত যে তালিকা দিয়েছে সেই তালিকায় থাকা ৮২৭টি ওয়েবসাইটকেই যেন ব্লক করে দেওয়া হয়। DoT-র নির্দেশ মেনে জিও, এয়ারটেল সহ দেশের অন্য যে সমস্ত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থা রয়েছে সেগুলি ওই ৮২৭টি ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে।






আদালত পর্ন সাইট ব্লক করার যে নির্দেশ দিয়েছে তার পেছনে আদালতের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও চিন্তাভাবনা কাজ করছে। সেটা ঠিক, না ভুল তা নিয়ে তর্ক বিতর্কে যাওয়া আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু আদালতের এই নির্দেশের ‘টেকনিক্যাল ফলআউট’ বা কারিগরি ফলাফলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।

আমার মতে আদালতের এই নির্দেশের ফলে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার অ্যাটাক, পাসওয়ার্ড চুরি, নেটব্যাঙ্কিং-এ প্রতারণার মাধ্যমে টাকা চুরি ইত্যাদি বাড়বে। অর্থাৎ সামাগ্রিকভাবে সাইবার অ্যাটাকের পরিমাণ বাড়বে। 


কিন্তু কেন এমন আশঙ্কা করছি?


ইন্টারনেটে দুই ধরণের পর্ন সাইট রয়েছে। কিছু সাইট রয়েছে যেগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয়। এই সাইটগুলিতে গিয়ে নিখরচায় আপনি পর্নোগ্রাফি বা অ্যাডাল্ট কনটেন্ট দেখতে পারবেন। যেহেতু এই সাইটগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয় তাই সেগুলিতে বিভিন্ন কোম্পানি বিজ্ঞাপন দেয়। সেই বিজ্ঞাপনের টাকায় এই সাইটগুলি চলে। 


আর এক ধরণের সাইট রয়েছে যেগুলি অত জনপ্রিয় নয়। 


দ্বিতীয় ধরনের এই সাইটগুলি সেভাবে বিজ্ঞাপন পায় না। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই সাইটগুলিতে গিয়েও আপনি নিখরচায় পর্নোগ্রাফি দেখতে পারবেন। তাহলে এখন প্রশ্ন হল, এই দ্বিতীয় ধরণের সাইটগুলি বিজ্ঞাপনও পাচ্ছে না, আবার নিখরচায় আপনাকে পর্নোগ্রাফিও দেখাচ্ছে, তাহলে এই সাইটগুলি চলছে কী করে? 

এই সাইটগুলির উপার্জনের উৎস কী?


এই সাইটগুলির উপার্জনের উৎস হল সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য। সেই তথ্য চুরি করে সেগুলি ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে এই সাইটগুলি মোটা টাকা রোজগার করে।


কীভাবে এই সাইটগুলি তথ্য চুরি করে?


পর্নসাইটগুলিতে যে সমস্ত ভিডিয়ো থাকে সেগুলি সাধারণত নিজে থেকে প্লে হয় না। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনও ভিডিয়ো দেখতে চান, তবে সেই ভিডিয়োটির প্লে বাটনটি আপনাকে ট্যাপ বা ক্লিক করতে হবে। তারপর ভিডিয়োটি প্লে হবে। দ্বিতীয় ধরনের এই সাইটগুলিতে ভিডিয়োর প্লে বাটনের সঙ্গে গোপনে কোনও স্পাইওয়্যার বা কীলগার ভাইরাস অ্যাটাচ করা থাকে। আপনি যে মুহূর্তে প্লে বাটনটি ক্লিক বা ট্যাপ করবেন, ভিডিয়োটি প্লে হতে শুরু করবে এবং একইসঙ্গে গোপনে সেই স্পাইওয়্যার বা কীলগার ভাইরাসটি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়ে যাবে। 






স্পাইওয়্যার বা কীলগার ভাইরাস আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে ডাউনলোড হওয়ার পর সেটি গোপনে আপনার অনলাইন অ্যাক্টিভিটির উপর নজরদারি চালাতে শুরু করবে। কীলগার ভাইরাসের কাজ হল আপনি ফোনের কীপ্যাডে বা কম্পিউটারের কীবোর্ডে কোন কোন কী প্রেস করছেন সেগুলি রেকর্ড করা। এইভাবে এই ভাইরাস আপনার যে কোনও অনলাইন অ্যাকাউন্টের আইডি ও পাসওয়ার্ড সহ অন্যান্য তথ্য চুরি করবে। যেমন, আপনার ফেসবুক বা মেলের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড, নেটব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্টের আইডি, পাসওয়ার্ড, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার, কার্ডের পেছনে থাকা সিভিভি নাম্বার (যেগুলি আপনি অনলাইন ট্রানজাকশনের সময় টাইপ করেন) ইত্যাদি। 

অন্যদিকে, স্পাইওয়্যার গোপনে আপনার ব্যক্তিগত মেল, চ্যাট হিস্ট্রির স্ক্রিনশট রেকর্ড করবে, আপনার কনট্যাক্ট লিস্টে যারা রয়েছে তাদের নাম ও ফোন নাম্বার রেকর্ড করবে, আপনার অজান্তেই আপনার ফোনের ক্যামেরা ও স্পিকার অন করে আপনার ছবি তুলবে ও কথাবার্তা রেকর্ড করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

এইভাবে স্পাইওয়্যার ও কীলগার যে সমস্ত তথ্য চুরি করে, সেগুলি তারা সেই নির্দিষ্ট পর্নসাইটের সার্ভারে (বা অন্য কোনও নির্দিষ্ট সার্ভারে) গোপনে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে সেই তথ্য হ্যাকাররা ডাউনলোড করে সেভ করে রাখে নিজেদের কাছে এবং পরে সেগুলি ডার্কওয়েবে বিক্রি করে।



ভারত তৃতীয়


এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি পর্ন দেখে আমেরিকার (ইউএসএ) লোকজন, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইংল্যান্ড (ইউকে)। তৃতীয় স্থানেই রয়েছে ভারত। অর্থাৎ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটা বিশাল অংশ অনলাইনে নিয়মিত পর্ন দেখে। তাই হঠাৎ করে আদালতের নির্দেশে নির্দিষ্ট কিছু পর্ন সাইট বন্ধ করে দিয়ে ভারতে এত লোককে রাতারাতি পর্ন দেখা থেকে আটকানো যাবে না। তারা অনলাইনে সার্চ করে ঠিকই খুঁজে বের করবে কোন কোন সাইট ব্লক করা হয়নি, এবং সেই সাইটগুলিতে গিয়ে পর্ন দেখবে। আর তাতেই সমস্যা বাড়বে।

কারণ, আদালতের নির্দেশে যে সাইটগুলি ব্লক করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে অধিকাংশই ইন্টারনেটে যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং সেই সাইটগুলি বৈধভাবে ব্যবসা করে। অর্থাৎ এই সাইটগুলি বিজ্ঞাপনের আয় থেকে চলে, দর্শকদের তথ্য চুরি করে না। কিন্তু এই ধরনের সাইটগুলি অধিকাংশই ব্লক করে দেওয়ার ফলে দর্শকরা এখন দ্বিতীয় ধরনের সাইট অর্থাৎ কম জনপ্রিয় সেই সমস্ত সাইটের দিকে ঝুঁকবে যেগুলির আয়ের মূল উৎসই হল সাধারণ মানুষের তথ্য চুরি করা। আর এর ফলে বাড়বে সাইবার অ্যাটাকের সম্ভাবনা এবং ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের। সপ্তাহখানেক আগে ভারতে এসেছিলেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্ন সাইট পর্নহাব-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কোরে প্রাইস। তিনিও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক একই আশঙ্কার কথাই শুনিয়েছেন। উল্লেখ্য, পর্নহাব সাইটটিও আদালতের নির্দেশে ভারতে ব্লক করা হয়েছে। 





টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


2 comments:

  1. অনেক দিন পর আবার আপনার লেখা পেলাম । আপনার লেখা সবসময় পড়ি। ভালো থাকবেন ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন।

      Delete

জনপ্রিয় পোস্ট