3 Aug 2018

সারাদিন ফেসবুকে কাটান? এই ফিচারটি আপনাকে সতর্ক করবে

Image Credit: Pixabay

স্মার্টফোন আজ আমাদের জীবনে অনিবার্য। সকালে উঠে নিউজ পড়াই হোক কিংবা অফিসে যাওয়ার সময় ক্যাব ভাড়া করা অথবা রাতে বিছানায় শুয়ে নেটফ্লিক্সে সিরিয়াল দেখা – সবকিছুতেই এখন স্মার্টফোন। এভাবে স্মার্টফোন আমাদের জীবনকে একদিকে অনেক সহজ করেছে ঠিকই। কিন্তু অন্যদিকে অনেক জটিলতা তৈরি করেছে। 


প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কুফল

খবরের কাগজে আমরা প্রায়ই পড়ি যে, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেল লাইন পার হওয়ার সময় অথবা বাইক চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়েছে। তবে এটা হল স্মার্টফোনের কুপ্রভাবের প্রত্যক্ষ ফল। কিন্তু পরোক্ষে স্মার্টফোনের কুপ্রভাবের জেরে অনেক বেশি সংখ্যক লোকের ক্ষতি হচ্ছে। 




অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ টাইম

স্মার্টফোনে আমরা সবচেয়ে বেশি সময় খরচ করি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে। অর্থাৎ ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে। এই সাইটগুলিতে আমরা যে সময় খরচ করি তাকে দুইভাগে ভাগ করা হয় – অ্যাকটিভ টাইম এবং প্যাসিভ টাইম। 

অ্যাকটিভ টাইম

স্কুল বা কলেজ থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ ছিল না, হঠাৎ একদিন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সেই বন্ধুকে খুঁজে পেলাম। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বা সামাজিক ইশ্যুতে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলির মাধ্যমে আমরা পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের মতামত জানাতে পারি যা জনমত গঠনে সাহায্য করে। বিভিন্ন গ্রুপের মেম্বাররা বা পেজের ফলোয়াররা খেলা, সাহিত্য, সিনেমা, প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন ও মতামত বিনিময় করতে পারে। হোয়াটস্অ্যাপে ব্লাড ডোনারদের গ্রুপ রয়েছে যাঁদের সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করলে তাঁরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। দুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্যের আবেদন করে মাঝেমধ্যেই ফেসবুকে পোস্ট করা হয় বিভিন্ন সংস্থার তরফে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা যখন এই ধরনের বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে সময় খরচ করি তখন সেই সময়টাকে বলা হয় অ্যাকটিভ টাইম। মনোবিদদের মতে অ্যাকটিভ টাইম আমাদের শরীর ও মনের উপর থেকে স্ট্রেস অর্থাৎ চাপ কমায়।

প্যাসিভ টাইম

ইউটিউবে অনেক শিক্ষামূলক ভিডিয়ো রয়েছে যা আমাদের জ্ঞান বাড়ায় এবং অনেক কঠিন বিষয় সহজে বুঝতে সাহায্য করে। কিন্তু সেই সমস্ত শিক্ষামূলক ভিডিয়োগুলির তুলনায় অকাজের ভিডিয়োগুলির (দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর ভিডিয়ো, নিষিদ্ধপল্লির ভিডিয়ো, গালাগালির ভিডিয়ো ইত্যাদি) ভিউয়ারশিপ অ-নে—ক বেশি। অন্যদিকে, ফেসবুকের ক্যাচওয়ার্ড হল ‘Brings the world closer together’। অর্থাৎ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ বাড়ানো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পারস্পরিক যোগাযোগের বিষয়টি গৌণ হয়ে পড়ে আর মুখ্য হয়ে ওঠে শো-অফ অর্থাৎ ‘আমাকে দেখুন’ বিষয়টি। এর একটা অসাধারণ নাম দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক জেনা ওয়্যরথম। তিনি এই বিষয়টিকে বলেছেন ‘সাকসেস থিয়েটার’। অর্থাৎ সোস্যাল মিডিয়ায় অধিকাংশ মানুষ নিজের জীবনটাকে একটি সুন্দর সিনেমা বা নাটকের মতো করে সবার কাছে তুলে ধরে। যেমন, নামি রেস্তরাঁয় খেতে খেতে সেলফি, বিমানের সিটে বসে সেলফি, শপিংমলে কেনাকাটার সেলফি, নতুন কেনা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি ইত্যাদি। এই ধরনের ‘আমাকে দেখুন’ মার্কা অসংখ্য ছবিতে অনেকেরই ফেসবুক টাইমলাইন, ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটস্অ্যাপ ভরতি। আর তাঁদের অনলাইন ফ্রেন্ডরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করে সেই সমস্ত ছবি দেখে, ‘লাইক’ দেয় এবং ইমোজি বা কমেন্ট পোস্ট করে। 

মনোবিদরা বলছেন, এভাবে সোশ্যাল নেটওয়ারর্কিং সাইটে অনবরত অন্যদের ‘ভালো থাকা’-র ছবি দেখলে মনের উপর চাপ বাড়ে। মানুষের মধ্যে ইর্ষা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। আমার বন্ধু গাড়ি কিনেছে, শপিংমলে গিয়ে দামি জামাকাপড় কিনছে কিন্তু আমি পারছি না – এজন্য ইর্ষা। আমার বন্ধুরা সবাই ভালো রয়েছে কিন্তু আমার জীবনটা অতটা ভালো নয় — এই বোধ থেকে জন্ম নেয় নিরাপত্তহীনতা। দুটোই মনের উপর প্রচণ্ড চাপ বাড়ায় আর তার জেরে ক্ষতি হয় শরীরের।
এইভাবে ইউটিউবে হাবিজাবি ভিডিয়ো দেখে, ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ইনস্টাগ্রামে অন্যদের ‘ভালো থাকা’ দেখে আমরা যে সময়টা নষ্ট করি তাকে বলে প্যাসিভ টাইম।

ফেসবুকের উদ্যোগ

আমরা যত বেশি ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে সময় কাটাবো কোম্পানি হিসেবে ফেসবুকের তত লাভ। কিন্তু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে আমরা যে সময়টা খরচ করি তার বেশিরভাগটাই প্যাসিভ টাইম। এর জেরে আমাদের শরীর ও মনের যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুককে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তাই এবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে একটি নতুন ফিচার অ্যাড করা হয়েছে যা অনেকটা ইউটিউবের ‘রিমাইন্ড মি টু টেক এ ব্রেক’-এর মতো।

টাইম ড্যাশবোর্ড

Image Credit: Jane Manchun Wong
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের এই নতুন ফিচারের মাধ্যমে আপনি
জানতে পারবেন দিনের কতটা সময় আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করছেন। এই ফিচারটি সাপ্তাহিক ও দৈনিক হিসেব দেবে। অর্থাৎ আপনি জানতে পারবেন গত এক সপ্তাহে আপনি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে মোট কতটা সময় এবং দৈনিক গড়ে কতটা সময় খরচ করেছেন। আপনি এই ফিচারের সাহায্যে টাইম লিমিটও সেট করতে পারবেন। ধরুন, আপনি টাইম লিমিট সেট করলেন ৪৫ মিনিট। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ৪৫ মিনিটের বেশি সময় খরচ করার পর এই ফিচারটি আপনাকে নোটিফিকেশন দেবে। (সঙ্গের ছবিটি দেখুন) 

সেটিংস

এই ফিচারটি সেট করার জন্য ফেসবুকের অ্যাকাউন্টে লগইন করে সেটিংসে যান। তারপর ক্লিক বা ট্যাপ করুন Your time on facebook। ইনস্টাগ্রামের ক্ষেত্রে সেটিংসে গিয়ে ক্লিক বা ট্যাপ করুন Your activity। 

ফিচারটি মাত্র কয়েকদিন আগে আমেরিকায় চালু হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে আমাদের দেশেও চালু হবে। ফেসবুকের দাবি, এই ফিচারের সাহায্যে মানুষ যখন জানতে পারবে তারা দিনের কতটা সময় নষ্ট করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তখন তারা নিজেরাই সতর্ক হবে।


টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন।




2 comments:

  1. Active ও Passive Time এর ব্যাপারটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। সত্যিই এটা দারুন একটা তথ্য। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। ভালো থাকবেন।

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট