21 Jun 2018

ঘরে বসেই গুগলের সাহায্যে ব্যাবসা

ফ্ল্যাশব্যাক

আমি তখন স্কুলের নিচু ক্লাশে পড়ি। স্কুলের উলটো দিকে রাস্তার ওপারে একটা মস্ত বড় বিল্ডিং। সেই বিল্ডিংয়ের উপর তলায় লোকজন থাকে, আর নীচের তলায় সারি সারি দোকান। অনেক রকম দোকান — কোনওটাতে গাড়ির টায়ার বিক্রি হয়, কোনওটাতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, আবার কোনওটাতে বিক্রি হয় বন্দুক।


Photo Credit : Pixabay


কতগুলি দোকানঘর অবশ্য মাঝেমধ্যে বন্ধই পড়ে থাকত।
একদিন দেখলাম তেমনই একটা বন্ধ ঘর খুলে এক মাঝবয়সী লোক পরিষ্কার করছে। বুঝলাম, নতুন কোনও দোকান খুলবে সেই ঘরটাতে। কীসের দোকান? কৌতূহল হল। কিন্তু লোকটাকে জিজ্ঞেস করতে সাহস হল না। লোকটা বেশ গম্ভীর টাইপ। পরদিন দেখলাম ঘরটা আবার বন্ধ। চারদিন এভাবেই কেটে গেল। প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে ক্লাশের জানালায় চোখ চলে যেত। জানালা পেরিয়ে রাস্তার ওপারেই ঘরটা – দরজায় তালা ঝুলছে।




পাঁচদিনের মাথায় স্কুলে গিয়ে দেখলাম দরজা আবার খুলেছে। স্কুলের জানালা দিয়ে ঠিক স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে লোকটা যে ভেতরে বসে কিছু একটা করছে, সেটা বোঝা যাচ্ছিল। গুটি গুটি পায়ে রাস্তা পেরিয়ে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। একি! দোকান কোথায়? ফাঁকা ঘরে লোকটা মেঝেতে বসে কতগুলি গাছের ডাল নিয়ে কী সব যেন করছে। ধ্যাত! ভাবলাম নতুন কোনও দোকান খুলেছে, তা তো নয়, কী সব হাবিজাবি কাণ্ড! স্কুলে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু কৌতূহল হল। কী করছে লোকটা? স্কুল শুরুর ঘণ্টা বাজতে এখনও কিছুটা দেরি। তাহলে একটু দাঁড়িয়ে দেখাই যাক না ব্যাপারটা কী।

লোকটা কতগুলি আকাবাঁকা সরু গাছের ডাল একমনে শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষছে। মাঝেমধ্যে কতগুলি ডাল আবার ছোটো একটা ছুরি দিয়ে চাঁচছে — ঠিক যেমন ছোটোবেলায় বাবাকে দেখতাম ছুরি দিয়ে পেনসিল কাটতে। লোকটা কাজ করতে করতে আমার দিকে তাকাল। কিছু বলল না। আমিও নিরুত্তর। বেশ কিছুক্ষণ নির্বাক দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গেলাম।



পরদিন আবার গেলাম। সেই একই দৃশ্য। মেঝেতে একরাশ ডালপালার মাঝখানে বসে তিনি একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। সেদিনও চোখে চোখ হল, কথা হল না। তৃতীয় দিন দেখলাম ঘরের দেওয়ালে কতগুলি র‍্যাক লাগানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলিতে কোনও জিনিসপত্র নেই — বেবাক ফাঁকা। লোকটার সামনে বার্নিশের কৌটো। একটা গাছের ডালকে খুব যত্ন করে বার্নিশ দিয়ে পালিশ করছে। চোখ না তুলেই আচমকা প্রশ্ন করল, ‘কোন ক্লাশে পড়া হয়?’

আমাকে জিজ্ঞেস করছে নাকি? এদিক ওদিক তাকালাম। নাহ্, আমি ছাড়া আশপাশে তো আর কেউ নেই। ‘ক্লাশ ফাইভ’ — কিছুটা ভয়ে ভয়েই উত্তর দিলাম।

বেশ কিছুক্ষণ আবার দুই তরফেই নীরবতা। এবার জড়তা কাটিয়ে কিছুটা বাধো বাধো গলায় প্রশ্নটা করেই ফেললাম 

— এটা কীসের দোকান?
— এটা দোকান নয়, স্টুডিয়ো।
— স্টুডিয়ো? ফোটো তোলা হয়? কিন্তু ক্যামেরা কোথায়?
— সব স্টুডিয়োতে ক্যামেরা থাকে না। যেখানে বসে ছবি আঁকা হয়, মূর্তি তৈরি করা হয় সেটাকেও স্টুডিয়ো বলে।
— ওহ্,তাই!
— হুম।
— কিন্তু মূর্তি গড়তে তো মাটি লাগে।
— সব সময় মাটি লাগে না। পাথর দিয়ে, চা গাছের ডাল দিয়েও মূর্তি তৈরি করা যায়।
— এটা কী পুতুল?

— কী মনে হচ্ছে? লোকটা যে ডালটাকে এতক্ষণ বার্নিশ দিয়ে ঘষছিল, সেটা আমার চোখের সামনে তুলে ধরল।
— বুঝতে পারছি না। আমি নিরাশ হয়ে মাথা ঝাঁকালাম।
লোকটা মুচকি হেসে এবার ডালটাকে নাইনটি ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে ফের আমার সামনে ধরল – দ্যাখো তো এবার কিছু বোঝা যাচ্ছে কি না?
— হ্যাঁ, হ্যাঁ! আমি উৎসাহে মাথা নাড়লাম। ‘মনে হচ্ছে একটা লোক
  গালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে রয়েছে।’
— ঠিক ধরেছ। এই পুতুলটার নাম কী জানো?
— কী?
— লোনলি সোল
— মানে?
— নিঃসঙ্গ সত্ত্বা।
— তার মানে পুতুলটার কেউ নেই?
— হয়তো আছে, তবুও সে একা। আমরা তো সবাই আসলে তাই। বড়ো হও, তখন বুঝবে।

ফিরে আসছিলাম, পিছু ডাকে থমকে ঘুরে দাঁড়াতে হল।
— ভাইটির নামটা তো জানা হল না।
— আমার নাম ইন্দ্রনীল দত্ত
— আমি অর্চিষ্মান মিত্র। সেই প্রথম লোকটা হাসল। সেই দিন থেকে আমি আর অর্চিদা বন্ধু হয়ে গেলাম। দুই অসমবয়সী বন্ধু। প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে অর্চিদার স্টুডিয়োর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাজ দেখা আমার রুটিন হয়ে দাঁড়াল। এইভাবে প্রায় এক বছর কেটে গেল। ইতিমধ্যে স্টুডিয়োর দেওয়ালে ফাঁকা র্যা কগুলি নানা মাপের, নানা আকৃতির কাঠের পুতুলে ভরে উঠেছে। একদিন দেখলাম কাজটাজ বন্ধ করে অর্চিদা গুম মেরে বসে রয়েছে। 
— কী হয়েছে অর্চিদা?
— স্টুডিয়োটা বন্ধ করে দিচ্ছি ইন্দ্র।
— কেন?
— উত্তরবঙ্গের এই ছোটে শহরে আমার কাজের কদর কেউ করে না। আমার এক বন্ধু বোম্বে (তখনও মুম্বই হয়নি) থাকে। সে বলছিল, বড়ো বড়ো শহরে ঘর সাজানোর জন্য এই ধরনের কাঠের শোপিস নাকি প্রচুর দামে বিক্রি হয়। কিন্তু আমার তো আর দিল্লি, বোম্বে গিয়ে শোরুম খোলার সামর্থ্য নেই। এদিকে, উত্তরবঙ্গে বসে কাজ করলে বড়ো বড়ো শহরের ক্রেতারাই বা কী করে আমার কাজের কথা জানতে পারবে। তাই ঠিক করেছি স্টুডিয়োটা বন্ধ করে অন্য কোনও ব্যাবসা করব।

অর্চিদার দোকান থুড়ি স্টুডিয়োটা সত্যি সত্যিই একদিন বন্ধ হয়ে গেল। অর্চিদাও কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তাঁকে জলপাইগুড়িতে তারপর আর কখনও দেখিনি। 

কিছু তথ্য


ভারতবর্ষে বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন প্রায় ৫.১ কোটি। দেশের অর্থনীতিতে মোট উৎপাদনের (GDP) ৩৭ শতাংশই আসে এই প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলির মাত্র ৩২ শতাংশের সঙ্গে ক্রেতারা অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। তার মানে বাকি ৬৮ শতাংশ এখনও অফলাইন অর্থাৎ নেট দুনিয়ার বাইরে। সম্প্রতি গুগল ভারতবর্ষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার উপর (SMB – Small and Medium Business)-এর উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। সমীক্ষার নাম ছিল ‘Impact of Internet and Digitization on SMBs in India’। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৩২ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক সংস্থা ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি ব্যাবসা করার পাশাপাশি অনলাইনেও ব্যাবসা করছে। যারা অনলাইনে ব্যাবসা করছে, তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশই নিজের শহরের পাশাপাশি দেশের অন্য শহরের ক্রেতাদেরও পণ্য বিক্রি করতে পারছে। যার ফলে তাদের ব্যাবসা অফলাইন সংস্থাগুলির তুলনায় প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। শুধু তাই নয়, ওই সমস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনলাইন সংস্থাগুলি অফলাইন সংস্থাগুলির তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে।
Photo Credit : Pixabay

কিন্তু সমস্যা হল কোনও ছোটো শহরের ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির অনলাইনে ব্যাবসা করার অনেক সমস্যা। তাই ইচ্ছা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা সাত-পাঁচ ভেবে পিছিয়ে আসে। কারণ ওয়েবসাইট তৈরি করা, সেটাকে মেইনটেইন করা, সার্ভার ভাড়া করা ইত্যাদি শুধু খরচ সাপেক্ষ নয়, ঝামেলাও অনেক। কারণ ওই কাজগুলি সেই ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির হয়ে কারা করে দেবে, কীভাবে করে দেবে, এজন্য কোন কোন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে সেইসব তথ্য কোনও ছোটো শহর বা মফস্বলের ব্যবসায়ীর পক্ষে জানা কার্যত অসম্ভব। পাশাপাশি খরচের ব্যাপারটাও যে ছোটো ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহ করে সেটা তো আগেই বলেছি। 

কিন্তু এবার দেশের সেই ৬৮ শতাংশ SMB যারা এখনও অফলাইন, তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে গুগল। তাদের এই উদ্যোগের নাম ডিজিটাল আনলকড্। অনলাইনে ব্যবসায় যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে, তার দরজা খুলে দেবে অর্থাৎ আনলক করবে এই উদ্যোগ, তাই গুগল তাদের এই বিশেষ উদ্যোগের নাম রেখেছে ডিজিটাল আনলকড্।

৪ জানুয়ারি, ২০১৭

গুগলের গ্লোবাল চিফ এক্সিকিউটিভ সুন্দর পিচাই ভারতে লঞ্চ করলেন ডিজিটাল আনলকড্ পরিষেবা। এই উদ্যোগের পেছনে গুগলের যে নিজস্ব আর্থিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু পিচাই ডিজিটাল আনলকড্ লঞ্চ ইভেন্টে যেটা বলেছিলেন সেটাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বক্তব্যের সারমর্ম ছিল, ইন্টারনেট এমন এক গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম যার সাহায্যে এখন বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের যে কেউ হয়ে উঠতে পারেন সফল ব্যবসায়ী বা উদ্যোগপতি। আপনি হয়তো খুব সুন্দর গ্রিটিংস কার্ড তৈরি করেন কিংবা বাজারে যা দাম তার তুলনায় অনেক কম দামে তৈরি করেন টেডিবিয়ার জাতীয় সফট্ টয়। তাহলে ডিজিটাল আনলকড্ আপনার কাছে দেশ বিদেশের ক্রেতাদের হাজির করবে। 


কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য অর্থাৎ অনলাইন ব্যাবসার জন্য কিছু সচেতনতাও প্রয়োজন। সেই সচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছে গুগল। এজন্য তারা অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে নিয়মিত ওয়ার্কশপ করছে। আগ্রহীরা এই ওয়ার্কশপ করার জন্য গুগলের কাছে আবেদন করতে পারবেন। এই ওয়ার্কশপে শেখানো হবে অনলাইন ব্যাবসার প্রয়োজনীয়তা কী, কীভাবে নিজের তৈরি প্রোডাক্ট অনলাইনে ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে হবে, গুগল সার্চের মাধ্যমে ক্রেতারা যাতে সহজেই আপনার তৈরি প্রোডাক্টটি খুঁজে পান সেটা কীভাবে নিশ্চিত করবেন, কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজের সংস্থার পরিচিতি বাড়াবেন ইত্যাদি। এজন্য ২০২০ সালের মধ্যে গুগল সারা দেশের ৪০টি শহরে ৫০০০ ওয়ার্কশপ করবে। একাজে গুগলকে সাহায্য করবে FICCI (Federation of Indian Chambers of Commerce & Industry) এবং India School of Business (হায়দরাবাদ)। যাঁরা এই ওয়ার্কশপে অংশ নেবেন তাঁদের বিশেষ শংসাপত্র দেওয়া হবে।

যাঁরা অনলাইনের মাধ্যমে এই বিষয়গুলি জানতে চান, তাঁদের জন্য গুগল তৈরি করেছে বিশেষ অ্যাপ প্রাইমার (Primer), যা গুগলের প্লে স্টোরে এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যাবে।

অনলাইনে ব্যাবসা করার জন্য যে সমস্ত টুল বা সফটওয়্যার ও অন্যান্য সুবিধা প্রয়োজন সেগুলির অধিকাংশই ফ্রিতে এবং কম খরচে একসঙ্গে পাওয়া যাবে ডিজিটাল আনলকড্-এর ওয়েবসাইটে। এই ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের টাইমলাইনে ‘ডাউনলোড’ পোস্টে রয়েছে। ডিজিটাল আনলকড্-এর সাইটে আপনি ফ্রিতে পাবেন আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট তৈরির জন্য বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য ও পরামর্শ। এছাড়া সেখানে রয়েছে GSuit, যার মাধ্যমে আপনি নিজের সংস্থার জন্য প্রফেশনাল ইমেল অ্যাড্রেস ও কমপক্ষে ৩০ GB ক্লাউড স্টোরেজ পাবেন। আপনার সংস্থার অনলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য পাবেন বিভিন্ন টুল। এছাড়া রয়েছে ‘লোকাল ও সোশ্যাল টুল’, যার সাহায্যে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ও গুগল ম্যাপ আপনার সংস্থার পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করবে। ধরুন কোনও ক্রেতা আপনার সংস্থার নাম টাইপ করে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করল, তখন ‘লোকাল ও সোশ্যাল টুল’ গুগল সার্চ রেজাল্ট ও গুগল ম্যাপের সাহায্যে ক্রেতাকে দেখিয়ে দেবে দেশের কোন শহরে কোন রাস্তায় আপনার সংস্থাটি রয়েছে, সংস্থার মেল আইডি, ফোন নম্বর কী, দিনের কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত আপনার সংস্থা খোলা থাকে, কীভাবে অনলাইনে অর্ডার দিতে হবে ইত্যাদি তথ্য।

অনলাইনে ব্যাবসা করার জন্য অপরিহার্য হল ডিজিটাল লেনদেন। ডিজিটাল আনলকড্-এ একাধিক টুল রয়েছে যার সাহায্যে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে COD অর্থাৎ ক্যাশ অন ডেলিভারি, ডেবিট বা ক্রেটিড কার্ডের মাধ্যমে কিংবা থার্ড পার্টি ওয়ালেটের (যেমন পেটিএম) মাধ্যমে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা ক্রেতাকে দিতে পারবেন।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল রয়েছে যার নাম গুগল অ্যানালিটিক্স। এর সাহায্যে আপনি জানতে পারবেন যাঁরা আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করছে তাঁদের পছন্দ-অপছন্দ, বয়স, তাঁরা কোন এলাকার বাসিন্দা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য যা আপনার ব্যাবসার জন্য অপরিহার্য। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আপনার হয়ে ক্রেতা সমীক্ষার কাজটিও গুগল করে দেবে।

১০ জানুয়ারি, ২০১৮

অনিন্দিতা সায়েন্সের স্টুডেন্ট। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল। কিন্তু মাস্টার্স করল না। মাথায় ভূত চাপল ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কোর্স করবে। সেই কোর্সও কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে কয়েক বছর হল। কয়েক মাস আগে ফোনে ওর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমি বললাম, ‘অনিন্দিতা, তুমি যে সমস্ত জামাকাপড় বানাও সেগুলি হুগলির উত্তরপাড়ায় তোমার বাড়ির আশপাশে কয়জন লোক কিনবে? তার চেয়ে কলকাতায় কোনও প্রাইম লোকেশনে দেখো কোনও বুটিকের ব্যবস্থা করতে পারো কিনা।’

অনিন্দিতা হেসে উলটে প্রশ্ন করল, ‘কলকাতায় অত টাকা খরচ করে বুটিক খুলতে যাব কোনও দুঃখে। ডিজিটাল আনলকড্-এর সাহায্যে আমার বুটিক তো এখন অনলাইনে। লিঙ্কটা পাঠাচ্ছি, ক্লিক করে দেখে নাও।’

অনিন্দিতার পাঠানো সেই লিংকে ক্লিক করে আমি অবাক! এতো বুটিক নয়, রীতিমতো অনলাইন ফ্যাশন স্টোর। একদিকে অনিন্দিতার তৈরি নানা মাপের, নানা রংয়ের জামাকাপড়ের ছবি। অন্যদিকে রয়েছে অর্ডার দেওয়ার এবং পেমেন্টের অপশন। এছাড়া রয়েছে কনট্যাক্ট নম্বর, মেল আইডি, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার লিঙ্ক। সাইটের নীচের দিকে রয়েছে সেই সমস্ত ক্রেতাদের মতামত যাঁরা ইতিমধ্যে অনিন্দিতার অনলাইন স্টোর থেকে জামাকাপড় কিনেছেন। ক্রেতাদের সেই লিস্টে যেমন কলকাতার অনেকে রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর অনেকে। 


অনিন্দিতার সেই ওয়েবসাইট দেখতে দেখতে আমার অবধারিতভাবে মনে পড়ে গেল অর্চিদার কথা। লোকটার জন্য কষ্ট হচ্ছিল খুব। 

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন


পড়ুন টেকনোবিটসের অন্যতম জনপ্রিয় পোস্ট

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট