20 Jun 2018

প্রোগ্রামিং না জেনেও গুগলের সাহায্যে অ্যাপ তৈরি করুন

অ্যাপ তৈরি করতে চান? কিন্তু সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান নেই? জানেন না কাকে বলে কোডিং? সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে অ্যাপ তৈরি করতে হলে প্রচুর টাকা প্রয়োজন, অত টাকাও আপনার কাছে নেই? কুছ পরোয়া নেই।
Image Credit : Pixabay

গুগল আপনাকে সাহায্য করতে তৈরি। সম্প্রতি গুগল লঞ্চ করেছে তাদের একটি নতুন ফিচার। যার নাম গুগল অ্যাপ মেকার। এই ফিচারের সাহায্যে আপনি সহজেই প্রয়োজনীয় অ্যাপ তৈরি করতে পারবেন।


প্রথমে বলি কেন গুগল হঠাৎ এই ফিচারটি চালু করল।


এর কারণ অনলাইন বিজনেস। সমীক্ষা ও পরিসংখ্যান বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম নামি অনলাইন পোর্টাল স্ট্যাটিস্টার (statista) রিপোর্ট অনুসারে ২০১৮ সালের শেষে ভারতে প্রায় ৩০ কোটি লোক স্মার্টফোন ব্যবহার করবে। গোটা বিশ্বে এই সংখ্যাটা প্রায় ২৫০ কোটি। সুতরাং আগামী দিনে অনলাইনে ব্যাবসা যে দেশের অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যে আমরা অনলাইন ব্যবসায় আমাজন, ফ্লিপকার্টের মতো বড় বড় সংস্থাকেই দেখেছি। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যখন আমার, আপনার শহরের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলিও অনলাইন ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।




খুব সহজ একটা উদাহরণ দেই

ধরুন, আমার পাশের বাড়ির হারুদা। হারুদা বেশি শিক্ষিত নয়। পুঁজিও বেশি নেই। বয়স্ক লোক। একটা পুরানো ট্যাক্সি আছে। সেটা চালিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে। জলপাইগুড়িতে এখনও ওলা, উবার আসেনি। আমার যখন প্রয়োজন হয় তখন হারুদাকে ফোন করে ট্যাক্সি ভাড়া করি। একদিন আমি জলপাইগুড়ির বাড়ি থেকে বাগডোগরা এয়ারপোর্টে যাচ্ছি। রাস্তায় কথায় কথায় হারুদাকে বললাম, ‘দাদা, ব্যাবসা কেমন চলছে?’ হারুদা বেজার মুখে উত্তর দিল, ‘মোটেই ভালো নয়। এই তোমার মতো কিছু বাঁধাধরা কাস্টমার রয়েছে বলে কোনও রকমে চলে যাচ্ছে। আজকাল প্রতিদিনই এই লাইনে নতুন নতুন গাড়ি নামছে। কম্পিটিশন বাড়ছে।’ আমি বললাম, ‘হারুদা, কাস্টমারকে তুমি যদি একই দামে অন্যদের থেকে বেশি পরিষেবা দাও, তবেই তোমার ব্যাবসা বাড়বে। এই যেমন, ধর একটা লোক ট্যাক্সি ভাড়া করবে, সেজন্য তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্ট্যান্ডে আসতে হবে। সেখানে যাওয়া মাত্র তাঁকে নিয়ে একদল ড্রাইভার টানাটানি শুরু করবে। এক একজন এক একরকম ভাড়া বলবে। অথচ সেই লোকটা যদি তাঁর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই ট্যাক্সিটা ভাড়া করতে পারত তাহলে অনেক সুবিধা হত। আমি বলি কী, তুমি একটা মোবাইল অ্যাপ বানিয়ে নাও। সেটার সাহায্যে তাহলে লোকে বাড়িতে বসেই তোমার ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারবেতখন দেখবে তোমার ব্যাবসাও বাড়ছে

হারুদা হেসে আমার কথা উড়িয়ে দিল। বলল, ‘ধুর, ওই সব অ্যাপ-ট্যাপ অনেক টাকাপয়সার ব্যাপার। ওসব বড় বড় কোম্পানির জন্য। তুমি যে কী বল!’

সেইদিন আমাদের আলোচনার ওখানেই ইতি হয়েছিল। আমারও মনে হয়েছিল, কথাটা আমি বোধহয় সত্যি বোকার মত বলে ফেলেছি। ঠিকই তো, কোনও সফটওয়্যার কোম্পানিকে দিয়ে অ্যাপ তৈরি করা, তার মেইনটেনান্স, ক্লাউড স্টোরেজ ভাড়া নেওয়া ইত্যাদির জন্য প্রচুর খরচ। হারুদার পক্ষে সে সব সম্ভব নয়।




অ্যাপ মেকার ফিচার

আমাদের দেশের এই হারুদাদের জন্য গুগল নিয়ে এসেছে তাদের এই নতুন অ্যাপ মেকার ফিচার। এতে শুধু যে হারুদার স্বার্থ পূরণ হবে তা নয়, গুগলেরও স্বার্থ রয়েছে অবশ্যই। গুগলের হিসেবটা হল, যত বেশি ছোট ছোট সংস্থা অনলাইন ব্যবসায় আসবে, সেই সংস্থাগুলি তাদের ব্যাবসা বাড়ানোর জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিতে গুগলকে তত বেশি টাকা দেবে। এর ফলে গুগলের আয় বাড়বে। তবে শুধু ব্যবসায়ী সংস্থাগুলিই নয়, গুগলের এই অ্যাপ মেকার ফিচারের সাহায্য নিতে পারে ছাত্র থেকে ব্যবসায়ী যে কেউ। কোনও ছাত্র যদি মনে করে শিক্ষামূলক কোনও অ্যাপ তৈরি করবে, তাহলে গুগলের অ্যাপ মেকারের সাহায্যে সে সহজেই সেই অ্যাপ বানিয়ে ফেলতে পারে। কোনও শিক্ষক যদি মনে করেন, তিনি অনলাইনে ছাত্র পড়াবেন, নোটস, সাজেশন ইত্যাদি দেবেন এবং তার বদলে অনলাইনেই তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেবেন, তাহলে সেজন্যও তিনি নিজস্ব একটি অ্যাপ গুগলের এই ফিচারের সাহায্যে সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন।

কীভাবে অ্যাপ তৈরি করবেন?

গুগল অ্যাপ মেকার ফিচারের সাহায্যে খুব সহজেই কোনও কোডিং স্কিল অর্থাৎ প্রোগ্রামিং নলেজ ছাড়াই অ্যাপ তৈরি করে ফেলা সম্ভব। তবে এজন্য আপনাকে প্রথমে গুগলে একটি জিস্যুট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই অ্যাকাউন্ট খোলার লিঙ্ক টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের ‘ডাউনলোড’ পোস্টে (এই পোস্টটি টেকনোবিটসের টাইমলাইনে একদম উপরেই রয়েছে) পাবেন। এছাড়া গুগল সার্চ বক্সে GSuit টাইপ করলেই পেজের লিঙ্ক গুগল শো করবে। জিস্যুট অ্যাকাউন্টের একাধিক ক্যাটেগরি রয়েছে, বেসিক, বিজনেস, এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি। আপনি কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে চান, সেটা আগে ঠিক করে নিন।

গুগলের জিস্যুট

গুগলের জিস্যুটে অ্যাকাউন্ট ওপেন করার পর আপনি অ্যাপ মেকার ফিচারে যান। সেখানে দেখবেন অ্যাপ তৈরির জন্য গুগলের তৈরি একাধিক প্রয়োজনীয় রেডিমেট টুল রয়েছে। যেমন, সেখানে পাবেন রেডিমেড অ্যাপ টেমপ্লেট, রেডিমেড অ্যাপ ইউজার ইন্টারফেস ইত্যাদি। এর সঙ্গে প্রতি মাসে আপনি যদি গুগলকে মাত্র ১৫০ টাকা করে দেন, তাহলে পাবেন ৩০ GB ক্লাউড স্টোরেজ যা আপনার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাবসা করার ক্ষেত্রে অপরিহার্য

ভাবছি, এবার জলপাইগুড়িতে ফিরে হারুদাকে বলব, ‘দাদা, তোমার আর কোনও চিন্তা নেই। এবার তুমি নিশ্চিন্তে অ্যাপ তৈরি করতে পারবে।

শুধু গুগল নয় আরও একটি পদ্ধতিতে আপনি কোনও প্রোগ্রামিং নলেজ ছাড়াই অ্যাপ তৈরি করতে পারবেন এবং সেটি প্লে স্টোর বা আমাজন অ্যাপ স্টোরে পাবলিশও করতে পারবেন। কীভাবে সেটা করবেন জানতে হলে ক্লিক করুনএই লিংকে

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট