যে মেল নিজে থেকেই ডিলিট হবে

গুগল সম্প্রতি তাদের জিমেলে একাধিক নতুন ফিচার এনেছে। 

Photo credit : Pexels

শুধু নতুন ফিচার আনাই নয়, জিমেলের ইনবক্স ইন্টারফেসও এখন আর আগের মতো নেই, সেটাও পালটে ফেলেছে গুগল। প্রায় পাঁচ বছর পর গুগল তাদের অন্যতম বড় প্রোডাক্ট জিমেলে একসঙ্গে এত চেঞ্জ নিয়ে এল।

⇨ নতুন জিমেল কীভাবে এনাবেল করবেন?

প্রথমে বলি কীভাবে নতুন জিমেল ইউজার ইন্টারফেস এবং ফিচার এনাবেল করবেন। ডেস্কটপ কম্পিউটারে প্রথমে নিজের জিমেল অ্যাকাউন্টে সাইনইন করুন। এবার স্ক্রিনের উপর ডানদিকে গিয়ার আইকনে ক্লিক করুন। গিয়ার আইকনে ক্লিক করার পর একটি মেনু লিস্ট ওপেন 

The image is a property of teknowbits.blogspot.com

হবে। সেই লিস্টের একেবারে উপরে রয়েছে ‘Try the new Gmail’ অপশন। সেই অপশনে ক্লিক করুন। কয়েক মিনিট পর আপনার ডেস্কটপে জিমেলের নতুন ইন্টারফেস শো করবে।

এই নতুন ইন্টারফেসে প্রথমেই যে বৈশিষ্টটি আপনার চোখে পড়বে সেটি হল ডেস্কটপে বাঁ দিকের প্যানেলে Compose বাটনটি। এটি জিমেলের আগের ইন্টারফেসের তুলনায় অনেকটাই বড় এবং পাশে একটি রঙিন ক্রস রয়েছে।

এবার ডেস্কটপের ডান দিকের প্যানেলে একাধিক নতুন বাটন আপনার চোখে পড়বে। যেমন, ‘Calendar’, ‘Keep’ এবং ‘Tasks’। এছাড়া সেখানে দেখতে পাবেন একটি প্লাস সাইন। সেটিতে ক্লিক করলে একটি নতুন উইনডো ওপেন হবে। সেখানে রয়েছে একাধিক অ্যাডঅন অর্থাৎ অ্যাপ, যেগুলির সাহায্যে আপনি জিমেলে নানা বিশেষ সুবিধা পাবেন যেমন, আপনি যাঁকে মেল পাঠিয়েছেন, তিনি সেই মেলটি কবে কখন ওপেন করে পড়েছেন তা জানতে পারবেন, কিংবা কারও মেল পেয়েছেন কিন্তু উত্তর দেওয়ার সময় নেই, আপনার হয়ে অ্যাডঅন রিপ্লাই দিয়ে দেবে ইত্যাদি।

ইনবক্সের মেল লিস্টে নির্দিষ্ট কোনও মেলের উপর যখন মাউজের কার্সার রাখবেন তখন মেলের পাশে চারটি অপশন শো করবে। সেগুলি হল ‘Archive’, ‘Delete’, ‘Mark as read’ এবং ‘Snooze’। প্রথম তিনটি অপশন আগের ইন্টারফেসেও ছিল। কিন্তু ‘Snooze’ অপশনটি নতুন। ধরুন আপনি কোনও মেল পেলেন, কিন্তু সেই মুহূর্তে আপনার হাতে সময় নেই মেলটির উত্তর দেওয়া। ঠিক করলেন যে, পরে উত্তর দেবেন। কিন্তু অনেক সময় আমরা পরে উত্তর দিতে ভুলে যাই। এই সমস্যার সমাধান করবে ‘Snooze’ অপশন। এই অপশনে ক্লিক করলে আপনি সেই বিশেষ মেলটিকে কত ঘণ্টা বা কতদিনের জন্য ‘Snooze’ করবেন তা সিলেক্ট করতে পারবেন। ধরুন আপনি ঠিক করলেন আপনি অফিস থেকে বাড়ি ফিরে রাত ৯টা নাগাদ মেলটির উত্তর দেবেন। সেক্ষেত্রে ‘Snooze’ অপশনের মাধ্যমে রাত ৯টা সিলেক্ট করলে মেলটি আপনার ইনবক্স থেকে তখনকার মতো মুছে যাবে কিন্তু ঠিক রাত ৯টা নাগাদ সেই মেলটি ফের আপনার ইনবক্সে আবার শো করবে এবং আপনাকে উত্তর দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে।

এছাড়া আরও একটি নতুন ফিচার জিমেলে অ্যাড করা হয়েছে। সেটি হল ‘Nudge’। এই ফিচারটি AI বেসড। অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে এই ফিচারটি কাজ করে। ধরুন আপনার বন্ধুর পাঠানো একটি মেল সাত দিন হল ইনবক্সে এসে পড়ে রয়েছে কিন্তু আপনি উত্তর দেননি। সেক্ষেত্রে এই ফিচারটি ইনবক্সের লিস্টে সেই মেলের পাশে মেসেজ শো করবে — ‘Received 7 days ago. Reply?’। কিংবা ধরুন, কাউকে সাত দিন আগে মেল পাঠিয়েছেন, কিন্তু এখনও কোনও রিপ্লাই পাননি, সেক্ষেত্রে এই ফিচারটি আপনার সেন্ট মেলের পাশে মেসেজ শো করবে — ‘Sent 7 days ago. Follow up?’

আগামী দিনে কম্পিউটার টেকনোলজিতে সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে AI (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা মেশিন লার্নিং টেকনোলজি। যে টেকনোলজির সাহায্যে কম্পিউটার আপনি অনলাইনে যে যে কাজ করেন তা খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে জেনে নেবে আপনার পছন্দ-অপছন্দ, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি এবং সেই ভাবে আপনাকে পরিষেবা দেবে। নতুন জিমেল ইন্টারফেসে ‘Nudge’ ফিচারটি সেই টেকনোলজির একটি সামান্য উদাহরণ মাত্র।

আরও একটি গুরত্বপূর্ণ সিকিউরিটি ফিচার নতুন জিমেল ইন্টারফেসে রয়েছে। যদি আপনার ইনবক্সে আসা কোনও মেলে ভাইরাস রয়েছে বা সন্দেহজনক লিঙ্ক রয়েছে বলে গুগলের সিকিউরিটি ফিচার মনে করে, তা হলে সেই মেল ওপেন করতে গেলে লাল রঙে ওয়ার্নিং মেসেজ শো করবে — ‘This message seems dangerous’ এবং সেই ওয়ার্নিংয়ের নীচে মেলটি ডিলিট করার জন্য ‘Delete now’ বাটন থাকবে।

নতুন জিমেল ইন্টারফেসের যে ফিচারটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি হইচই হচ্ছে বা যে ফিচারটি অত্যন্ত বিতর্কিত (কেন বিতর্কিত, কেন হইচই হচ্ছে, সেটা পরে বলছি) তা হল এর ‘Confidential mode’ ফিচার।

⇨ এই ফিচারটির বৈশিষ্ট কী?

এই মোড ব্যবহার করে আপনি যদি কাউকে কোনও মেল পাঠান, তবে সেই ব্যক্তি মেলটি পড়তে পারবেন, কিন্তু মেলটি কপি করতে পারবেন না, কাউকে ফরওয়ার্ড করতে পারবেন না, মেলটির প্রিন্ট আউট নিতে পারবেন না, এমনকী মেলটির সঙ্গে কোনও অ্যাটাচমেন্ট ফাইল থাকলে সেটি ডাউনলোড করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, মেলটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যাবে।

⇨ ভেরিফিকেশন ফিচার

কনফিডেনশিয়াল মোডে কাউকে মেল পাঠানোর সময় আপনি টু স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ যাঁকে মেলটি পাঠাবেন, তাঁর মেলটি পড়তে হলে OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) প্রয়োজন হবে।

⇨ কীভাবে কনফিডেনশিয়াল মেল পাঠাবেন

প্রথমে জিমেলের নতুন ইউজার ইন্টারফেসে কমপোজ বাটন ক্লিক

The image is a property of teknowbits.blogspot.com

করুন। কমপোজ বক্স ওপেন হবে। সেখানে মেলটি টাইপ করুন। যদি কোনও ফাইল অ্যাটাচ করার দরকার হয় তবে সেটা অ্যাটাচ করুন। এবার কমপোজ বক্সের নীচে যেখানে ‘Send’ বাটন রয়েছে তার ডানদিকে একেবারে শেষে যে লক সাইন ও ঘড়ির ছবি সহ একটি বাটন রয়েছে সেটি ক্লিক করুন। সেটাই হল কনফিডেনশিয়াল বাটন।

⇨ টাইম সেট করুন

কনফিডেনশিয়াল বাটনে ক্লিক করলে ‘Set Expiration’ অপশন আসবে। মেলটির এক্সপায়ারি ডেট কী হবে (অর্থাৎ পাঠানোর কতদিনের মধ্যে মেলটি নিজে থেকে ডিলিট হয়ে যাবে) তা সিলেক্ট করার অপশন হল এটি। এক্সপায়ারি ডেট সবচেয়ে কম ১ দিন এবং সবচেয়ে বেশি ৫ বছর সেট করতে পারবেন।

⇨ টু স্টেপ ভেরিফিকেশন

‘Set Expiration’ অপশনের নীচে রয়েছে ‘Require Passcode’ অপশন। এটি হল টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অপশন। যাঁকে মেল পাঠাচ্ছেন তাঁর অ্যাকাউন্ট যদি জিমেলে থাকে তবে এই অপশনটি আপনি ইচ্ছা করলে ব্যবহার করতেও পারেন, নাও পারেন। তবে সেই ব্যক্তির মেল অ্যাকাউন্ট যদি অন্য কোম্পানির হয় যেমন আউটলুক বা ইয়াহু মেল, সেক্ষেত্রে আপনি এই অপশনটি সিলেক্ট না করলেও জিমেল বাই ডিফল্ট এই অপশনটি ব্যবহার করবে।

টু স্টেপ ভেরিফিকেশনের জন্য ‘Require Passcode’ অপশনের নীচে ‘sms passcode’ অপশনটি সিলেক্ট করার পর যাঁকে মেলটি পাঠাচ্ছেন তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর আপনাকে টাইপ করতে হবে। সেই ব্যক্তি যখন আপনার পাঠানো মেলটি ওপেন করতে যাবেন, তখন গুগল সার্ভার থেকে তাঁর ফোনে OTP যাবে। সেই OTP ইনপুট করার পরেই সেই ব্যক্তি আপনার পাঠানো মেলটি ওপেন করতে পারবেন।

⇨ রিমুভ অ্যাকসেস অপশন

কনফিডেনশিয়াল মেলটি যাঁকে পাঠানোর কথা, তাঁকে না পাঠিয়ে যদি অন্য কাউকে ভুল করে পাঠান, তবে ইনবক্সের সেন্ট মেল অপশনে গিয়ে সেই নির্দিষ্ট মেলটিতে ক্লিক করুন। এবার সেখানে দেখবেন ‘Remove Access’ অপশন রয়েছে। সেই অপশনে ক্লিক করলে ভুল করে যাঁকে মেলটি পাঠিয়েছেন সেই ব্যক্তি কোনওভাবেই মেলটি ওপেন করতে পারবেন না।

এবার বলি, কনফিডেনশিয়াল মোড নিয়ে কেন এত হইচই হচ্ছে বা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, এই ফিচারটির সুয়োগ নিয়ে অনেক দুষ্কৃতী মহিলাদের অশ্লীল মেল পাঠাতে পারেন বা হুমকি মেল পাঠাতে পারেন। যেহেতু মেলটির প্রিন্ট আউট নেওয়া যাবে না, কপি করা যাবে না এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর মেলটি নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যাবে, তাই পরবর্তীতে প্রমাণ করার উপায় থাকবে না যে, কোনও অশ্লীল বা হুমকি মেল পাঠানো হয়েছিল।

নতুন জিমেল ইন্টারফেস আপাতত ওয়েব ভার্সনে পাওয়া যাচ্ছে। মোবাইল ভার্সনে কবে পাওয়া যাবে, সেই বিষয়ে গুগলের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

যদি আপনার জিমেলের নতুন ইন্টারফেস ও ফিচারগুলি ভালো না লাগে তবে ফের ইনবক্সের উপরে ডানদিকে গিয়ার আইকনে ক্লিক করুন এবং যে মেনু লিস্ট ওপেন হবে সেখানে ‘Go back to classic gmail’ অপশনে ক্লিক করুন। তাহলেই ফের আগের জিমেল ইউজার ইন্টারফেস পাবেন।