3 Nov 2017

কোয়ান্টাম কম্পিউটার


কম্পিউটার টেকনোলজির জগতে যে বিষয়গুলি নিয়ে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচনা

Photo Credit : Pixabay
ও পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে, তার মধ্যে অন্যতম কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কোয়ান্টাম কম্পিউটার কাজ করে পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম মেকানিক্স তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনক হলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিখ্যাত বিজ্ঞানী জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক, যিনি তাঁর কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্য ১৯১৮ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন।




কোয়ান্টাম তত্ত্ব কী?

  এই তত্ত্ব এতটাই জটিল যে, এই বিষয়ে পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরের বা গবেষক ছাত্রছাত্রীদের সম্যক ধারণা থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি ধাঁধার মতো মনে হবে। আমাদের চারপাশে যে সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে চলেছে সেগুলি নিউটনের গতিবিদ্যা সহ অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। নিউটনের বিভিন্ন সূত্রের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই পদার্থবিদ্যাকে বলা হয় Classical Physicsকিন্তু ম্যাক্স প্ল্যাংক প্রথম লক্ষ্য করলেন যে, পদার্থ যখন তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র (subatomic) পর্যায়ে থাকে, তখন সে নিউটনের সূত্র মেনে চলে না। তখন পদার্থর একই সঙ্গে একাধিক দশা থাকতে পারে। অর্থাৎ ধরুন একটি বন্ধ বাক্সের মধ্যে একটি বিড়াল রয়েছে, ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্স অনুসারে বিড়ালটি হয় জীবিত বা মৃত অবস্থায় থাকতে পারে, কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলবে বিড়ালটির একই সঙ্গে জীবিত ও মৃত দুটি দশাই থাকতে পারে। শুনতে অদ্ভূত লাগলেও পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পর্যায়ে এটা কিন্তু বাস্তব।


কিউবিট

   কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। সাধারণ কম্পিউটারে ডেটা স্টোর ও প্রসেস করা হয় বিটের মাধ্যমে। এখানে এক বিট মানে হয় ০ কিংবা ১ কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডেটা স্টোর বা প্রসেসের জন্য ব্যবহার করা হয় কোয়ান্টাম বিট বা সংক্ষেপে কিউবিট (qbit) কোয়ান্টাম মেকানিক্সের তত্ত্ব অনুসারে কিউবিটের একই সঙ্গে দুটি দশা থাকতে পারে ০ এবং ১। কিউবিটের এই বৈশিষ্টকে বলা হয় ‘সুপারপজিশন’। সুপারপজিশন বৈশিষ্টের জন্য সাধারণ বিটের তুলনায় কিউবিট দ্বিগুণ ডেটা স্টোর করতে বা প্রসেস করতে সক্ষম। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ডেটা প্রসেসিং স্পিড সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী কী কাজ করবে?

যে সমস্ত কাজে প্রচুর জটিল ডেটা বিশ্লেষণ করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয় সেই সমস্ত কাজ এখনও বিট নির্ভর সুপার কম্পিউটারও ঠিকমতো করতে পারে না। যেমন ধরুণ, একেবারে নির্ভুল ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া, একজন ধূমপায়ী ১০ বছর পর ক্যানসারে আক্রান্ত হবেন কিনা তা সঠিক ভাবে বলে দেওয়া, একটি রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে কত শতাংশ ভোটে জিতবে তা জানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
আরও একটি ভয়ংকর ব্যাপার ঘটতে পারে, তা হল কোনো পাসওয়ার্ডই সুরক্ষিত থাকবে না। ধরা যাক একটি খুব কঠিন পাসওয়ার্ড যার মধ্যে ২০টি লেটার, ১২টি ডিজিট এবং ১০টি স্পেশাল ক্যারেক্টার র‍্যানডম অর্ডারে রয়েছে। সাধারণ কম্পিউটারের পক্ষে এই ধরণের পাসওয়ার্ড ব্রুট প্রসেসের মাধ্যমে অর্থাৎ পারমিউটেশন-কম্বিনেশন পদ্ধতিতে হ্যাক করতে হয়তো কয়েকশো বা কয়েক হাজার বছর লাগবে, কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পক্ষে সেই কাজটি করতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা তারও কম।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির উদ্যোগ

অদূর ভবিষ্যতে সাধারণ কম্পিউটারের জায়গা যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দখল করে নেবে, তা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার যেমন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির গবেষণায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার তৈরিতে ব্যস্ত। গুগল, আইবিএম ইত্যাদি কোম্পানির একাধিক টিম এখন কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে ব্যস্ত। চলতি বছরের শেষে গুগল কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে তাদের গবেষণা কত দূর এগলো, সেই বিষয়ে কোনো বিশেষ ঘোষণা করতে পারে। আমেরিকার নাসা (ন্যাশনাল এরোনোটিক্স স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)তাদের মহাকাশ গবেষণায় ইতিমধ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার শুরু করেছে। সম্প্রতি চিন দাবি করেছে, তারা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করেছে। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে কানাডার ডি-ওয়েভ কোম্পানি।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

অন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার গবেষণায় মাইক্রোসফট অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেহেতু সাধারণ কম্পিউটারের থেকে একেবারেই আলাদা পদ্ধতিতে কাজ করে, তাই সাধারণ কম্পিউটারের জন্য যে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলি ব্যবহার করে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়, সেই ল্যাঙ্গুয়েজ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পক্ষে অচল। তাই মাইক্রোসফট কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সফটওয়্যার তৈরির জন্য বিশেষ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করেছে, যা খুব শীঘ্রই তারা রিলিজ করবে। মাইক্রোসফট এই নতুন ল্যাঙ্গুয়েজের নাম এখনও ঠিক করেনি, তবে এই ল্যাঙ্গুয়েজের স্ট্রাকচার অনেকটা C# এবং পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মতো। যাঁরা মাইক্রোসফটের এই নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে চান, তাঁদের মাইক্রোসফটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে গিয়ে আগাম নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন (সাইন আপ) করে রাখতে হবে। মাইক্রোসফটের কোয়ান্টাম কম্পিউটার সংক্রান্ত সাইটের লিংক টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের ডাউনলোড ফোল্ডারে পাবেন। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শুধু শিখলেই তো হবে না, সেই ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে আপনি যদি একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন, তবে সেই সফটওয়্যারটি টেস্ট করবেন কোথায়? আপনার সাধারণ কম্পিউটারে তো সেই সফটওয়্যার রান করানো যাবে না, কারণ সাধারণ কম্পিউটার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট করবে না। তাই মাইক্রোসফট তাদের অ্যাঝার ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যবস্থা রাখবে, যেখানে গিয়ে আপনি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য তৈরি কোনো সফটওয়্যার টেস্ট করাতে বা রান করাতে পারবেন। মাইক্রোসফটের অ্যাঝার ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের লিংকও টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের ডাউনলোড ফোল্ডার পাবেন।

ভারতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির উদ্যোগ

ভারতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে নিয়ে এখনো সেভাবে কাজ শুরুই হয়নি। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, ব্যাঙ্গালোর এবং হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউট, এলাহাবাদের গবেষকরা সবেমাত্র এই বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। 

 
 
  

 

 

No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট