10 Sept 2018

স্যামসাঙ চার ও নোকিয়া পাঁচ ক্যামেরার ফোন আনছে

২০০৭ সালে প্রথম স্মার্ট ফোন লঞ্চ করেছিল অ্যাপল।
Image credit: Pixabay
তার এক বছরের মধ্যে স্যামসাঙ সহ বিশ্বের অন্য কোম্পানিগুলিও স্মার্ট ফোন তৈরি শুরু করে। স্মার্ট ফোন লঞ্চ করার পর প্রথম প্রায় ১০ বছর ফোনগুলির সামনে ও পেছনে একটি করে ক্যামেরা থাকত। এরপর বিভিন্ন কোম্পানি তাদের মিড ও হাই বাজেট সেগমেন্টের ফোনগুলির পেছনে দুটি ক্যামেরা অর্থাৎ ডুয়াল ক্যামেরার ব্যবহার শুরু করে। 




তিন ক্যামেরা


পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৮ সালে বিশ্বে যত স্মার্ট ফোন তৈরি হবে তার প্রায় ৩০ শতাংশ ফোনে ডুয়াল ক্যামেরা থাকবে। আগামী বছর এই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। কিন্তু ইতিমধ্যে তিন ক্যামেরার ফোনও বাজারে চলে এসেছে। কিছুদিন আগে চিনের হুয়েই কোম্পানি তিন ক্যামেরার ফোন লঞ্চ করেছে। তাদের P20 Pro হ্যান্ডসেটের পেছনে তিনটি ক্যামেরা রয়েছে। তার কিছুদিন পরেই চিনের ওপ্পো কোম্পানিও তিন ক্যামেরা ফোন লঞ্চ করেছে। তাদের R17 হ্যান্ডসেটে তিনটি ক্যামেরা রয়েছে। 



চার ও পাঁচ


অর্থাৎ সিঙ্গল ক্যামেরার ফোনের পর ডুয়াল ক্যামেরার ফোন বাজারে আসতে প্রায় ১০ বছর লেগে গেলেও ডুয়াল ক্যামেরা ও ট্রিপল ক্যামেরার ফোন বাজারে আসার মধ্যে সময়ের পার্থক্য কিন্তু মাত্র বছর দুয়েক। কিন্তু এখানেই ফোন কোম্পানিগুলি থেমে থাকছে না। চলতি বছরের শেষেই স্যামসাঙ চার ক্যামেরার ও নোকিয়া পাঁচ ক্যামেরার (অসমর্থিত খবর) ফোন লঞ্চ করবে বলে জানা গেছে।


HTC-র ফোন


স্মার্ট ফোনে ক্যামেরা প্রযুক্তির উন্নতির জন্য ফোন কোম্পানিগুলি দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হল একটি সাধারণ DSLR  ক্যামেরার তুলনায় সাধারণ স্মার্ট ফোনের আকার অনেকটাই ছোটো। তাই সেই অল্প জায়গার মধ্যে সিঙ্গল লেন্সের ক্যামেরায় খুব ভালো কোয়ালিটির ছবি কখনোই তোলা সম্ভব হয় না। একটি সাধারণ DSLR  ক্যামেরায় জুমিং, অ্যাপারচার ও HDR (High Dynamic Range) ছবি তোলার যে ক্ষমতা থাকে, তা কখনই স্মার্ট ফোনের সিঙ্গল লেন্সের ক্যামেরায় থাকে না। স্মার্ট ফোনের ক্যামেরার এই সমস্যা দূর করার জন্য ২০১৬ সালে HTC কোম্পানি প্রথম তাদের M8 হ্যান্ডসেটে ডুয়াল ক্যামেরার ব্যবহার শুরু করে। তার কিছুদিনের মধ্যে HTC  কোম্পানির দেখাদেখি অন্যান্য কোম্পানিগুলিও তাদের ফোনে ডুয়াল ক্যামেরার ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু প্রথমদিকে বিভিন্ন কোম্পানির ডুয়াল ক্যামেরার সেট আপ ছিল আলাদা আলাদা, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনও স্ট্যান্ডার্ড ছিল না। অর্থাৎ কোনও কোম্পানি ফোনে ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করত মূলত ছবির ফোরগ্রাউন্ড সাবজেক্ট এবং ব্যাকগ্রাউন্ড সাবজেক্টের মধ্যে ডেপথ বাড়াতে। আবার কোনও কোম্পানির ফোনে ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার হত মূলত ওয়াইড রেঞ্জের ছবি তোলার জন্য


সমস্যা মেটাল অ্যাপল


এই সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসে অ্যাপল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাপল লঞ্চ করে iPhone7। এই ফোনে অ্যাপল ডুয়াল ক্যামেরা ব্যবহার করে। এই ক্যামেরার সেট আপ-এ গুরত্ব দেওয়া হয় মূলত দুটি বিষয়ে। তা হল ডিজিটাল বোকে এবং অপটিকাল জুম। ডিজিটাল বোকে হল ছবি তোলার সময় ছবির মেইন সাবজেক্ট চারপাশের বাকি সাবজেক্টের তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্ট হবে, এবং অপটিকাল জুমের সাহায্যে ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের ছবি অনেক স্পষ্ট ভাবে তোলা সম্ভব হবে। ফোনে ডুয়াল ক্যামেরার ক্ষেত্রে অ্যাপলের এই সেট আপ এখন বাকি কোম্পানিগুলিও ফলো করছে। অর্থাৎ এটাই এখন ডুয়াল ক্যামেরার স্ট্যান্ডার্ড সেট আপ। পরবর্তীতে অ্যাপল তাদের iPhoneX হ্যান্ডসেটে ডুয়াল ক্যামেরার সেট আপ-এ ব্যবহার করেছে AI (Artificial Intelligence) প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন ডুয়াল ক্যামেরায় আরও ভালো ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছে।



আপনার মোবাইল ফোনে কি AI ক্যামেরা আছে?


সুবিধা


ডুয়াল ক্যামেরার সুবিধা হল এর সাহায্যে আপনি যখন কোনও বস্তুর ছবি তুলবেন, তখন বস্তুটির সঙ্গে তার পেছনের অর্থাৎ ব্যাকগ্রাউন্ডের দূরত্ব (অর্থাৎ ছবির মেইন সাবজেক্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে ডেপথ) এবং বস্তুটির উপর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে আলো পড়ায় যে বিভিন্ন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট শেড তৈরি হয় তা ছবিতে স্পষ্ট ধরা পড়বে। এই ধরনের ছবিকে বলা হয় HDR (High Dynamic Range) ফটোগ্রাফি। এতদিন খুব দামি ক্যামেরার সাহায্যে এমন ছবি তোলা সম্ভব হত, কিন্তু এখন অনেক মোবাইল ফোনেই এমন ছবি তোলা যাচ্ছে। 


লেন্স


ক্যামেরার কোয়ালিটি অনেকটাই নির্ভর করে তার লেন্সের উপর। খুব ভালো মানের ছবি তুলতে গেলে এবং ক্যামেরার জুমের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দামি ক্যামেরাগুলিতে একাধিক লেন্স ব্যবহার করা হয়। এবার তাই মোবাইল ফোনেও চার বা পাঁচ লেন্সের ক্যামেরার ব্যবহার শুরু হতে চলেছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, স্যামসাঙ চলতি বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের প্রথমে এমন একটি ফোন লঞ্চ করবে যাতে দুটি নয়, চারটি রিয়ার ক্যামেরা থাকবে। অর্থাৎ ফোনের পেছনে চারটি ক্যামেরা থাকবে। একইভাবে নোকিয়ার নতুন হ্যান্ডসেটের পেছনে পাঁচটি ক্যামেরা থাকবে বলে জানা গেছে। 


চারটি বা পাঁচটি ক্যামেরা থাকলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে? 


প্রথমত লো-লাইট ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ খুব কম আলোতেও তোলা ছবি অনেক স্পষ্ট হবে। 


দ্বিতীয়ত লেন্সের সংখ্যা যত বাড়বে, ক্যামেরার জুমিং পাওয়ার তত বাড়বে। অর্থাৎ অনেক দূরের বস্তুর স্পষ্ট ছবি আপনি তুলতে পারবেন। 

তৃতীয়ত ‘ফিস আই’ ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ভালো কোয়ালিটির ছবি তুলতে পারবেন। 


চতুর্থত এই ধরনের ফোনে ছবি তোলার ক্ষেত্রে বোকে এফেক্ট, HDR, লাইট ও শেডের ম্যাচিংয়ের ক্ষেত্রেও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।    


কবে লঞ্চ হচ্ছে

স্যামসাঙ অফিশিয়ালি এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে কিছু জানায়নি। কিন্তু একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, স্যামসাঙ সম্ভবত চলতি বছরের শেষের দিকেই চার ক্যামেরার ফোনটি (যাকে বলা হচ্ছে কোয়াড ক্যামেরা ফোন) লঞ্চ করবে। কিন্তু স্যামসাঙের কোন ফোনে চারটি ক্যামেরা থাকবে? যতদূর জানা গিয়েছে, স্যামসাঙের গ্যালাক্সি সিরিজের আগামী ফোন অর্থাৎ গ্যালাক্সি S10  ফোনে চারটি ক্যামেরা থাকছে না। আগামী বছর স্যামসাঙ লঞ্চ করতে চলেছে তাদের প্রথম ফোল্ডেবল স্ক্রিনের স্মার্ট ফোন অর্থাৎ যে ফোনের স্ক্রিন আপনি ভাঁজ করতে পারবেন। কিন্তু সেই ফোনেও নাকি চারটি ক্যামেরা থাকবে না। তবে কোন ফোনে থাকবে? তাহলে কি স্যামসাঙ কোয়াড ক্যামেরা ফোনের জন্য নতুন কোনও সিরিজ লঞ্চ করতে চলেছে? তেমনটা হতে পারে। তবে একটি বিষয় জানা গেছে, কোয়াড ক্যামেরা ফোনগুলি হবে মিড রেঞ্জ সেগমেন্টের (অর্থাৎ যে ফোনগুলির দাম ২০ হাজার টাকার মধ্যে)। নোকিয়ার ক্ষেত্রে জানা গেছে, Nokia9 হ্যান্ডসেটে পাঁচটি ক্যামেরা থাকতে পারে। 



টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট