3 Jul 2018

শেয়ারইট ভুলে যান, ব্যবহার করুন গুগলের Files Go

ভারত, ইন্দোনেশিয়া সহ এশিয়ার ও দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক দেশে
Photo credit : Pixabay

ইন্টারনেট স্পিড ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলির তুলনায় অনেকটাই কম। তা ছাড়া এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে অধিকাংশ লোক লো-এন্ড মোবাইল ফোন অর্থাৎ লো-স্পেসিফিকেশনের ফোন ব্যবহার করে। ওই দেশগুলিতে লো-এন্ড মোবাইল ফোনগুলির জন্য গত বছর গুগল লঞ্চ করেছিল তাদের Go সিরিজের একাধিক অ্যাপ। সেই বিষয়ে আমি ইতিমধ্যে টেকনোবিটসের ব্লগে আলোচনা করেছি। যাঁরা পড়েননি তাঁরা এই ব্লগের নিচে আমার সেই আগের ব্লগের লিঙ্ক ক্লিক করে বিষয়টি পড়ে নিতে পারেন। 

গুগল তাদের সেই Go সিরিজে গত বছর যে অ্যাপগুলি লঞ্চ করেছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল Files Go অ্যাপ। লো-এন্ড মোবাইল ফোনে যদি হেভি অ্যাপ অর্থাৎ যে অ্যাপগুলির মেমরি সাইজ খুব বেশি, সেগুলি ইনস্টল করা হয় তবে সেই অ্যাপগুলি ঠিকঠাক কাজ করে না। অনেক সময় ফোন হ্যাং করে। তাই Go সিরিজের অ্যাপগুলি লাইট অ্যাপ। Files Go অ্যাপটিও একটি লাইট অ্যাপ। এই অ্যাপটির সাইজ মাত্র ৮.2 MB। 



অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই তাঁদের ফোনে কোনও না কোনও ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করেন। তাঁরা মূলত ব্যবহার করেন হয় শেয়ারইট কিংবা জেন্ডার। কিন্তু আমার পরামর্শ হল ওই সমস্ত অ্যাপ আনইনস্টল করে গুগলের এই ফ্রি Files Go অ্যাপটি ব্যবহার করুন। কারণ এই অ্যাপটি ফিচার ও কার্যকারিতায় শেয়ারইট ও জেন্ডারের তুলনায় অনেক অনেক এগিয়ে। গত বছর Files Go অ্যাপটি রিলিজ করার পর এবছর গুগল এই অ্যাপটিকে আপডেট করে এটিকে আগের থেকে অনেক বেশি পাওয়ারফুল করেছে, সেই সঙ্গে এতে যোগ করেছে নতুন ফিচার।
শেয়ারইট বা জেন্ডার মূলত ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ। কিন্তু গুগলের Fiels Go একটি ফাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ। অর্থাৎ এর মাধ্যমে আপনি একদিকে যেমন ফোনে ফাইল ম্যানেজমেন্টের যাবতীয় কাজ করতে পারবেন, তেমনি এর সাহায্যে অফলাইনে মোবাইল টু মোবাইল ফাইল শেয়ারিংও করতে পারবেন।

প্রথমে অ্যাপটির ফাইল ম্যানেজমেন্টের কাজগুলি বলে নেই, তারপরে এর ফাইল শেয়ারিং ও অন্য নতুন ফিচারগুলির বিষয়ে বলব।

১. এই অ্যাপটির সাহায্যে আপনি ফোনের স্টোরেজ স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার ফোনের মেমরিতে এবং SD কার্ডের মেমরিতে কতটা স্পেস ফ্রি আর কতটা ফুল তা দেখতে পারবেন।

২. এই অ্যাপের সাহায্যে হোয়াটস্অ্যাপ সহ অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের চ্যাট হিস্ট্রি এবং সেই মেসেজিং অ্যাপগুলির মাধ্যমে ফোনে ডাউনলোড হওয়া ইমেজ সহ মাল্টিমিডিয়া ফাইল, ডুপ্লিকেট ফাইল ইত্যাদি ডিলিট করতে পারবেন। এছাড়া ফোনের আনইউজড্ অ্যাপ অর্থাৎ যে অ্যাপগুলি ফোনে ইনস্টল করেছেন কিন্তু ব্যবহার করেন না, সেই অ্যাপগুলিও ডিলিট করতে পারবেন। আরও একটি সুবিধা হল এই অ্যাপের সাহায্যে ফোনের ক্যাশ (উচ্চারণটা ক্যাশ, ক্যাশে নয়) মেমরিও ক্লিয়ার করতে পারবেন।

৩. ফোন মেমরিতে বেশি ফাইল জমে গেলে সেগুলি আপনি এই অ্যাপের সাহায্যে SD কার্ডে ট্রান্সফার করতে পারবেন।

৪. আপনার ফোনের ইন্টারনাল মেমরি বা SD কার্ডের মেমরিতে যদি বেশি ফাইল জমে যায় সেক্ষেত্রে কোন অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলিকে ডিলিট করে আপনি ইন্টারনাল মেমরি বা SD কার্ডের মেমরিতে ফ্রি স্পেস বাড়াতে পারবেন, সেই বিষয়ে এই অ্যাপ আপনাকে সাজেশন বা পরামর্শ দেবে।

৫. এই অ্যাপে বিশেষ ফিল্টার সার্চ অপশন রয়েছে। এই অপশন ফোনে স্টোর করা ডকুমেন্ট, ইমেজ, মাল্টিমিডিয়া বা অন্যান্য ফাইলগুলিকে সহজে খুঁজে বের করতে আপনাকে সাহায্য করবে।

৬. ফোনে স্টোর করা ফাইলগুলিকে গুগল ড্রাইভ বা অন্য কোনও ক্লাউড স্টোরেজে স্টোর করার জন্য এই অ্যাপে আলাদা অপশন রয়েছে।



অফলাইন ফাইল শেয়ারিং

এবার আসি এই অ্যাপের বিশেষ ফিচারে। সেটি হল এর অফলাইন ফাইল শেয়ারিং বা ফাইল ট্রান্সফার ফিচার। এই অপশনটি অবশ্য নতুন নয়। গতবছর গুগল যখন এই অ্যাপটি রিলিজ করেছিল, তখনই এর মধ্যে শেয়ারিং ফিচারটি ছিল। এই ফিচারের সাহায্যে শেয়ারইট বা জেন্ডার অ্যাপের মতো Files Go অ্যাপের সাহায্যেও এক ফোন থেকে অন্য ফোনে অফলাইনে ফাইল ট্রান্সফার করা সম্ভব। কিন্তু এবছর সেই ফিচারটি অনেকগুণ উন্নত করেছে গুগল। 

শেয়ারইট অ্যাপের সাহায্যে আপনি অফলাইনে (অর্থাৎ ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া) এক ফোন থেকে অন্য ফোনে সর্বোচ্চ ২০ MBps (প্রতি সেকেন্ডে ২০ MB) স্পিডে ফাইল ট্রান্সফার বা শেয়ার করতে পারবেন। অন্যদিকে জেন্ডার অ্যাপের সাহায্যে আপনি সর্বোচ্চ ৪০ MBps স্পিডে ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। 

দুরন্ত স্পিড

কিন্তু গুগলের Files Go অ্যাপের ফাইল শেয়ারিং স্পিড শেয়ারইট বা জেন্ডারের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। যেহেতু গুগল এই অ্যাপটি তৈরি করেছে মূলত এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির জন্য এবং সেই দেশগুলিতে ইন্টারনেট স্পিড অনেকটাই কম। তাই সেক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হেভি ফাইল অর্থাৎ বড় সাইজের ফাইল কাউকে পাঠানো অনেকটাই সময় সাপেক্ষ। সেজন্য অফলাইনে Files Go অ্যাপের শেয়ারিং স্পিড শেয়ারইট বা জেন্ডার অ্যাপের তুলনায় অ-নে-ক বেশি করেছে গুগল। সেই স্পিড কত জানেন? ৪৯০ MBps! এই স্পিড শেয়ারইট অ্যাপের তুলনায় প্রায় ২৫ গুণ এবং জেন্ডার অ্যাপের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি! তাহলেই বুঝুন কত দ্রুত গুগলের এই অ্যাপের সাহায্যে অফলাইনে ফাইল শেয়ার করা সম্ভব। 

এনক্রিপশন ফিচার

শুধু তাই নয়, গুগলের এই অ্যাপে রয়েছে বিশেষ WPA2 এনক্রিপশন ফিচার। অর্থাৎ এই অ্যাপের সাহায্যে আপনি যখন আপনার ফোন থেকে অন্য কারও ফোনে কোনও ফাইল শেয়ার করবেন, তখন অ্যাপটি সেই ফাইলটিকে এনক্রিপটেড করে পাঠাবে, ফলে অন্য কারও পক্ষে হ্যাক করে জানা সম্ভব নয় আপনি কাকে কী ফাইল শেয়ার করছেন। 

পুরানো ভার্সনেও সাপোর্ট

আর একটি সুবিধা হল এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েডের অনেক পুরানো ভার্সনেও কাজ করবে। অ্যাপটিকে অ্যান্ড্রয়েড ৫.০ (ললিপপ) এবং তার পরবর্তী সমস্ত ভার্সন সাপোর্ট করে।

শেয়ারিং ট্যাব

এবছর অ্যাপটি আপডেট করার সময় গুগল অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস অনেক সহজ করেছে, ফলে অ্যাপটি ব্যবহার করাও এখন অনেক সহজ। আপনি যখন এই অ্যাপের সাহায্যে ফাইল শেয়ার করবেন, তখন অ্যাপের হোম স্ক্রিনে নিচে ডানদিকে দেখবেন রয়েছে শেয়ারিং ট্যাব। সেটি একবার ট্যাপ করলেই আপনি নির্দিষ্ট ফোনে ফাইল পাঠাতে পারবেন। এছাড়া স্ক্রিনের নিচে রয়েছে একটি ‘ক্লিয়ার’ ট্যাব। এই ট্যাবের সাহায্যে আপনি সহজেই ফোনের অপ্রয়োজনীয় ভিডিয়ো ফাইলগুলিকে ডিলিট করতে পারবেন।

ডাউনলোড

অ্যাপটি শুধুমাত্র গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করবেন। এছাড়া টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের একেবারে উপরে যে ডাউনলোড নোট রয়েছে সেখানে ক্লিক করেও আপনি টেকনোবিটসের গুগল শিটে গিয়ে অ্যাপটির লিঙ্কে (এটাও গুগল প্লে স্টোর লিঙ্ক) ক্লিক করে সেটিকে ডাউনলোড করতে পারবেন।




টেকনোবিটসের নতুন পোস্টগুলি যদি মিস করতে না চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Following বাটনে ট্যাপ করার পর See first অপশনটি ট্যাপ করে অন করুন।



পোস্টটি ভালো লাগবে অবশ্যই শেয়ার করবেন। টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে বা ব্লগসাইটে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।


আগ্রহী পাঠকরা যদি গুগল গো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তবে এখানে ক্লিক করুন 


1 comment:

  1. Dada ES FILE EXPLORER poriborte kon app use korbo?? Ektu bolen plz

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট