5 Jul 2018

জেনে নিন কেন ব্যবহার করবেন ভার্চুয়াল আধার আইডি



আমাদের দেশে এখন প্রায় ১২১ কোটি লোকের আধার কার্ড রয়েছে।

Image Credit : www.uidai.gov.in
আমাদের প্রত্যেকের আধার কার্ডে রয়েছে ১২ ডিজিটের একটি বিশেষ নাম্বার। এই নাম্বারটি হল আমাদের আধার নাম্বার যেটা সরকারের ভাষায় ‘আপকা পহেচান’। এই নাম্বারটি এখন আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার, কারণ এই নাম্বারের রেফারেন্সে ভারত সরকারের সার্ভারে স্টোর করা আছে আমার আপনার প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ ডেটা। যেমন, পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস, বয়স, ফোন নম্বর, বাবার নাম, ইমেল আইডি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার, আঙুলের ছাপ ইত্যাদি।


বর্তমান যুগটা হল আইটি-র যুগ অর্থাৎ ইনফরমেশন টেকনোলজির যুগ। এই যুগে সবচেয়ে দামি কিন্তু সোনা বা হিরে নয়, সবচেয়ে দামি হল ডেটা অর্থাৎ তথ্য। আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য। 




কেন তথ্য এত গুরুত্বপূর্ণ? 

তার কারণ অর্থনীতি ও ইন্টারনেট। ধরা যাক চিনের কোনও কোম্পানি ভারতে নতুন একটি মোবাইল ফোন লঞ্চ করতে চায়। কোম্পানি ঠিক করেছে সেই ফোনটির টার্গেট কাস্টমারের অর্থাৎ যে ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে কোম্পানি ফোনটি তৈরি করেছে তাদের বয়স হবে ১৫ থেকে ২৫ - এর মধ্যে। এবং সেই টার্গেট কাস্টমাররা হবে ছোট ও মাঝারি শহরের বাসিন্দা। সেই কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা উত্তর ভারতের নির্দিষ্ট পাঁচটি শহরে প্রথমে ফোনটি লঞ্চ করবে। 

কোম্পানি তাদের টার্গেট কাস্টমার ঠিক করেছে, কোন কোন রাজ্য প্রথমে ফোনটি লঞ্চ করবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছে, কিন্তু এবার যেটা সমস্যা তা হল সম্ভাব্য কাস্টমারদের ডেটা কোম্পানি কীভাবে পাবে। অর্থাৎ ফোনটি লঞ্চ করার আগে কোম্পানিকে জানতে হবে উত্তর ভারতের ওই পাঁচটি রাজ্যে ছোট ও মাঝারি শহরে ১৫-২৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়ের সংখ্যা মোটামুটি কত? কিন্তু কীভাবে সেই তথ্য তারা পাবে? 

কিংবা ধরা যাক আমেরিকার কোনও কোল্ড ড্রিংক্স প্রস্তুতকারী সংস্থা দক্ষিণ ভারতের চারটি রাজ্যের রাজধানীতে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে চায়। কিন্তু তার জন্য জানা প্রয়োজন ওই চারটি রাজ্যের রাজধানীতে ২০-৩৫ বছরের মোটামুটি কতজন ছেলেমেয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। কিন্তু কীভাবে কোল্ড ড্রিংক্স কোম্পানিটি সেই তথ্য বা ডেটা পাবে?

তাই বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসায়ীক কাজকর্মের জন্য ডেটা অত্যন্ত গুরুত্বূপর্ণ। কোনও প্রোডাক্ট লঞ্চ বা প্রোডাক্ট লঞ্চের আগে টার্গেট কাস্টমারদের মধ্যে অনলাইনে সমীক্ষা করা, বাজারে অলরেডি লঞ্চ করা কোনও প্রোডাক্ট সম্পর্কে কাস্টমারদের প্রতিক্রিয়া জানা ইত্যাদির জন্য কোম্পানির প্রয়োজন কাস্টমারদের ডেটা ব্যাঙ্ক। কিন্তু এই ডেটা কীভাবে পাওয়া সম্ভব?

মূলত দুই রকম ভাবে এই ডেটা সংগ্রহ করা হয়। 

১. ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোনও জনপ্রিয় মোবাইল অ্যাপ কোম্পানি — যাদের গ্রাহক সংখ্যা কয়েক কোটি — তাদের কাছ থেকে এই ডেটা চড়া দাম দিয়ে কেনে কোম্পানিগুলি। তবে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, গুগল, বিং বা ইয়াহুর মতো বড় সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানিগুলির কাছ থেকে কিংবা কোনও ইন্টারনেট ব্রাউজার কোম্পানির কাছ থেকেও বিভিন্ন কোম্পানি ডেটা কেনে। বিভিন্ন কোম্পানিকে গ্রাহকদের এই ডেটা বিক্রি করে তাই ফেসবুক, গুগল প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার ব্যাবসা করে।




২. দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল হ্যাকিং। বিভিন্ন দেশের সরকারের সার্ভারে সেই সমস্ত দেশের বাসিন্দাদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য স্টোর করা থাকে। যেমন, আমাদের দেশের সরকারের সার্ভারে দেশের প্রায় ১২১ কোটি বাসিন্দার আধার কার্ডের তথ্য বা ডেটা স্টোর করা রয়েছে।  অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের সার্ভার হ্যাক করে সেখান থেকে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করা হয়।

সুতরাং এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন ডেটা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং দামি। ভারতবর্ষ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে তাই এই দেশ একটি লোভনীয় বাজার। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সরকারের সার্ভারে স্টোর করা ১২১ কোটি বাসিন্দার আধার কার্ডের ডেটা বিভিন্ন কোম্পানিগুলির কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয়। 

অভিযোগ

তাই ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার এমন অভিযোগ উঠেছে যে, সরকারের সার্ভার হ্যাক করে হ্যাকাররা আমাদের আধার কার্ডের তথ্য চুরি করেছে। যদিও প্রতিবারই সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, এবং দাবি করেছে দেশের মানুষের তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু একটা প্রবাদ আছে ‘যা রটে তার কিছুটা বটে’। সুতরাং বাস্তবে কী হয়েছে তা একমাত্র সরকারই জানে। 

আধার কার্ডের তথ্য চুরির আরও একটা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ উঠেছে মোবাইল কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে। আমাদের দেশে প্রথম আধার কার্ডের তথ্য যাচাই করে সিম দেওয়া শুরু করেছিল জিও। তারা বায়োমেট্রিক মেশিনে গ্রাহকের আঙুলের ছাপ নিত। ছাপ মিলে গেলে সরকারের সার্ভারে স্টোর করা সেই গ্রাহকের আধার অ্যাকাউন্ট ওপেন হত। তারপর সেই অ্যাকাউন্টে স্টোর করা যাবতীয় তথ্য যাচাই করে জিও গ্রাহককে সিম দিত। এই উদ্দেশ্যটা গ্রাহকদের পক্ষে খুবই সুবিধাজনক। কারণ এতে সিম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্টের ফটোকপি জমা দিতে হয় না, কোনও ফর্ম ফিল আপ করতে হয় না। আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশনের জন্য কখন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার থেকে আপনাকে ফোন করা হবে সেই অপেক্ষায় আপনাকে বসে থাকতে হবে না।
পদ্ধতিটি সুবিধাজনক হলেও বিষয়টি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠল (এবং এবার সেটা আর সরকার অস্বীকার করতে পারল না)। অভিযোগ হল এই যে, নতুন সিম নেওয়ার জন্য গ্রাহক যখন বায়োমেট্রিক মেশিনে তাঁর আঙুলের ছাপ দিচ্ছেন, তখন তাঁর আধার কার্ডের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (মূলত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার) জিও-র নিজস্ব সার্ভারে ট্রান্সফার হচ্ছে এবং সেখানে স্টোর হচ্ছে। প্রশ্ন উঠল, সিম বিক্রির ক্ষেত্রে কোম্পানি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নাম্বার জেনে কী করবে? জিও-র সার্ভারে যে কোটি কোটি গ্রাহকের আধার কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতিমধ্যে স্টোর করা হয়েছে সেগুলির অপব্যবহার হবে না তো? সেই তথ্য অন্য কোনও কোম্পানিকে বিক্রি করা হবে না তো? এই সব প্রশ্নের উত্তর জিও বা সরকার কারও কাছে ছিল না। 

ভার্চুয়াল আইডি

শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা করলেন কয়েকজন। তখন সরকার নড়েচড়ে বসল। ঠিক হল সিম নেওয়ার ক্ষেত্রে বা অন্য কোনও প্রয়োজনে যদি কোথাও পরিচয় যাচাই করার জন্য আধার কার্ডের নম্বর চাওয়া হয়, তাহলে গ্রাহক তাঁর আধার কার্ডের ১২ ডিজিটের মূল নম্বরটি না দিয়ে একটি ভার্চুয়াল নাম্বার দিতে পারেন। এই ভার্চুয়াল নাম্বারটির মাধ্যমে গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করতে পারবে কোম্পানি কিন্তু এর মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ডেটা জানতে পারবে না। তাই ১ জুলাই থেকে সরকারের UIDAI ওয়েবসাইটে ভার্চুয়াল আধার আইডি তৈরি করার অপশন লঞ্চ করা হয়েছে।

কীভাবে ভার্চুয়াল আইডি ক্রিয়েট করবেন

নতুন সিম নেওয়ার আগে UIDAI – এর ওয়েবসাইটে যান (টেকনোবিটসের
Image credite : www.uidai.gov.in
ফেসবুক পেজের টাইমলাইনে একেবারে ওপরে যে ‘ডাউনলোড’ নোট রয়েছে সেখানে ক্লিক করে গুগলের ডাউনলোড শিটে যান, সেখানে ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাবেন)। UIDAI – এর ওয়েবসাইটে দেখুন ভার্চুয়াল আধার আইডি ক্রিয়েট করার (সঙ্গের ছবিটি দেখুন) অপশন রয়েছে। সেই অপশনে ক্লিক করুন। এবার নতুন একটি পেজ ওপেন হবে। সেখানে নিজের ১২ ডিজিটের আধার নাম্বার, ক্যাপচা কোড টাইপ করুন। এবার আপনার ফোনে (যে নাম্বারটি আপনার আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্কড রয়েছে) একটি OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠানো হবে। সেই OTP পেজের নির্দিষ্ট বক্সে টাইপ করে সাবমিট করুন। ব্যাস তাহলেই ১৬ ডিজিটের ভার্চুয়াল আধার আইডি ক্রিয়েট হবে। এবার সিম নেওয়ার সময় কোম্পানিকে আধার কার্ডের নাম্বারের বদলে সেই ভার্চুয়াল আইডি দিন।

ভ্যালিডিটি

মনে রাখবেন, ভার্চুয়াল আইডি একটি অস্থায়ী অর্থাৎ টেম্পোরারি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের মতো) নাম্বার। এটি সাধারণত ২৪ ঘণ্টা ভ্যালিড থাকবে। অর্থাৎ আপনি যেদিন সিম নেবেন বা কোথাও আধার কার্ড সম্পর্কিত তথ্য জমা দেবেন, সেদিনই ভার্চুয়াল আইডি ক্রিয়েট করুন। 




টেকনোবিটসের নতুন পোস্টগুলি যদি মিস করতে না চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Following বাটনে ট্যাপ করার পর See first অপশনটি ট্যাপ করে অন করুন।



পোস্টটি ভালো লাগবে অবশ্যই শেয়ার করবেন। টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে বা ব্লগসাইটে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।


No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট