28 Jun 2018

হ্যাঁ, ব্যাটারির সাহায্যেও ফোন হ্যাকিং সম্ভব!!


টেকনোবিটসের ব্লগে এর আগে ফোন হ্যাকিংয়ের বিষয়ে একাধিক পোস্ট করেছি। বর্তমানে সাইবার দুনিয়ায় ফোন হ্যাকিং 
Image Credit : Pixabay

একটি বড় সমস্যা। আপনি যদি স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা না নেন, তবে হ্যাকাররা সহজেই আপনার ফোন হ্যাক করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারবে। ফোনে সেভ করে রাখা আপনার ব্যক্তিগত ছবি, ইমেল ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাকাররা চুরি করে মূলত তিনটি কাজ করে।


. হ্যাকাররা আপনার ইমেল আইডি ও পাসওয়ার্ড এবং বিভিন্ন সোশ্যাল অ্যাকাউন্টের এবং নেট ব্যঙ্কিং অ্যাকাউন্টের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে সেগুলি ডার্ক ওয়েবে (যে ওয়েবসাইটগুলি সাধারণ ব্রাউজারের মাধ্যমে দেখা যায় না, শুধু টর ব্রাউজারের মাধ্যমে দেখা যায়) বিক্রি করে।

. আপনার নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্টের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে হ্যাকাররা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করতে পারে।

. আপনার ফোনে সেভ করে রাখা বিভিন্ন ব্যক্তিগত ছবি চুরি করে তারপর সেগুলি ইন্টারনেটে পাবলিশ করার হুমকি গিয়ে আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে পারে।



তাই নিজের স্মার্টফোন যাতে হ্যাকড না হয়, সেজন্য কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত সেই বিষয়ে এর আগে টেকনোবিটসের বিভিন্ন পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেখানে আমি বলেছিলাম যে, গুগলের প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্য কোনও থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা উচিত নয়, কারণ ওই সমস্ত থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোরের অ্যাপ থেকে ফোনে ম্যালওয়্যার হামলা চালায়। এছাড়া ফোনে পেইড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত এবং তা নিয়মিত আপডেট করা উচিত। ফোনে পর্ন সাইট দেখা উচিত নয় (যদিও এই ভুলটি অনেকেই করেন), কারণ অনেক পর্ন সাইট থেকেও ম্যালওয়্যার ফোনে হামলা চালায়।

এছাড়া, এমন অনেক সাইট রয়েছে যেখানে ফ্রিতে সিনেমা ও গান ডাউনলোড করার লোভ দেখিয়ে ফোন হ্যাক করা হয়। ওই সমস্ত সাইটে সিনেমা ও গান ডাউনলোড করার যে অপশন থাকে সেখানে ক্লিক করলে আপনার ফোনে সেই সিনেমা বা গানটির সঙ্গে গোপনে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যারও ডাউনলোড হবে। তারপর সেটি আপনার ফোন থেকে সমস্ত ডেটা চুরি করবে যা আপনি জানতেও পারবেন না।

এবার টেকনোবিটসের পাঠকদের জানাই যে, আরও একটি অদ্ভুত পদ্ধতিতে ফোন হ্যাক করে সমস্ত ডেটা চুরি করা সম্ভব। সেটা হল ফোনের ব্যাটারি। অর্থাৎ আপনি ফোনে যে ব্যাটারি ব্যবহার করছেন, তার সাহায্যেও কিন্তু আপনার ফোন থেকে যাবতীয় পাসওয়ার্ড, লগইন আইডি ইত্যাদি চুরি করা সম্ভব।

কিন্তু কীভাবে?

এক্ষেত্রে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে আপনার ফোনের ব্যাটারির চার্জিং লেভেল দেখে আপনার ফোন হ্যাক করা সম্ভব। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটা কিন্তু সত্যি!

Battery Status API

স্মার্ট ফোনে ব্যাটারিতে একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারি তার এই প্রযুক্তির সাহায্যে ফোনের বিভিন্ন সফট্ওয়্যার অর্থাৎ অ্যাপ এবং বিভিন্ন হার্ডওয়্যার যেমন, আইসি, র‍্যাম, ডিসপ্লে সহ অন্যান্য পার্টসগুলি কে কতটা বিদ্যুৎ খরচ করছে, তা জানতে পারে এবং সেই তথ্য রেকর্ড করতে পারে। ফোনে হার্ডওয়্যার বা সফট্ওয়্যারগুলি কাজ করার সময় যে বিদ্যুৎ খরচ করছে তা ব্যাটারি যে পদ্ধতির মাধ্যমে এইভাবে রেকর্ড করে তাকে বলে Battery Status API (ব্যাটারি স্ট্যাটাস এপিআই)

মাইক্রো কন্ট্রোলার

এবার ব্যাটারির সাহায্যে আপনার ফোন হ্যাক করতে হলে আপনার ফোনের ব্যাটারি পালটাতে হবে। অর্থাৎ এখন যে ব্যাটারি রয়েছে তার বদলে ফোনে একটি বিশেষ ব্যাটারি লাগাতে হবে যাতে খুব ছোটো একটা চিপ থাকে, যাকে বলে মাইক্রো কন্ট্রোলার। অর্থাৎ বিষয়টি হল, আপনার ফোনকে যদি ব্যাটারির সাহায্যে কেউ হ্যাক করতে চায়, তাহলে তাকে আপনার ফোনের ব্যাটারি পালটে দিয়ে মাইক্রো কন্ট্রোলার যুক্ত বিশেষ ব্যাটারি লাগাতে হবে। ধরা যাক, আপনার কোনও পরিচিত ব্যক্তি গোপনে আপনার ফোন এইভাবে হ্যাক করতে চায়, সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি আপনার অজান্তে আপনার ফোনের ব্যাটারি পালটে দিয়ে মাইক্রো কন্ট্রোলার যুক্ত ব্যাটারি লাগিয়ে দিতে পারে। কিংবা ধরুন, কোনও দোকানে ফোনটি সারাতে দিয়েছেন, সেখান থেকেও এভাবে ব্যাটারি পালটে দেওয়া সম্ভব। আপনার ফোনে যে কোম্পানির ব্যাটারি রয়েছে সেই কোম্পানিরই ব্যাটারির সঙ্গে মাইক্রো কন্ট্রোলার লাগিয়ে দেওয়া হবে, আপনি জানতেও পারবেন না।


বিদ্যুৎ খরচ

এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। সেটা হল, স্মার্ট ফোনে আপনি যে কাজই করুন না কেন, তার জন্য ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ খরচ হবে। কোন সফট্ওয়্যার বা হার্ডওয়্যার কাজ করার সময় কতটা বিদ্যুৎ খরচ করে, তার পরিমাণ আলাদা আলাদা হয়। অর্থাৎ, যখন আপনি ফোনে জিমেল অ্যাপ ব্যাবহার করেন তখন যে বিদ্যুৎ খরচ হয় তার পরিমাণ একরকম, আবার যখন আপনি ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করেন তখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হবে তার পরিমাণ আর একরকম। শুধু তাই নয়, আপনি যখন ফোনে কীপ্যাডে ‘A’ টাইপ করছেন, তখন ব্যাটারি থেকে যে বিদ্যুৎ খরচ হবে তার পরিমাণ একরকম, আর যখন আপনি কীপ্যাডে ‘B’ টাইপ করছেন তখন যে বিদ্যুৎ খরচ হবে তার পরিমাণ আর একরকম। অর্থাৎ কীপ্যাডে প্রত্যেকটি লেটার বা স্পেশাল ক্যারেকটার টাইপ করার সময় ব্যাটারি থেকে আলাদা আলাদা পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়। কোন ফোনে কোন লেটার বা কোন ক্যারেক্টার টাইপ করার সময় কত পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তার পরিমাণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সেই ফোনটির Battery Status API –তে থাকে। ধরা যাক, আপনার ফোনের কীপ্যাডে ‘L’, ‘O’, ‘V’ ‘E’ এই চারটি লেটার টাইপ করার সময় ব্যাটারির বিদ্যুৎ খরচ হয় যথাক্রমে ১w, w, w  এবং ৪w। তাহলে সেই তথ্যটি আপনার ফোনের Battery Status API –তে স্টোর করা থাকবে।

এবার ধরা যাক, আপনার ফোনের ব্যাটারিতে গোপনে মাইক্রো কন্ট্রোলার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনি যখন ফোনে কাউকে কোনও মেসেজ পাঠাবেন বা কারও সঙ্গে চ্যাট করবেন কিংবা অ্যাকাউন্টে লগইন করার জন্য আইডি, পাসওয়ার্ড টাইপ করবেন, তখন আপনাকে কীপ্যাডে বিভিন্ন কী প্রেস করতে হবে। সেই সময় ব্যাটারি থেকে যে আলাদা আলাদা পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হবে তার যাবতীয় তথ্য ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত মাইক্রো কন্ট্রোলার রেকর্ড করবে। এবার মাইক্রো কন্ট্রোলার বিদ্যুৎ খরচের সেই রেকর্ড করা তথ্য এবং ফোনের Battery Status API –তে রেকর্ড করা তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবে হ্যাকারের কাছে।

এবার ধরা যাক হ্যাকার মাইক্রো কন্ট্রোলারের রেকর্ড করা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখল কোনও এক সময় আপনার ব্যাটারি থেকে ১w, w, ৩w  এবং ৪w বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ কীপ্যাডে কোন কোন লেটার প্রেস করলে হয় সেই তথ্য আপনার ফোনের Battery Status API –তে রেকর্ড করা রয়েছে। সেই তথ্যও মাইক্রো কন্ট্রোলার ইতিমধ্যে হ্যাকারকে পাঠিয়ে দিয়েছে। হ্যাকার তখন Battery Status API –তে রেকর্ড করা তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পারবে যে, ফোনে ১w, w, ৩w  এবং ৪w বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে ‘L’, ‘O’, ‘V’ ‘E’ এই চারটি লেটার টাইপ করার জন্য। এইভাবে আপনি ফোনে কী টাইপ করছেন তা হ্যাকার জানতে পারবে।

এইভাবে শুধু পাসওয়ার্ড বা লগইন আইডি জানাই নয়, আপনি নেট সার্ফ করার জন্য কোন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, কাকে কী SMS পাঠাচ্ছেন, কার সঙ্গে কী চ্যাট করছেন সেসবও জানা সম্ভব।

টেকনোবিটসের নতুন নতুন পোস্টগুলি যদি মিস করতে না চান, তাহলে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে যান, সেখানে ‘Follow’ বাটন ক্লিক করার পর ‘See first’ ক্লিক করুন।



পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।



5 comments:

  1. এটা আশ্চর্যজনক ঘটনা তো!!! ফোনের ব্যাটারিতে মাইক্রো কন্ট্রোলার এর ব্যাপারটা এর আগেও একসময় বলেছিলেন, তবে এটা যে এইভাবে কাজ করে, এটা পড়ে দারুন লাগলো.....
    খুব ভালো পোস্টটা। দারুন একটা তথ্য জানতে পারলাম। নতুন জিনিস শিখলাম। খুব ভালো স্যার। অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. আমি জানতাম না জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  3. অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টিকে এত সরল ভাবে উপস্থাপন করার জন্য।

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট