21 Jul 2020

টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করেন, কিন্তু এই বিষয়গুলি জানেন কি ?

Image courtesy: Amazon
মোবাইল ফোনে আমরা টেম্পারড গ্লাস ব্যবহার করি । কিন্তু তা কেনার সময় আমাদের দোকানদারের কথায় ভরসা করতে হয় । টেম্পারড গ্লাস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো না জানার জন্য কেনার সময় যাচাই করতে পারি না কোন গ্লাস কতটা মজবুত বা সেটা আসল, না নকল । টেম্পারড গ্লাসের প্যাকেটের উপর যে প্রোডাক্ট ইনফরমেশন থাকে, তা কতটা কাজের, না কি সেগুলি ক্রেতাদের বোকা বানানোর জন্য সেই নিয়ে আজ আলোচনা করব । 



টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  



প্রথম যখন বাজারে টেম্পারড গ্লাস এল তখন তার প্যাকেটে লেখা থাকত 2D । অর্থাৎ সেই গ্লাসগুলির ভার্সন নাম্বার ছিল 2D । এখানে 2D মানে টু ডাইমেনশনাল অর্থাৎ গ্লাসের শুধু দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বোঝায় । যেহেতু গ্লাসগুলি খুবই পাতলা ছিল তাই সেটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থই চোখে পড়ত উচ্চতা বা বেধ (অর্থাৎ গ্লাসটি কতটা পুরু) তা খালি চোখে বোঝা যেত না । এই 2D গ্লাসগুলির কোণগুলি ছিল স্ট্রেট । 





এর কিছুদিন পর মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলি ফোনের গেট আপ সুন্দর করার জন্য স্ক্রিনের চারটি কোণ স্ট্রেট না রেখে বেন্ট করল । তাই তখন টেম্পারড গ্লাসের কোণগুলিও বেন্ট করা হল । এই ধরনের টেম্পারড গ্লাসগুলিকে বলা হয় 2.5D গ্লাস । 

Image courtesy:Screenshot


তারও কয়েক বছর পর মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলি গেট আপ আরও ভালো করার জন্য স্ক্রিনের চারটে কোণ বেন্ট করার পাশাপাশি স্ক্রিনের সাইডগুলিও বেন্ট করল অর্থাৎ নিচের দিকে কিছুটা বাঁকিয়ে দিল । সেই ধরনের স্ক্রিনের জন্য যে গ্লাসগুলি তৈরি করা হল সেগুলিকে বলা 3D টেম্পারড গ্লাস । 3D অর্থাৎ থ্রি ডাইমেনশন বা দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতা । এই ধরনের গ্লাসগুলির সাইড নিচের দিকে বেন্ট থাকার ফলে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের পাশাপাশি তার উচ্চতার বিষয়টিও খালি চোখে বোঝা যায় ।
এতো গেল টেম্পারড গ্লাসের আকারের উপর ভিত্তি করে কীভাবে তার ভার্সন নাম্বার ঠিক করা হয় সেই বিষয়টি । এবার বলি টেম্পারড গ্লাসের হার্ডনেস বা সেটি ফোনকে কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম, তার ভিত্তিতেও সেগুলিকে নাম্বার দেওয়া হয় । হার্ডনেসের ভিত্তিতে টেম্পারড গ্লাসগুলির নাম্বার সাধারণত 6H ও 9H । 

টেম্পারড গ্লাস কতটা শক্ত অর্থাৎ তার হার্ডনেস কতটা, তা বিচার করা হয় ‘পেনসিল স্কেলের’ ভিত্তিতে । পেনসিলের শিস তৈরি হয় গ্রাফাইট দিয়ে । সব পেনসিলের শিস একইরকম কঠিন নয়, অর্থাৎ বিভিন্ন পেনসিলের শিসের হার্ডনেস বিভিন্ন । সেই হার্ডনেসের ভিত্তিতে পেনসিলের নাম্বারিং হয় । যেমন, 8H, 7H, 6H ইত্যাদি । এর মধ্যে 9H পেনসিলের শিস সবচেয়ে বেশি হার্ড এবং 9B পেনসিলের শিস সবচেয়ে কম হার্ড । 

Image courtesy: Screenshot


বেশি হার্ড থেকে কম হার্ড অনুসারে পেনসিল স্কেল হল 9H, 8H 7H, 6H, 5H, 3H, 2H, H, F, HB, B, 2B, 3B, 4B, 5B, 6B, 7B, 8B এবং 9B । এই স্কেলের মাধ্যমে মাপা হয় কোনও বস্তুর উপরের তল বা সারফেস কতটা স্ক্র্যাচ বা আঁচড় সহ্য করতে সক্ষম । এজন্য বস্তুর উপর বিভিন্ন পেনসিলের শিস ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ধরে আঁচড় কেটে দেখা হয় দাগ পড়ে কি না । 



ধরা যাক কোনও বস্তুর সারফেসের হার্ডনেস 7B । তার মানে সেই বস্তুটির সারফেস 7B বা তারপরের পেনসিলগুলির শিস (স্কেল অনুসারে 8B এবং 9B)- এর আচড় সহ্য করতে সক্ষম অর্থাৎ সেই পেনসিলগুলি দিয়ে আঁচড় কাটলেও বস্তুটির সারফেসে দাগ পড়বে না । এইভাবে কোনও বস্তুর সারফেসের হার্ডনেস মাপা হয় । সাধারণত টেম্পারড গ্লাসের প্যাকেটে লেখা থাকে 6H । তার মানে 6H বা স্কেলে তারপর যে পেনসিলগুলি রয়েছে তাদের শিস দিয়ে আঁচড় কাটলেও সেই গ্লাসে দাগ পড়বে না । একটু দামি টেম্পারড গ্লাসে লেখা থাকে 9H । পেনসিল স্কেল অনুসারে এটাই কোনও বস্তুর সারফেসের হার্ডনেসের সর্বোচ্চ মাপ । অর্থাৎ ওই টেম্পারড গ্লাসগুলির হার্ডনেস খুবই বেশি । সেগুলির উপর ধাতু, প্লাস্টিক বা নখ দিয়ে আঁচড় কাটলেও দাগ পড়বে না । 






কিন্তু অনেক টেম্পারড গ্লাসের প্যাকেটে লেখা থাকে 11D, 12D, 9D ইত্যাদি । সেগুলির মানে কী ? সেগুলির কোনও মানেই নেই । কোম্পানিগুলি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য সেগুলি লেখে । কারণ 2D, 2.5D ও 3D-র পর টেম্পারড গ্লাসে ডাইমেনশনের ভিত্তিতে আর কোনও ভার্সন নেই আর হওয়াও সম্ভব নয় । কারণ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার পরের ডাইমেনশন হল সময় । টেম্পারড্ গ্লাসের ডিজাইনের সঙ্গে সময়ের তো কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না ।





টেম্পারড গ্লাস কেনার আগে সেটি হাত দিয়ে ধরে দেখবেন মসৃণ কি না । মনে রাখবেন, যে টেম্পারড গ্লাস যত মসৃণ হবে সেটির কোয়ালিটি তত ভালো । এছাড়া টেম্পারড গ্লাস আসল, না নকল তা ধরার জন্য ওয়াটার ড্রপ টেস্ট করতে পারেন । টেম্পারড গ্লাসের উপর এক ফোঁটা জল ফেলে গ্লাসটিকে ধীরে ধীরে কাত করুন । যদি দেখেন জলের ফোঁটা ভেঙে ছড়িয়ে যাচ্ছে তবে বুঝবেন সেটি আসল গ্লাস নয় ।






টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।

টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 

4 comments:

  1. বাঃ বেশ ভালো লাগলো জেনে। এরকমই অনেক তথ্য যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না, শুধুমাত্র আপনার লেখা পড়েই জানা যায়। এরকমই নতুন নতুন টেকনোলজির খবর জানান আমাদের। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  2. আপনাকে অনেকদিন আগে বিভিন্ন সময়ে মেইল করে কম্পিউটার সম্বন্ধিত বিভিন্ন টেকনিক্যাল প্রশ্ন করেছিলাম। আপনি সেগুলো নিয়ে ব্লগে লিখবেন বলেছিলেন। এমনকি আমার সেই প্রশ্নগুলো আপনার যথেষ্টই পছন্দ হয়েছিল এবং আপনি সেই বিষয়ে লেখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত সেগুলো নিয়ে কোনো ব্লগই লিখলেন না। আশা করি আগামী দিনে লিখবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অবশ্যই লিখব আগামীতে । ধন্যবাদ ।

      Delete
  3. Thanks Dada
    Tomar page open korle chharte ichcha kore na
    Onek kichu shikhechi.

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট