26 Jun 2019

ফোন চুরি করে আর লাভ নেই, ধরে ফেলবে CEIR


Photo by Semen Borisov on Unsplash

ভারতে এখন মোবাইল ফোন সংযোগের সংখ্যা কত ? সংখ্যাটি চমকে দেওয়ার মতো । বর্তমানে আমাদের দেশে ১২০ কোটি অ্যাকটিভ সংযোগ রয়েছে । মনে রাখবেন, আমি কিন্তু মোবাইল ফোনের সংখ্যার কথা বলছি না। আমি বলছি সংযোগের কথা। অর্থাৎ বর্তমানে আমাদের দেশে অ্যাকটিভ সিমের সংখ্যা ১২০ কোটি। সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়, চিনের পরেই। সুতরাং এর থেকে আন্দাজ করতে পারা সম্ভব আমাদের দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কী হারে বাড়ছে।



দেশে যে হারে মোবাইল ফোনের সংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে বাড়ছে ফোন চুরির সংখ্যাও। ফোন চুরি আমাদের দুই দিক দিয়ে ক্ষতি করে – আর্থিক ক্ষতি এবং প্রাইভেসির ক্ষতি।
আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চয় ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফোন কেনার পর যদি সেটি ছয় মাসের মধ্যে চুরি হয়ে যায়, তবে ফোনের মালিকের কতটা কষ্ট হয় সেটা একমাত্র যাদের ফোন চুরি হয়েছে তারাই বোঝে।


তবে আমার মতে ফোন চুরি হলে আর্থিক ক্ষতির থেকেও বেশি ক্ষতি হয় প্রাইভেসির। আমরা প্রায় সবাই এখন ফোনে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, মেল, ছবি, পাসওয়ার্ডস, কনট্যাক্টস ইত্যাদি সেভ করে রাখি। অনেকক্ষেত্রে সেগুলি ফোনের দামের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফোন চুরি হলে সেই সমস্ত ডকুমেন্ট, ইমেজ সহ অন্যান্য ডেটা যদি দুষ্কৃতীদের হাতে চলে যায়, তবে তা আমাদের প্রাইভেসির পক্ষে অবশ্যই বিপজ্জনক।

ভারতে ক্রমশ বেড়ে চলা ফোন চুরি ঠেকাতে তাই এবার সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তারা CEIR (Central Equipment Identity Register) তৈরির কাজ শুরু করেছে। 



CEIR কী?


CEIR অর্থাৎ সেন্ট্রাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার হল একটি ডেটাবেস। ভারতে যত মোবাইল ফোন বা অন্যান্য মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে অর্থাৎ যে ডিভাইসগুলিতে অ্যাকটিভ সিম রয়েছে, সেগুলির IMEI নাম্বার এই ডেটাবেসে থাকবে।


IMEI নাম্বার কী?


IMEI (International Mobile Equipment Identity) নাম্বার হল ১৫ সংখ্যার একটি নাম্বার। বিশ্বের প্রতিটি ফোনের আলাদা আলাদা IMEI নাম্বার রয়েছে। তাই এই নাম্বারের সাহায্যে প্রতিটি ফোনকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। কোনও ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করার জন্য অর্থাৎ ফোনটি কোন এলাকায় রয়েছে, তা জানার জন্য এই নাম্বারটি জানা খুবই জরুরি। সেজন্য ফোন চুরি গেলে পুলিশে অভিযোগ জানানোর সময় IMEI নাম্বার জানাতে হয়।

কিন্তু আজকাল ডার্কওয়েবে অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায় যার সাহায্যে কোনও ফোনের IMEI নাম্বার সহজেই পালটে ফেলা সম্ভব। অর্থাৎ ধরুণ আপনার ফোনের IMEI নাম্বার হল 123456789765421। আপনার ফোনটি চুরি হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনি এই IMEI নাম্বার জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ করলেন। পুলিশ সেই IMEI নাম্বারের সাহায্যে ফোনটিকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করবে। কিন্তু আপনার অভিযোগ দায়ের ও পুলিশের ফোন ট্র্যাকিংয়ের মধ্যে বেশ কয়েকদিন (কখনও কখনও সপ্তাহখানেক) কেটে যায় এবং অনেকক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতীরা আপনার ফোনের IMEI নাম্বার চেঞ্জ করে ফেলে। একে বলা হয় IMEI ট্যাম্পারিং বা ক্লোনিং। ধরা যাক আপনার ফোনের সেই নতুন IMEI নাম্বারটি হল 897654211234567। ফলে তখন আর আপনার ফোনের পুরানো অর্থাৎ অরিজিনাল IMEI নাম্বার ব্যবহার করে পুলিশ আপনার ফোনটিকে আর খুঁজে পাবে না। ফলে দুষ্কৃতীরাও ধরা পড়বে না।

এই সমস্যা দূর করতে সরকার CEIR তৈরির কাজ শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই এই ডেটাবেস তৈরি হয়ে যাবে। তখন সরকারের তরফে একটি হেল্পলাইন বা কমপ্লেইন নাম্বার চালু করা হবে। কারও ফোন চুরি হলে সেই ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে সেই নাম্বারে ফোন করে বিষয়টি জানালে তার চুরি যাওয়া ফোনের IMEI নাম্বারটি CEIR ডেটাবেস থেকে ব্লক করে দেওয়া হবে। ফলে সেই ফোনে তখন কোনও সিম কাজ করবে না। অর্থাৎ ফোনটি কার্যত অকেজো হয়ে যাবে।


তা ছাড়া CEIR ডেটাবেসের সাহায্যে ফোনের IMEI ক্লোনিং বা ট্যাম্পারিং বন্ধ করা সম্ভব হবে। কারণ IMEI নাম্বারের সাহায্যে সহজেই জানা সম্ভব সেই ফোনটি কোন কোম্পানির, তার মডেল নাম্বার কত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাই CEIR ডেটাবেসের সাহায্যে প্রতিটি ফোনের IMEI নাম্বারের পাশাপাশি সেই ফোনটির মডেল নাম্বার, কোম্পানির নাম সহ প্রয়োজনীয় তথ্যও জানা যাবে। যখনই সেই ডেটাবেসের সাহায্যে দেখা যাবে যে, কোনও ফোনের IMEI নাম্বার থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ফোনটির মডেল নাম্বার, কোম্পানির নাম ইত্যাদি মিলছে না, তখনই সরকার বুঝতে পারবে যে সেই ফোনটির IMEI নাম্বার ক্লোন বা ট্যাম্পার করা হয়েছে। তখন সেই ফোনটির IMEI ব্লক করে দেওয়া হবে, ফলে ফোনটিতে তখন আর কোনও সিম কাজ করবে না।

CEIR ডেটাবেসে ফোন সহ অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের IMEI নাম্বারগুলিকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে – হোয়াইট লিস্ট, ব্ল্যাক লিস্ট ও গ্রে লিস্ট। 


⇒ হোয়াইট লিস্টে যে সমস্ত ফোন চুরি হয়নি, যাদের IMEI নাম্বারের সঙ্গে ফোনের কোম্পানির নাম ও মডেল নাম্বার ম্যাচ করছে সেগুলি রাখা হবে। 

⇒ যে সমস্ত ফোন বা মোবাইল ডিভাইস চুরি হয়েছে বা হারিয়ে গেছে, সেগুলির IMEI নাম্বার ব্ল্যাক লিস্টে রাখা হবে।

⇒ যে সমস্ত ফোন বা মোবাইল ডিভাইসের IMEI নাম্বারগুলি সরকারের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হবে (অর্থাৎ যে নাম্বারগুলি ক্লোনড বা ট্যাম্পারড বলে সন্দেহ করা হচ্ছে) এবং তদন্তের আওতায় থাকবে, সেগুলিকে গ্রে লিস্টের আওতায় রাখা হবে। 


চোরাই ফোন ব্যবহার করছেন না তো?


আমরা অনেকেই অনেক সময় সস্তায় পাওয়া যায় বলে সেকেন্ডহ্যান্ড ফোন কিনি। কিন্তু সেই ফোনটি আদৌ চোরাই মাল কি না, তা নিয়ে আমরা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাই না। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে CEIR চালু হলে এই ধরনের চোরাই ফোনগুলিকে কিন্তু ব্লক করে দেওয়া হবে এবং পুলিশি তদন্তের মুখেও আপনাকে পড়তে হতে পারে। তাই যদি সেকেন্ডহ্যান্ড ফোন ব্যবহার করেন, তাহলে এখনই যাচাই করে নিন আপনার ফোনটি চোরাই কি না, অর্থাৎ সেটির IMEI নাম্বার ক্লোন বা ট্যাম্পার করা হয়েছে কিনা।


কীভাবে পরীক্ষা করবেন ?

প্রথমে ফোনে ডায়াল করুন *#06# । ডায়াল করার পর ডিসপ্লে স্ক্রিনে আপনার ফোনের IMEI নাম্বারটি দেখতে পাবেন। এছাড়া ফোনের বাক্সের গায়ে এবং ব্যাটারি কেসের ভেতরেও IMEI নাম্বার লেখা থাকে। নাম্বারটি জানার পর ইন্টারনেটে সার্চবক্সে লিখুন imei.info । সাইটটি ওপেন হলে সেখানে সার্চবক্সে আপনার ফোনের IMEI নাম্বারটি টাইপ করুন এবং নীচে ‘চেক’ বাটনটি ট্যাপ করুন। সার্চ রেজাল্ট ফোনের কোম্পানির নাম, মডেল নাম্বার ইত্যাদি শো করবে। সেই তথ্যগুলি আপনার ফোনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। যদি মিলে যায়, তবে আপনার ফোনের IMEI ট্যাম্পার বা ক্লোনিং হয়নি। কিন্তু যদি না মেলে তবে সাবধান! অবিলম্বে সেই ফোন ব্যবহার বন্ধ করুন। 

 

টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে। টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


8 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
    Replies
    1. My comment deleted by myself for my profile check.

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
    Replies
    1. My comment deleted by myself for error and mistakes in writing.

      Delete
  3. খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। দারুন লাগলো লেখাটা পড়ে। আপনার লেখা পড়ার জন্য রোজই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকি। আজ অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। আপনি ভালো থাকবেন স্যার।

    ReplyDelete
  4. স্যার, এখানে একটা প্রশ্ন আছে। CEIR চালু হলে IMEI ক্লোন করা হয়েছে, এমন ফোনগুলিতে কোন সিম কার্ড কাজ করবে না।
    কিন্তু, কেউ যদি ফিজিক্যাল সিম ব্যবহার না করে যদি ভার্চুয়াল সিম ব্যবহার করে, তবে কি ফোনগুলি কাজ করবে ?

    ReplyDelete
  5. না, ভার্চুয়াল সিমও কাজ করবে না। যখনই কোনও ফোন চুরি যাবে তখন সেই ফোনটির IMEI নম্বর দেশের সমস্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডারকে CEIR জানিয়ে দেবে। ফলে প্রতিটি কোম্পানির নেটওয়ার্কই ফোনটিকে ব্যান করবে। ফলে তখন কোনও সিমই সেই ফোনে কাজ করবে না। কারণ ভার্চুয়াল সিমের কানেকশনও মোবাইল নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলিই দেয়।

    ReplyDelete
  6. This comment has been removed by a blog administrator.

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট