Image Credit: Pixabay |
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে অ্যাপলের iOS অপারেটিং সিস্টেমের অন্যতম পার্থক্য হল সিকিউরিটি। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সিকিউরিটি iOS – এর থেকে অনেকটাই দুর্বল। তাই অ্যাপলের আইফোন বা আইপ্যাডে অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপের সেভাবে প্রয়োজন না হলেও (আমি আমার অ্যাপলের ডিভাইসে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করি না এবং এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি), অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং ট্যাবে কিন্তু অ্যান্টিভাইরাস অবশ্যই প্রয়োজন। বিষয়টি অনেকেই জানেন, তবু টেকনোবিটসের পাঠকদের মধ্যে যাঁরা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করেন, তাঁদের আরও একবার বলছি, অবশ্যই গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ডাউনলোড করে সেটি ব্যবহার করুন। কিন্তু সমস্যা হল গুগলের প্লে স্টোরে যে সমস্ত অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ রয়েছে সেগুলির অধিকাংশই ভুয়ো!
কিন্তু প্রশ্ন হল, কীভাবে বুঝবেন প্লে স্টোরে কোন অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলি ভুয়ো ?
অস্ট্রিয়ার AV-Comparatives নামে একটি কোম্পানি প্রতিবছর প্লে স্টোরে যে সমস্ত অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ রয়েছে সেগুলিকে টেস্ট করে দেখে আদৌ সেগুলি কার্যকরী কি না। এবছরও তারা প্লে স্টোরের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলি টেস্ট করেছে এবং গত ৩ মার্চ তারা তাদের সেই টেস্টের রিপোর্ট পাবলিশ করেছে।
এবছর AV-Comparatives কোম্পানি টেস্টের জন্য প্লে স্টোরের ২৫০টি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ বেছে নিয়েছিল। সেই অ্যাপগুলি দিয়ে বিশ্বের কোটি কোটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ট্যাব ব্যবহারকারীরা তাঁদের ডিভাইস নিয়মিত স্ক্যান করেন। কিন্তু সত্যিই কি সেই অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ট্যাবকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম? টেস্ট রিপোর্ট কিন্তু বলছে, না, অধিকাংশ অ্যাপই সক্ষম নয়।
টেস্ট রিপোর্ট অনুসারে সেই ২৫০টি অ্যাপের মধ্যে ১৬০টিরও বেশি অ্যাপ আদৌ কোনও কাজের নয়। অর্থাৎ ২৫০টি অ্যাপের দুই তৃতীয়াংশের বেশি অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ কার্যত ভুয়ো। সেগুলি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে সুরক্ষা দেওয়ার বদলে উলটে ক্ষতি করে। এই ভুয়ো অ্যাপগুলি দিয়ে ফোন বা ট্যাব স্ক্যান করলে এমন অনেক সাধারণ ফাইলকে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার হিসেবে ডিটেক্ট করে যেগুলি আদৌ ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার নয়। পাশাপাশি এই ভুয়ো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলি ফোন বা ট্যাবে স্টোর করা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে এবং ফোনে ইনস্টলড অন্যান্য অ্যাপকে ঠিকমতো কাজ করতে দেয় না।
আরও ভয়ংকর হল, প্লে স্টোরের সেই অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলির অধিকাংশের রেটিং চার বা তার বেশি এবং অনেকগুলির ডাউনলোডিং রিপোর্ট (যত সংখ্যক ডিভাইসে অ্যাপগুলি ডাউনলোড করা হয়েছে) ১ মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ লাখ বা তার বেশি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেই রেটিং এবং ডাউনলোডিং রিপোর্টও ভুয়ো!
চলতি বছরের জানুয়ারিতে AV-Comparatives প্লে স্টোরের অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলিকে টেস্ট করেছে। টেস্ট করার জন্য তারা ২০০০ বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার ও ভাইরাসের স্যাম্পল বেছে নিয়েছিল। টেস্ট করে দেখে গেছে প্লে স্টোরের মাত্র ২৩টি অ্যাপ ১০০ শতাংশ কার্যকরী অর্থাৎ সেগুলি ফোনে বা ট্যাবে হামলা চালানো সমস্ত ম্যালওয়্যার ও ভাইরাসকে ঠেকাতে সক্ষম। এই অ্যাপগুলির মধ্যে অন্যতম হল ESET, AVG, AVAST, AVIRA, Bitdefender, Kaspersky Lab, McAfee, Symantec (Nortorn) ইত্যাদি। নিচের তালিকাটি দেখুন।
Image Credit: AV-Comparatives |
এখন প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে ভুয়ো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলি গুগলের নজর এড়িয়ে কীভাবে প্লে স্টোরে রয়েছে? তবে কি প্লে স্টোরে ভুয়ো অ্যাপ যাচাই করার জন্য গুগলের যে নজরদারি সিস্টমে রয়েছে, তা খুবই দুর্বল। গুগল এই প্রশ্নের এখনও উত্তর দেয়নি। তবে গতবছরেও AV-Comparatives প্লে স্টোরে একাধিক ভুয়ো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ খুঁজে পেয়েছিল। তারপর গুগল তাদের প্লে স্টোর থেকে ৩২টি ভুয়ো অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপকে সরিয়ে দেয়। এবছর AV-Comparatives কোম্পানির টেস্ট রিপোর্ট দেখে গুগল কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার।
No comments:
Post a Comment