15 Mar 2019

ব্যবহার করুন cVIGIL অ্য়াপ, নির্বাচন কমিশনের হয়ে নজরদারি চালান

Image Credit: Election Commission of Indai

ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় উৎসব কোনটি? না, দোল, ইদ, দূর্গাপুজো এসব নয়। উত্তর - লোকসভা ভোট। কারণ একমাত্র এই ‘উৎসব’-এ এদেশের ধনী, দরিদ্র, হিন্দু, মুসলিম নির্বিশেষে অংশ নেয়। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। বিশ্বের এই বৃহত্তম গণতন্ত্রে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভবত বিশ্বের অন্যতম কঠিন কাজ। তাই এবার সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য দেশের নির্বাচন কমিশন বিশেষ একটি মোবাইল অ্যাপের সাহায্য নিচ্ছে। অ্যাপটির নাম cVIGIL। 



cVIGIL অর্থাৎ citizen vigilant। যার অর্থ সজাগ নাগরিক। অর্থাৎ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোথাও কোনও গন্ডগোল হচ্ছে কি না বা আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, তা যদি কোনও সাধারণ নাগরিকের চোখে পড়ে, তবে তিনি cVIGIL অ্যাপটির সাহায্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারবেন। 


কী কী বিষয় একজন সাধারণ নাগরিক এই অ্যাপের সাহায্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে পারবেন?


মূলত আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়গুলি এই অ্যাপের সাহায্যে নির্বাচন কমিশনকে জানানো যাবে। আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মধ্যে যে বিষয়গুলি পড়ছে, তা হল –


কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতার তরফে ভোটারদের টাকা বা অন্য কোনও উপহার দেওয়া কিংবা মদ খাওয়ানো, ভোটারদের হুমকি দেওয়া বা মারধর করা, অস্ত্র নিয়ে মিছিল বা প্রচার, সরকারি ভবনগুলিতে রাজনৈতিক দলের ব্যানার, ফ্লেক্স ইত্যাদি লাগানো, বাড়ির মালিকের অনুমতি ছাড়া দেওয়াল লিখন, ভোটের প্রচারে বিশেষ কোনও জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা, বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে সংবাদমাধ্যমে পেইড নিউজ বা সোশাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ পোস্ট করা ইত্যাদি। যদি এই ধরণের কোনও ঘটনা আপনার চোখে পড়ে, তবে সেই ঘটনার ছবি তুলে বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে আপনি cVIGIL অ্যাপের সাহায্যে নির্বাচন কমিশনের অফিসে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। 


কীভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করবেন


অ্যাপটির শুধু অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন রয়েছে। অর্থাৎ অ্যাপলের আইফোন বা আইপ্যাড ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন না। অ্যাপটি প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ফোনে ইনস্টল করুন। 





অ্যাপটি ওপেন করলে দেখবেন এটির (UI) ইউজার ইন্টারফেসের হোম পেজে মাত্র দুটি আইকন ও দুটি অপশন রয়েছে। আইকন দুটি হল ‘Photo’ এবং ‘Video’। অপশন দুটি হল ‘YOUR NAME HERE’ এবং ‘want to send it anonymously’। অর্থাৎ আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘনের কোনও ঘটনা আপনার চোখে পড়লে আপনি ‘Photo’ বা ‘Video’ আইকন ট্যাপ করে মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ফটো তুলতে পারবেন বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং করতে পারবেন। তারপর সেটি আপনি নিজের নাম, ঠিকানা সহ বা নিজের পরিচয় গোপন করে কমিশনের অফিসে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। ছবি বা ভিডিয়োর সঙ্গে আপনাকে আপনার অভিযোগটি সংক্ষেপে লিখতে হবে। 


যদি নিজের পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানাতে চান, তবে অ্যাপটিতে আপনার নাম, রাজ্য, জেলা, পিনকোড, বিধানসভা কেন্দ্রের নাম ও মোবাইল ফোন নাম্বার ইনপুট করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আর যদি নিজের পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানাতে চান, তবে রেজিস্ট্রেশন করার দরকার নেই।


কমিশন কীভাবে ব্যবস্থা নেবে?


আপনি যখন cVIGIL অ্যাপের সাহায্যে কোনও ঘটনার ছবি তুলবেন বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং করবেন। তখন cVIGIL অ্যাপ সেই ছবি বা ভিডিয়োর সঙ্গে ফোনের লোকেশন (অর্থাৎ যে জায়গায় ছবি বা ভিডিয়োটি তোলা হয়েছে) ট্যাগ করে সেটি ফোনে সেভ করবে এবং সেটি আপনার লোকেশনের সবচেয়ে কাছে নির্বাচন কমিশনের যে রিটার্নিং অফিসার রয়েছেন, তাঁর অফিসে পাঠিয়ে দেবে। 


Image Credit: Election Commission of India



আপনার অভিযোগ পাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে কমিশনের ফ্লাইং স্কোয়াডকে লোকেশনের (যে জায়গার ছবি আপনি পাঠিয়েছেন) উদ্দেশে রওনা দিতে হবে এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছাতে হবে। ফ্লাইং স্কোয়াড ঘটনাস্থলে গিয়ে আপনার অভিযোগের সত্যতা যাচাই করবে। এজন্য তাদের সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হবে। উপরের ছবিটি দেখলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে।


এরপর ফ্লাইং স্কোয়াড রিটার্নিং অফিসারের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসারকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট। রিটার্নিং অফিসার রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে আপনার অভিযোগটি সঠিক কি না। যদি সঠিক হয়, তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করবে কমিশন। 


এরপর আপনার অভিযোগের স্ট্যাটাস cVIGIL অ্যাপের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। আপনার অভিযোগটি সঠিক, নাকি সঠিক নয় এবং সঠিক হলে সেই বিষয়ে কমিশন কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সেই সমস্ত তথ্য আপনাকে ‘স্ট্যাটাস’ রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হবে। এই স্ট্যাটাস রিপোর্ট আপনাকে জানানো হবে আপনার অভিযোগ দায়ের করার ১০০ (৫+১৫+৩০+৫০)মিনিটের মধ্যে।





তবে মনে রাখবেন, আপনি যদি নিজের পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানান, তবেই আপনি স্ট্যাটাস রিপোর্ট পাবেন। পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ জানালে স্ট্যাটাস রিপোর্ট পাবেন না। অ্যাপটির ডাউনলোড লিংক টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের ‘ডাউনলোড’ নোটে রয়েছে।





টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


No comments:

Post a Comment

জনপ্রিয় পোস্ট