12 Feb 2019

অলিম্পিকের পদক তৈরিতে কাজে লাগছে পুরানো ফোন


Image Credit : Pixabay

দামি ধাতুর মধ্যে সোনা ও রুপো অন্যতম। তার কারণ এই ধাতুগুলির একাধিক গুণ (অর্থাৎ অলঙ্কার তৈরি করা ছাড়াও সেগুলি বিভিন্ন কাজে লাগে) রয়েছে এবং ধাতুগুলির পরিমাণ প্রকৃতিতে খুবই কম। তাই সোনা ও রুপোর দাম দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু সেই দিন হয়তো খুব দূরে নয়, যখন কোটি কোটি টাকা দাম দিলেও সোনা, রুপো আর পাওয়া যাবে না। কারণ প্রকৃতিতে সোনা, রুপোর পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমতে শুরু করেছে। এই কমার কারণ প্রতিবছর আমরা প্রচুর পরিমাণ সোনা ও রুপো নষ্ট করছি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। সোনা ও রুপো এত দামি ধাতু হওয়া সত্ত্বেও আমি, আপনি সেগুলি নষ্ট করছি। আর তার কারণ হল আপনার, আমার মোবাইল ফোন। 


টেকনোবিটসের ব্লগ এখন ফেসবুক ছাড়াও পাবেন  টুইটার,  টেলিগ্রাম  ও  ইনস্টাগ্রামে  


সোনা, রুপো, তামা বা ব্রোঞ্জ হল সুপরিবাহী ধাতু। অর্থাৎ বিদ্যুৎ পরিবহনে সক্ষম। তা ছাড়া সোনার একটি বিশেষ গুণ রয়েছে। সেটি হল এর অক্সিডেশন হয় না। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সঙ্গে সোনার রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না। তাই সোনায় জং (অন্যান্য ধাতু যেমন লোহা, রুপো, তামা ইত্যাদির অক্সিডেশন হয়। তাই জং ধরে সেগুলির ক্ষয় হয়) ধরে না এবং ক্ষয় হয় না। সোনার এই বিশেষ গুণগুলির জন্য মোবাইল ফোনের সার্কিটের কিছু অংশে বিদ্যুৎপরিবাহী হিসেবে সোনা ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া সার্কিটে রুপো, তামা বা ব্রোঞ্জও বিদ্যুৎপরিবাহী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।




গয়না তৈরিতে যে সোনা ও রুপো ব্যবহৃত হয় সেগুলির রিসাইক্লিং হয়। অর্থাৎ সেই সোনা নষ্ট হয় না। কারণ গয়না কেউ ফেলে দেন না – হয় সেগুলি পরেন, কিংবা পুরানো গয়নার সোনা দিয়ে নতুন গয়না তৈরি করেন। কিন্তু ফোন যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন আমরা সেগুলি বাড়িতে ফেলে রাখি, তারপর একসময় আবর্জনা হিসেবে ডাস্টবিনে ফেলে দেই। এইভাবে সেই ফোনে থাকা সোনা, রুপোও আমরা ফেলে দেই বা নষ্ট করি।


বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মোবাইল ফোনের রিসাইক্লিং সেন্টার রয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর যে পরিমাণ নষ্ট বা পুরানো মোবাইল ফোন আমরা ফেলে দেই, তার মাত্র ১০ শতাংশ ওই সেন্টারগুলিতে পৌঁছায়। অর্থাৎ বাকি ৯০ শতাংশ ফোনে যে সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জের মতো মূল্যবান ধাতু থাকে, সেগুলি চিরকালের জন্য আমরা নষ্ট করে ফেলি। এর ফলে প্রকৃতিতে সোনা, রুপোর পরিমাণ ক্রমশ কমছে।


এবার আপনি হয়তো ভাবছেন, একটা ফোনে আর কতটুকুই বা সোনা, রুপো থাকে। এটা সত্যি যে খুবই অল্প পরিমাণ সোনা, রুপো ইত্যাদি ধাতু থাকে। যদি আইফোনের কথা ধরি, তবে পরিমাণটা হল ০.০৩৪ গ্রাম সোনা এবং ০.৩৪ গ্রাম রুপো। অন্যান্য কোম্পানির ফোনেও প্রায় একই পরিমাণ সোনা ও রুপো থাকে। পরিমাণটা সত্যিই কম। কিন্তু ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ফোনে এই পরিমাণটা হল ৩৪ কেজি সোনা ও ৩৪০ কেজি রুপো। 


আরও একটা তথ্য। সেটা হল বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এবং তাঁরা গড়ে ১১ মাস পরপর পুরানো ফোন ফেলে দিয়ে নতুন ফোন কেনেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন প্রতিবছর কী পরিমাণ সোনা, রুপো ইত্যাদি ধাতু ফোন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেগুলির মাত্র ১০ শতাংশই রিসাইক্লিং সেন্টারের মাধ্যমে আমরা ফিরে পাই। 


সুতরাং বিষয়টি যে উদ্বেগজনক সন্দেহ নেই। তাই টোকিও অলিম্পিক (২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে গ্রীষ্মকালীন অল্পিম্পিক হবে) কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজয়ীদের যে পদক দেওয়া হবে সেগুলি পুরানো ফোন থেকে বের করা সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি করা হবে। 


অলিম্পিক কমিটি জাপানের নাগরিকদের কাছে আবেদন করেছিল তাঁরা যেন তাঁদের পুরানো ফোনগুলি ফেলে না দিয়ে জমা দেন। পুরানো ফোন জমা নেওয়ার জন্য অলিম্পিক কমিটির জাপানের বিভিন্ন শহরে একাধিক সেন্টার খুলেছে। কমিটির আবেদনে সাড়া ইতিমধ্যে জাপানিরা প্রায় ৫০ লাখ পুরানো ফোন জমা দিয়েছেন। 




কমিটির লক্ষ্য পদক তৈরির জন্য পুরানো ফোনগুলি থেকে প্রায় ৩০ কেজি সোনা, ৪১০০ কেজি রুপো ও ২৭০০ কেজি ব্রোঞ্জ বের করা। কমিটি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে তারা প্রায় ২৮ কেজি সোনা, ৩৫০০ কেজি রুপো এবং ২৭০০ কেজি ব্রোঞ্জ বের করে ফেলেছে। অর্থাৎ ব্রোঞ্জের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে, সোনা ও রুপোর লক্ষ্যমাত্রাও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পূরণ হবে বলে কমিটি জানিয়েছে। টোকিও অলিম্পিক কমিটির এই উদ্যোগ অভিনব ও অসাধারণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সুতরাং এরপর থেকে আপনার নষ্ট বা পুরানো হয়ে যাওয়া ফোনটি ফেলে দেওয়ার আগে দু’বার ভাবুন।




টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


3 comments:

  1. কিন্তু আমাদের দেশে আমরা পুরোনো ফোন জমা দেবই বা কোথায়? আর আমাদের দেশে সেইরকম সাধু উদ্যোগই বা কে নেবে?

    ReplyDelete
  2. জাপানের মতো ভাবার লোক কোথায়, এ দেশে!

    ReplyDelete
  3. জাপানের মতো ভাবার লোক কোথায় এই দেশে?

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট