Image Credit: Samsung |
২০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সান ফ্রানসিসকোয় স্যামসাঙ কোম্পানি ‘Unpacked 2019’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। চলতি বছরে স্যামসাঙ তাদের গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন কী কী ফোন আনতে চলেছে, সেগুলির দাম কত পড়বে, কবে ফোনগুলি বাজারে পাওয়া যাবে সেই সমস্ত তথ্য জানানোর জন্যই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। অনুষ্ঠানে গ্যালাক্সি সিরিজের চারটি ফোন দর্শকদের সামনে আনা হয়। সেগুলি হল S10e, S10, S10+ এবং গ্যালাক্সি ফোল্ড। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল স্যামসাঙের গ্যালাক্সি ফোল্ড ফোনটি।
গত বছরের শেষের দিকে স্যামসাঙ তাদের ডেভেলপার কনফারেন্সে প্রথম জানিয়েছিল যে, তারা ফোল্ডেবল ফোন আনতে চলেছে। সেই সময় ফোনটির একটি ছবিও সামনে আনে স্যামসাঙ। কিন্তু ফোনটির স্পেসিফিকেশন, দাম ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলেনি। ‘Unpacked 2019’ অনুষ্ঠানে অবশ্য ফোনটি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সবার কাছে তুলে ধরে স্যামসাঙ।
স্ক্রিন
ফোনটি যখন ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে (সিঙ্গল স্ক্রিন), তখন স্ক্রিনের সাইজ ৪.৬ ইঞ্চি। এই স্ক্রিনটি HD+ সুপার অ্যামোলেড। ভাঁজ খোলা অবস্থায় (ডাবল স্ক্রিন) ফোনের স্ক্রিনের সাইজ ৭.৩ ইঞ্চি। এই স্ক্রিনটি QXGA+ (QHD+) ডায়নামিক অ্যামোলেড।
ব্যাটারি
ফোনটির দুটি ভাগেই ব্যাটারি রয়েছে। দুটি ব্যাটারির মোট ক্ষমতা ৪৩৮০ mAh। ফোনটিতে ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি ফোনটি নিজেও ওয়্যারলেস চার্জার ম্যাট হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ অন্য কোনও ফোনে যদি ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের সুবিধা থাকে, তবে সেই ফোনটিকে চার্জ করার জন্য গ্যালাক্সি ফোল্ড ফোনের উপর বসিয়ে দিলেই হবে। গ্যালাক্সি ফোল্ড চার্জিং ম্যাট হিসেবে কাজ করে সেই ফোনটিকে চার্জ করবে।
ব়্যাম ও স্টোরেজ
ফোনে ব়্যাম ১২ GB এবং ইন্টারনাল স্টোরেজের পরিমাণ ৫১২ GB। তবে এক্সটারনাল স্টোরেজের কোনও সুবিধা নেই অর্থাৎ এসডি কার্ড স্লট নেই।
অ্যাপ মাল্টি টাস্কিং
ফোনটিকে যখন ভাঁজ খোলা অবস্থায় ব্যবহার করবেন, তখন স্ক্রিনে একই সঙ্গে তিনটি অ্যাপ ওপেন করে কাজ করতে পারবেন।
অ্যাপ কন্টিনিউটি
এটি এই ফোনের একটি বিশেষ ফিচার। ধরা যাক সিঙ্গল স্ক্রিনে অর্থাৎ ফোনটি যখন ভাঁজ করা অবস্থায় রয়েছে তখন সেটিতে আপনি ইউটিউব ভিডিয়ো দেখছিলেন। এবার ফোনটির ভাঁজ যখন খুলবেন, তখন সিঙ্গল স্ক্রিনে ভিডিয়োটি ঠিক যতদূর পর্যন্ত দেখেছেন, ঠিক তার পর থেকে সেটি ডাবল স্ক্রিনে প্লে হবে। সমস্ত অ্যাপের ক্ষেত্রেই এই কন্টিনিউটি ফিচারের সুবিধা রয়েছে।
ক্যামেরা
ফোনটিতে মোট ছয়টি ক্যামেরা রয়েছে। ফোনটির পেছনে রয়েছে তিনটি ক্যামেরা। সেগুলির ক্ষমতা ১৬ MP, ১২ MP ও ১২ MP। ফোনটির সামনে রয়েছে একটি সেলফি ক্যামেরা। তার ক্ষমতা ১০ MP। এছাড়া ফোনটির ভেতরে ডাবল স্ক্রিনের উপরেও দুটি ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলির ক্ষমতা ১০ MP ও ৮ MP।
অপারেটিং সিস্টেম
ফোনটিতে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড পাই অপারেটিং সিস্টেম। তবে সিঙ্গল স্ক্রিন ও ডাবল স্ক্রিনে একসঙ্গে যাতে কাজ করতে পারে সেজন্য স্যামসাঙ UI (ইউজার ইন্টারফেস)-এর বিশেষ পরিবর্তন করেছে।
রং
ফোনটি পাওয়া যাবে চারটি রঙে। সেগুলি হল স্পেস সিলভার, কসমস ব্ল্যাক, মার্টিয়ান গ্রিন ও অ্যাস্ট্রো ব্লু।
তারিখ
ফোনটি অ্যামেরিকার বাজারে আসবে ২৬ এপ্রিল। ইউরোপে পাওয়া যাবে ৩ মে।
দাম
ফোল্ডেবল ফোন বাজারে আনার জন্য এখন প্রতিটি মোবাইল ফোন কোম্পানিই চেষ্টা করছে। তাদের মধ্যে স্যামসাঙ প্রথম এই ধরণের ফোন বাজারে নিয়ে এল। তাই ফোনটি মোটেই সস্তায় পাওয়া যাবে না। ফোনটির দাম রাখা হয়েছে ১৯৮০ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজাপ টাকা।
এত দাম দিয়ে ফোন কেনা উচিত?
স্যামসাঙের এই ফোনটি আমরা পকেটে যে মানিব্যাগ রাখি অনেকটা সেরকম। এক্ষেত্রে বার বার ফোনটির ভাঁজ খুললে ও বন্ধ করলে স্ক্রিনের উপর ভাঁজের দাগ পড়া স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে ফোনটির ডাবল স্ক্রিনের ডিসপ্লেতে সমস্যা হতে পারে। ‘Unpacked 2019’ অনুষ্ঠানে কিন্তু ফোনটির ডাবল স্ক্রিনের মাঝ বরাবর এমন লম্বালম্বি ভাঁজের দাগ দেখা গেছে। তাই এত টাকা দিয়ে এখনই এই ধরণের ফোন কেনা আমার মতে বোকামি।
কারণ ফোল্ডেবল ফোনের টেকনোলজি নিয়ে সবে কাজ শুরু হয়েছে। এই টেকনোলজির উন্নতির জন্য এখনও অনেক কাজ বাকি। অ্যাপল সহ অন্য কোম্পানিগুলিও এখন ফোল্ডেবল ফোনের টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছে। অ্যাপল ইতিমধ্যে তাদের ফোল্ডেবল ফোনের জন্য পেটেন্টের আবেদন করেছে। সম্ভবত এবছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরের প্রথমে তারা ফোল্ডেবল ফোন বাজারে আনবে। এছাড়া চিনের শিয়াওমি কোম্পানিও সম্ভবত চলতি বছরেই তাদের ফোল্ডেবল ফোন লঞ্চ করবে। তাই এখনই স্যামসাঙের এই ফোনের পেছনে এত টাকা খরচ করার কোনও কারণ দেখছি না। যদি কেউ ফোল্ডেবল ফোন কিনতেই চান তবে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করুন।
No comments:
Post a Comment