23 Feb 2019

বিশ্বের প্রথম মোবাইল ভাইরাস কিন্তু আমাদের উপকার করেছিল!

২৩ ফেব্রুয়ারি। আজকের দিনটা মোবাইল ফোনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কারণ আজ থেকে ১৩ বছর আগে ২০০৫ সালের এই দিনে প্রথম মোবাইল ফোন ভাইরাসের খোঁজ মিলেছিল। ভাইরাসটির নাম ছিল ক্যাবির (Cabir)। ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা শুধুমাত্র কম্পিউটার ভাইরাসের কথাই জানতাম। বিভিন্ন কোম্পানি তাই শুধু কম্পিউটারে ভাইরাসের হামলা ঠেকানোর জন্য তখন অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করত। ফলে ক্যাবির-এর হামলা ঠেকানোর জন্য তখন কোনও অ্যান্টিভাইরাস ছিল না। 



ক্যাসপারস্কি


ক্যাবির ভাইরাসটির খোঁজ প্রথম পেয়েছিল ক্যাসপারস্কি অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি। ক্যাস্পারস্কি রাশিয়ার কোম্পানি। ফ্রান্সে ক্যাস্পারস্কির একটি অফিস রয়েছে। সেই অফিসের ইঞ্জিনিয়াররা প্রথম ক্যাবির ভাইরাসটির খোঁজ পেয়েছিল। 





ক্যাস্পারস্কি এখন কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের জন্য অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করে। কিন্তু ২০০৫ সালে যখন প্রথম ক্যাবির ভাইরাসটির খোঁজ মিলেছিল, তখন সেটিকে ঠেকানোর জন্য ক্যাস্পারস্কির কাছে (এবং অন্য অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলির কাছেও) কোনও অ্যান্টিভাইরাস ছিল না।


সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেম


২০০৫ সালে আমরা ব্যবহার করতাম ফিচার ফোন। তখনও স্মার্ট ফোনের যুগ শুরু হয়নি। ফিচার ফোনগুলিতে মূলত দুই ধরণের ওএস (অপারেটিং সিস্টেম) ব্যবহার করা হত। সেগুলি হল Symbian OS এবং Blackberry OS। সেই সময় দামি ফোন বলতে ছিল কানাডার ব্ল্যাকবেরি কোম্পানির ফোন। এখন যেমন আইফোন, তখন ব্ল্যাকবেরি ফোন ছিল স্ট্যাটাস সিম্বল। এই ফোনগুলির অপারেটিং সিস্টেমের নাম Blackberry OS। আর সাধারণ ফিচার ফোনগুলিতে ব্যবহার করা হত Symbian OS। সেই সময় মূলত নোকিয়া, সিমেন্স বা সোনি এরিকসন কোম্পানির ফিচার ফোন লোকে ব্যবহার করত। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল নোকিয়ার ফোন। ক্যাবির তৈরি করা হয়েছিল এমন ভাবে যে সেটি শুধুমাত্র Symbian OS-কে অ্যাটাক করত। অর্থাৎ ভাইরাসটি সাধারণ ফিচার ফোনের উপর হামলা চালাত, ব্ল্যাকবেরির ফোন তার হামলার আওতার বাইরে ছিল।


হামলার পদ্ধতি


ক্যাবির ভাইরাসের ফাইলটির নাম ছিল Caribe.sis। ক্যাবির হামলা চালিয়ে প্রথমে Caribe.sis ফাইলটিকে ফোনে ইনস্টল করত। এরপর যখনই কথা বলতে বা এসএমএস পাঠাতে ফোনটিকে টার্ন 

Image Credit: F-secure


অন করা হত, ক্যাবির ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে উঠত এবং ফোনের ডিসপ্লেতে একটি মেসেজ শো করত। সেই মেসেজে (সঙ্গের ছবিটি দেখুন) লেখা থাকত ‘Caribe’(ক্যারিব)। এই নামটিকে একটু পালটে ক্যাস্পারস্কির ইঞ্জিনিয়াররা ভাইরাসটির নাম রেখেছিল ক্যাবির।


মাধ্যম ছিল Bluetooth


ক্যাবির ভাইরাসটি এক ফোন থেকে অন্য ফোনে ছড়াত Bluetooth-এর মাধ্যমে। কোনও ফোনে ভাইরাসটি হামলা চালানোর পর সেটি সার্চ করতে শুরু করত আশপাশের আর কোনও ফোনে Bluetooth অন রয়েছে কিনা। যদি অন থাকত তবে ভাইরাসটি Bluetooth-এর মাধ্যমে সেই ফোনেও Caribe.sis ফাইলটিকে ইনস্টল করে দিত। 


29a


ক্যাবির ভাইরাসটি কে বা কারা তৈরি করেছিল তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান সম্ভবত কোনও একজন ব্যক্তি নয়, ‘29a’ গ্রুপ ভাইরাসটি তৈরি করেছিল। এই গ্রুপটি বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস তৈরিতে যথেষ্ট দক্ষ ছিল। 

গ্রুপটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। এই গ্রুপের মেম্বার কারা কারা ছিল তা আজও সঠিকভাবে জানা যায়নি। যেমন, জানা যায়নি কেন তারা গ্রুপের নাম রেখেছিল 29a। সম্ভবত ৬৬৬ সংখ্যাটি এই গ্রুপের কাছে কোনও বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ৬৬৬ সংখ্যাটিকে যদি হেক্সাডিসেমল ফর্ম্যাটে কনভার্ট করা যায় তবে সেটা হয় 29a।

এই গ্রুপটি অসম্ভব শক্তিশালী কিছু ভাইরাস তৈরি করেছিল যেমন, Happy99, Hybris, Esperanto ইত্যাদি। তাদের ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস ছিল 29a.islatortuga.com। ২০০৮ সালে গ্রুপটি বন্ধ হয়ে যায়।


ক্ষতি নয়, সতর্কতা


যে বা যারাই ক্যাবির ভাইরাসটি তৈরি করে থাকুক না কেন, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ছিল কারও ক্ষতি নয়, বরং সতর্ক করা। কারণ ক্যাবির ভাইরাসটি ফোনে হামলা চালালেও ফোনের কনট্যাক্ট লিস্ট ডিলিট করে দেওয়া বা গোপনে এসএমএস পড়া কিংবা অন্য কোনও ক্ষতি করত না। যদি সেটা করত তবে বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে যেত। কারণ আগেই বলেছি, সেই সময় এই ভাইরাসটি ঠেকানোর জন্য কোনও অ্যান্টিভাইরাস ছিল না। 




ক্যাবির ভাইরাসটির উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে এই বার্তা দেওয়া যে, কম্পিউটারের মতো মোবাইল ফোনেও ভাইরাসের মাধ্যমে হামলা চালানো সম্ভব তাই এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। সেই বার্তায় কাজ হয়েছিল। কারণ সেই ঘটনার পরেই মোবাইল ফোনের জন্য অ্যান্টিভাইরাস তৈরির কাজ শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি। তাই বলা যায়, বিশ্বের প্রথম মোবাইল-ভাইরাস আমাদের উপকারই করেছিল।



  

টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


1 comment:

জনপ্রিয় পোস্ট