30 Jan 2019

নিজেদের মধ্যে যোগাযোগে জঙ্গিরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করে

২০১৬ সালে আইসিস প্রভাবিত বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠী
Image credit: Threema
জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) ঢাকার হোলি আর্টিজান কাফেতে হামলা চালায়। হামলার অন্যতম দুই চক্রান্তকারী ছিল মামুনুর রশিদ (রিপন) এবং শরিফুল ইসলাম (খালিদ)। রশিদ ও খালিদ কলকাতার হোটেলে বসে বাংলাদেশে জেএমবি জঙ্গিদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে হামলাটি চালিয়েছিল। রশিদ ও খালিদ কলকাতায় বসে ভয়েস কল ও মেসেজের মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। কিন্তু ভারত বা বাংলাদেশের পুলিশ কিংবা দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি তাদের ভয়েস কল ও মেসেজ ট্র্যাক করতে বা হ্যাক করে আগে থেকে ওই হামলার পরিকল্পনা জানতে পারেনি। কারণ জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করত একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ যার নাম থ্রিমা (Threema)। সম্প্রতি রশিদ ও খালেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থ্রিমা অ্যাপের বিষয়টি জানতে পেরেছে পুলিশ।


ম্যানুয়েল ক্যাসপার


২০১২ সালে সুইৎজারল্যান্ডের বাসিন্দা ম্যানুয়েল ক্যাসপার থ্রিমা অ্যাপটি তৈরি করেন। প্রথমে কোম্পানির নাম ছিল ক্যাসপার সিস্টেম জিএমবিএইচ। পরে কোম্পানির নাম হয় থ্রিমা জিএমবিএইচ। অ্যাপটির এমন কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে যা হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনও মেসেজিং অ্যাপে নেই। 


কী সেই বৈশিষ্ট ?


আইডি


হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য অনেক মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করতে হলে মোবাইল নাম্বার বা ইমেল আইডি প্রয়োজন। কিন্তু থ্রিমা ব্যবহার করার জন্য আপনার সেসব প্রয়োজন নেই। শুধু ৮ সংখ্যার একটি আইডি প্রয়োজন। 


অ্যাপটি যখন ফোনে ইনস্টল করবেন তখন অ্যাপটি আপনার জন্য ৮ সংখ্যার একটি আইডি নিজে থেকেই তৈরি করবে। আপনি নিজের নামের বদলে সেই আইডি ব্যবহার করে অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই আইডি-র সঙ্গে আপনাকে আপনার মোবাইল ফোন নাম্বার বা ইমেল অ্যাকাউন্ট অ্যাড করতে হবে না। মোবাইল ওটিপি-র মতো থ্রিমার আইডি ব়্যানডাম। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনও নিয়মে এই আইডি তৈরি হয় না। ধরুন আমি ও আপনি পরপর থ্রিমা অ্যাপটি মোবাইলে ইনস্টল করলাম। আপনার আইডি তৈরি হল ৪৯০১ আর আমারটা ৭১৮২। আইডি-র সঙ্গে যেহেতু ফোন নাম্বার বা মেল আইডি অ্যাড বা কানেক্ট করতে হবে না, তাই কোন আইডি ব্যবহার করে কোন ব্যক্তি অ্যাপটি ব্যবহার করছে, তা জানাও সম্ভব নয়। 


কনট্যাক্ট লিস্ট


হোয়াটসঅ্যাপ সহ অন্য অনেক মেসেজিং অ্যাপ আপনার ফোনের কনট্যাক্ট লিস্ট ও আপনি যে সমস্ত গ্রুপের মেম্বার তার লিস্ট অ্যাকসেস করে। অর্থাৎ আপনার হোয়াটসঅ্যাপ কনট্যাক্ট লিস্টে কারা রয়েছে বা আপনি হোয়াটসঅ্যাপে কোন কোন গ্রুপের সদস্য এবং সেই গ্রুপের অন্য সদস্য কারা, তা হোয়াটসঅ্যাপ কোম্পানির সার্ভারে স্টোর থাকে এবং দেশের সরকার, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলির পক্ষে তা জানা অসম্ভব নয়। 


কিন্তু থ্রিমা অ্যাপের মাধ্যমে আপনি কাদের সঙ্গে কনট্যাক্ট করছেন বা আপনি কোন কোন গ্রুপের মেম্বার তার লিস্ট কখনোই থ্রিমা কোম্পানির সার্ভারে স্টোর করা হয় না। সেই লিস্ট আপনার ফোনেই থ্রিমা অ্যাপ এনক্রিপটেড করে স্টোর করে রাখে। 


QR কোড ফিচার


আরও একটি উল্লেখযোগ্য ফিচার রয়েছে থ্রিমার, সেটি হল QR কোড বা ‘কী ফিঙারপ্রিন্ট’ ফিচার। এই ফিচারের সাহায্যে আপনি যাকে মেসেজ পাঠাবেন বা যার কাছ থেকে মেসেজ রিসিভ করবেন তার আইডেন্টিটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। অর্থাৎ ওই আইডি নকল করে কোনও হ্যাকার আপনাকে মেসেজ পাঠাতে পারবে না বা সেই আইডি-তে আপনার পাঠানো মেসেজ অ্যাকসেস করতে পারবে না।


মেসেজ এনক্রিপশন


হোয়াটসঅ্যাপের অনেক আগে থেকেই থ্রিমা (সেই ২০১২ সাল থেকে) অ্যাপে রয়েছে এনক্রিপশন সিস্টেম। এই অ্যাপের সাহায্যে আপনি যদি কাউকে মেসেজ পাঠান বা ভয়েস কল করেন, তবে তা এনক্রিপটেড অবস্থায় সেই ব্যক্তির কাছে যাবে। ফলে আপনার ফোন ট্র্যাক করে কেউ জানতে পারবে না আপনি কাকে কী মেসেজ পাঠাচ্ছেন বা ভয়েস কলে কী কথা বলছেন।


মেসেজ ডিলিট


আপনি থ্রিমা অ্যাপের সাহায্যে কোনও ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠালেন। সেই ব্যক্তি মেসেজটি না পড়া পর্যন্ত সেটি থ্রিমার সার্ভারে স্টোর করা থাকবে। কিন্তু যে মুহূর্তে সেই ব্যক্তি মেসেজটি ওপন করবেন, তখন সেটি শুধু সেই ব্যক্তির ফোনেই স্টোর হবে, থ্রিমার সার্ভার থেকে ডিলিট হয়ে যাবে।


মেটাডেটা


থ্রিমার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হল এটি হোয়াটস্অ্যাপ বা অন্য মেসেজিং অ্যাপের মতো মেটাডেটা স্টোর করে না। অ্যাপ ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার ক্ষেত্রে মেটাডেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য মেসেজিং সার্ভিসগুলি এই মেটাডেটা কালেক্ট করে তা বিভিন্ন কোম্পানিকে বিক্রি করে মোটা টাকা মুনাফা অর্জন করে। 


মেটাডেটা কী? 


কোনও ব্যক্তি যখন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করেন, তখন তাঁর ভৌগোলিক অবস্থান অর্থাৎ তিনি কোন দেশের কোন জায়গায় রয়েছেন সেই তথ্য, তিনি যাদের মেসেজ পাঠাচ্ছেন বা চ্যাট করছেন তাঁদের ভৌগোলিক অবস্থান, নাম, ফোন নাম্বার, কোন কোম্পানির ফোন তাঁরা ব্যবহার করছেন, দিনের কোন কোন সময়ে কতক্ষণ সেই ব্যক্তি অ্যাপটি ব্যবহার করছেন ইত্যাদি যাবতীয় তথ্যকে বলা হল মেটাডেটা। এই মেটাডেটা স্টোর করা থাকে অ্যাপ কোম্পানির সার্ভারে। সেই ডেটা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে কোনও ব্যক্তির সম্পর্কে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্যই জানা যায়। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কোম্পানি সেই ব্যক্তির ডিভাইসে বিজ্ঞাপন দেখায় অনেক সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলিও এই মেটাডেটার উপর ভিত্তি করে অ্যাপ ব্যবহারকারীর পরিচয় জানতে পারে। কিন্তু থ্রিমা অ্যাপ তাদের গ্রাহকদের মেটাডেটা সার্ভারে স্টোর করে না। ফলে এই অ্যাপটি কে কোন দেশে বসে ব্যবহার করছে, কাদের মেসেজ পাঠাচ্ছে তা জানা অসম্ভব।



দাম দিতে হবে


ভালো পরিষেবা কখনোই নিখরচায় পাওয়া যায় না। তাই থ্রিমা অ্যাপটিও ফ্রি নয়। এটি পেইড অ্যাপ। প্লে স্টোরে দাম ₹ ২০০/-  এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে দাম ₹ ২৪৯/-।

অ্যাপটি একাধিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে সক্ষম। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ট্যাব ও কম্পিউটারেও থ্রিমা ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া অ্যাপটিতে রয়েছে নর্মাল মোডের পাশাপাশি ডার্ক মোড।



টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন। ধন্য়বাদ। 


3 comments:

  1. very impressive keep posting......

    ReplyDelete
  2. Wahhhh darun laglo post ta... thank you

    ReplyDelete
  3. নতুন ও interesting. পড়ে ভালো লাগল ।

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট