18 Jul 2018

ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ভয়ঙ্কর বিপদ Deepfakes


Image Credit : Pixabay
গত শতাব্দীর নয়ের দশকে বিশ্বজুড়ে
ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হওয়ার পর এবং তার পরের দশকে অ্যাপলের তৎকালীন কর্ণধার স্টিভ জোবস স্মার্ট ফোন তৈরি করার পর আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে।
কিন্তু এই পরিবর্তনের সবটাই যে ভালো, তা নয়। আমাদের এই অ্যাপ-নির্ভর জীবনযাত্রার বেশকিছু খারাপ দিকও রয়েছে, সেগুলির মধ্যে কিছু কিছু যথেষ্ট ভয়ঙ্কর।




খারাপ দিকগুলি কী? যেমন, কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে টাকা চুরি করা, কারও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাকাউন্ট বা ইমেল অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য বা মেল চুরি করা, অন্যের কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে ভাইরাস (ব়্যানসমওয়্যার) পাঠিয়ে সেটিকে লক করে তারপর মুক্তিপণ চাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলি ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন নির্ভর জীবনের খারাপ দিক বা নেগেটিভ সাইড। কিন্তু ভয়ংকর দিকটি কী? সেটা হল ইন্টারনেটে ফেক নিউজ বা ভুয়ো খবর।
কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করলে বা কারও ইমেল হ্যাক করলে তাঁর মৃত্যু হয় না। কিন্তু হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক বা ইন্টারনেটের অন্যান্য মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ফেক নিউজ বা ভুয়ো খবরের জেরে নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত শুধু ভারতেই এই Fake News বা ভুয়ো খবরের জেরে প্রায় ৩০ জন নিরাপরাধ মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে যা ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হয়। সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকে, যেখানে ফেক নিউজে বিশ্বাস করে ছেলে ধরা সন্দেহে জনতা গুগল কোম্পানির এক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। 




ইন্টারনেটে ফেকনিউজের দাপট কমাতে চেষ্টা শুরু করেছে গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সহ বিভিন্ন বড় বড় টেক কোম্পানিগুলি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারও যথেষ্ট চিন্তিত। ইতিমধ্যে ভারত সরকার ফেক নিউজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ কোম্পানিকে চিঠি লিখেছে। সমস্যা মেটাতে চিন্তাভাবনা চলছে ঠিকই, কিন্তু ঠিক কোন পথে সমস্যা মিটবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই যখন পরিস্থিতি তখন ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সম্প্রতি ডিপফেকস (Deepfakes) নামে এক নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব হয়েছে যার জেরে আগামী দিনে ফেক নিউজের দাপট এক বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা।

ফেস সোয়াপিং

ফেস সোয়াপিং কী? এটা আর কিছুই নয়, অন্যের মুখে নিজের ইচ্ছামতো কথা বসানো। ফেস সোয়াপিং বিষয়টি নতুন নয়। ইন্টারনেটে একাধিক ফেস সোয়াপিং অ্যাপ রয়েছে যেমন, স্ন্যাপচ্যাট, ফেস সোয়াপ বুথ, মিক্স বুথ ইত্যাদি। এই অ্যাপগুলির সাহায্যে ফেস সোয়াপ করে মজাদার ভিডিয়ো তৈরি করা যায়। ইউটিউবে এমন অনেক ভিডিয়ো পাবেন। ধরুন, আপনি সলমান খানের মুখে কোনও মজাদার কথা বসাবেন। সেক্ষেত্রে ফেস সোয়াপিং অ্যাপে গিয়ে আপনি সলমান খানের মুখের একটি ক্লোজ আপ ইমেজ সিলেক্ট করুন। এবার অ্যাপের মাধ্যমে আপনি নিজের মুখের কোনও ক্লোজ আপ ইমেজের সঙ্গে সলমান খানের সেই ইমেজটি সোয়াপ করুন অর্থাৎ বদলে নিন। তাহলে অ্যাপ নতুন যে ইমেজটি ক্রিয়েট করবে সেখানে আপনার মুখটি অনেকটা (পুরোপুরি নয়) সলমান খানের মুখের মতো দেখতে হবে। যেমন ধরুন, সলমান খানের নাকের কিছুটা, চুলের স্টাইল, থুতনি ইত্যাদি বৈশিষ্ট অ্যাপটি আপনার মুখের নাক, চুলের স্টাইল, থুতনির সঙ্গে পালটে দেবে। তারফলে আপনার নতুন যে ইমেজটি ক্রিয়েট হবে সেখানে আপনাকে দেখতে অনেকটা (পুরোটা নয়) সলমান খানের মতো লাগবে। যদিও সেই ছবি একবার দেখেই ধরে ফেলা সম্ভব যে, অনেক সলমান খানের মতো হলেও মুখের ছবিটা আসলে আপনার। এবার যে কথাটি আপনি সলমান খানের মুখে বসাবেন সেটা আপনি অ্যাপের সাহায্যে রেকর্ড করুন। এরপর সেই কথাটি অ্যাপ ফেস সোয়াপিং পদ্ধতিতে তৈরি করা সেই নতুন ইমেজ অর্থাৎ ফটোর মুখে বসিয়ে দিয়ে একটি ভিডিয়ো ক্লিপিং তৈরি করবে। সেটা দেখে মনে হবে যে, কথাটি বলছে সলমান খানের সেই নকল মুখ। 

এই ধরণের অ্যাপ নিছক মজা করার জন্যই তৈরি করা। কারণ ফেস সোয়াপিং অ্যাপের সাহায্যে তৈরি করা ছবিটি যে নকল সেটা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু বিষয়টি অনেক বিপজ্জনক তথা ভয়ংকর হবে যদি ডিপফেকস টেকনোলজিতে কারও ফেস সোয়াপ করা হয় এবং তার মুখে কোনও কথা বসানো হয়। 

DeepFakes প্রযুক্তি

২০১৭ সালের নভেম্বরে একজন সফটওয়্যার প্রোগ্রামার তাঁর রেডিট (Reddit হল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রোগ্রামাররা তাদের তৈরি নতুন নতুন প্রোগ্রাম পাবলিশ করে এবং সেগুলি নিয়ে আলোচনা করে) অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু ভিডিয়ো পাবলিশ করেছিলেন যেখানে অন্যের শরীরের সঙ্গে সিনেমার নায়ক নায়িকাদের বা অন্যান্য সেলিব্রিটিদের মুখ বিশেষ সফটওয়্যার প্রোগ্রামের সাহায্যে খুব সুক্ষ্মভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যিনি এই ধরণের ভিডিয়ো পাবলিশ করেছিলেন রেডিটে তাঁর অ্যাকাউন্টের নাম ছিল ডিপফেকস। এই বিষয়টি আকৃষ্ট করেছিল রেডিটের আর একজন গ্রাহকের (না, তাঁর আসল নাম জানা যায়নি। রেডিটে তাঁর অ্যাকাউন্টের নাম ছিল Deepfakeapp)। তিনি চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে রেডিটে একটি অ্যাপ পাবলিশ করলেন যার নাম দিয়েছেন FakeApp। এটি একটি ফেস সোয়াপিং অ্যাপ।

AI প্রযুক্তি

ফেস সোয়াপিং অ্যাপ তো অনেক আছে। এই লেখাতে আগেই সেগুলির কথা উল্লেখ করেছি। কিন্তু FakeApp রেডিটে লঞ্চ হওয়ার পর ইন্টারনেটের দুনিয়ায় হইচই পড়ে গেল। কারণ এটি ছিল বিশ্বের প্রথম ফেস সোয়াপিং অ্যাপ যাতে ব্যবহার করা হয়েছিল কৃ্ত্রিম বুদ্ধির প্রযুক্তি বা Artificial Intelligence Technology (AI)। অর্থাৎ এই অ্যাপটি নিজে থেকেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করতে সক্ষম।

কীভাবে কাজ করে FakeApp?

আগেই বলেছি যে, স্ন্যাপচ্যাট জাতীয় সাধারণ ফেস সোয়াপিং অ্যাপের মাধ্যমে আপনি নিজের মুখটি যদি অন্য কারও সঙ্গে সোয়াপ করতে অর্থাৎ পালটাতে চান, তাহলে আপনার নিজের মুখের একটি ইমেজ এবং সেই ব্যক্তির মুখের একটি ইমেজ প্রয়োজন। কিন্তু FakeApp – এর সাহায্যে মুখ সোয়াপ করতে গেলে দুইজনেরই অন্তত পক্ষে ৩০০টি ফ্রন্ট ফেসিং (মুখের সামনের দিকের ছবি) ইমেজ প্রয়োজন।

FakeApp-এর বিশেষত্ব হল এর বিশেষ সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যাকে বলা হচ্ছে অটোএনকোডার। এটি AI প্রযুক্তিতে কাজ করে। ধরুন, এই অ্যাপটির সাহায্যে আপনি আপনার মুখের সঙ্গে অমিতাভ বচ্চনের মুখ সোয়াপ করবেন। সেক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে ইন্টারনেট থেকে অমিতাভ বচ্চনের অন্তত ৩০০টি ফ্রন্ট ফেসিং ভিডিয়ো প্রথমে ডাউনলোড করতে হবে। ভিডিয়োগুলি হতে হবে এমন যেখানে অমিতাভ বচ্চন কিছু বলছেন। এবার আপনি নিজেরও ৩০০টি সেলফি ভিডিয়ো তুলুন। এক্ষেত্রেও ভিডিয়ো তোলার সময় আপনাকে কিছু বলতে হবে, অর্থাৎ মুখ নাড়াতে হবে, গম্ভীর থাকলে চলবে না।

এবার আপনি অমিতাভ বচ্চনের সেই ৩০০ রকম ভিডিয়ো ক্লিপিং FakeApp-এ আপলোড করুন। অ্যাপটির অটোএনকোডার তার AI প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ভিডিয়োগুলিকে বি্শ্লেষণ করে নিজেই বুঝে নেবে কথা বলার সময় অমিতাভ বচ্চনের ঠোঁট কতটা বেঁকে যায়, ভ্রু কতটা কাঁপে, গালের মাংশপেশী কতটা ওঠা নামা করে, চোখের নীচের চামড়া কুচকে যায় কিনা ইত্যাদি যাবতীয় খুঁটিনাটি। বিশ্লেষণ করার পর সেই ডেটা অ্যাপটি নিজের কাছে স্টোর করে রাখবে। এবার একই ভাবে আপনি নিজের ভিডিয়োগুলিও FakeApp-এ সাবমিট করুন। আপনার ক্ষেত্রেও অ্যাপটি ভিডিয়োগুলি বিশ্লেষণ করে বুঝে নেবে কথা বলার সময় আপনার মুখে কী কী সুক্ষ্ম পরিবর্তন হয়। 




এবার ধরা যাক, আপনি অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে বলাতে চান, ‘শোলে ইজ মাই বেস্ট ফিল্ম এভার।’ সেক্ষেত্রে প্রথমে সেই কথাটি আপনি নিজে বলে তার ভিডিয়ো রেকর্ড করুন। এবার সেই ভিডিয়োটি FakeApp-এ সাবমিট করুন এবং অ্যাপটিকে নির্দেশ দিন ফেস সোয়াপ করতে। অ্যাপটি তখন তার AI প্রযুক্তির সাহায্যে বুঝে নেবে ‘শোলে ইজ মাই বেস্ট ফিল্ম এভার’ কথাটি যদি অমিতাভ বচ্চন বলতেন, তাহলে সেটা তিনি কীভাবে বলতেন এবং সেই কথাটি বলার সময় তাঁর মুখমণ্ডলে কী কী পরিবর্তন হত। এরপর অ্যাপটি ফেস সোয়াপের মাধ্যমে অমিতাভ বচ্চনের একটি নকল ভিডিয়ো তৈরি করে ফেলবে যেখানে মনে হবে আপনি নন, অমিতাভ বচ্চনই আসলে কথাটি বলছে। AI পদ্ধতিতে FakeApp এত নিখুঁতভাবে ফেস সোয়াপ করবে যে আপনার নিজেরও মনে হবে যে, কথাটি আপনি নন, সত্যিই বোধহয় অমিতাভ বচ্চন বলেছেন। ধরার কোনও উপায় থাকবে না। শুধু ফেস সোয়াপ নয়, AI অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি নিখুঁত ভাবে কারও কণ্ঠস্বরও নকল করতে সক্ষম। অর্থাৎ আপনি নিজের কণ্ঠস্বরে যে কথাটা বলেছেন (‘শোলে ইজ মাই বেস্ট ফিল্ম এভার’), সেটাই AI অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠস্বর নকল করে তার মুখে বসিয়ে দেবে। ফলে সব মিলিয়ে মনে হবে কথাটা আসলে অমিতাভ বচ্চনই বলেছেন। খুব খুঁটিয়ে দেখলেও কারও বোঝার উপায় থাকবে না যে, ভিডিয়োটি নকল। 

প্রযুক্তি আগেও ছিল

AI পদ্ধতিতে ফেস সোয়াপ অবশ্য নতুন নয়। আপনারা যাঁরা ২০০৯ সালে জেমস ক্যামেরুনের সেই বিখ্যাত হলিউড মুভি ‘অবতার’ দেখেছেন, তাঁরা AI পদ্ধতিতে ফেস সোয়াপ কীভাবে করা সম্ভব তা নিশ্চয় জানেন। ওই সিনেমায় মূল চরিত্রগুলি কোনও রক্তমাংসের মানুষ ছিল না। সেই চরিত্রগুলি তৈরি করা হয়েছিল CGI (Computer Generated Image) প্রযুক্তির সাহায্যে। কিন্তু সেই চরিত্রগুলি সাধারণ মানুষের মতোই কথা বলেছিল এবং কথা বলার সময় তাদের চোয়ালের ও ঠোঁটের ওঠা-নামা, মুখের মাংসপেশীর পরিবর্তন ইত্যাদি ছিল অবিকল সাধারণ মানুষের মতো। এজন্য AI প্রযুক্তি অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথমে ছবির চরিত্রগুলিকে কম্পিউটারে CGI প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছিল। তারপর সেই চরিত্রগুলি যে সংলাপ বলবে সেগুলি সাধারণ মানুষকে দিয়ে বলানো হয়েছিল। সাধারণ মানুষ যখন সেই সংলাপগুলি বলছিল তখন তাঁদের মুখের কী কী পরিবর্তন হচ্ছে তা ফেস ম্যাপিং প্রযুক্তিতে রেকর্ড করা হয়েছিল। তারপর সেই পরিবর্তনগুলি AI প্রযুক্তিকে দেওয়া হয় বিশ্লেষণ করার জন্য। AI প্রযুক্তি সেগুলি বিশ্লেষণ করে এবং ফেস সোয়াপ পদ্ধতিতে সেই পরিবর্তনগুলি CGI প্রযুক্তিতে তৈরি চরিত্রগুলির মুখে বসিয়ে দেয়। ফলে CGI প্রযুক্তিতে তৈরি চরিত্রগুলি যখন সিনেমায় কথা বলছিল, তখন সাধারণ মানুষের মতোই তাদের চোয়াল ওঠা-নামা করছিল, ঠোঁট নড়ছিল, ভ্রুঁ কুচকে যাচ্ছিল। দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, চরিত্রগুলি কম্পিউটারে তৈরি, মনে হচ্ছিল কিছু মানুষ মেক আপ করে অভিনয় করছে। 

কিন্তু অবতারে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করা হয়েছিল। AI প্রযুক্তিতে ফেস সোয়াপ করার জন্য এত টাকা খরচ হয় বলেই এতদিন এই প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে FakeApp লঞ্চ হওয়ার পর AI প্রযুক্তিতে ফেস সোয়াপ টেকনিক এখন সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয়। আর সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে সবচেয়ে চিন্তার এবং ভয়ের কারণ।

কেন FakeApp নিয়ে এত উদ্বেগ ?

ধরুণ কোনও জঙ্গি সংগঠন FakeApp ব্যবহার করে একটি নকল ভিডিয়ো তৈরি করল যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন, ’২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা পাকিস্তানে পরমাণু বোমা ফেলব।’ তারপর সেই ভিডিয়োটি হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবে পোস্ট করে দিল। তাহলে কী হতে পারে ভেবে দেখেছেন? 

কিংবা ধরা যাক, FakeApp – এর সাহায্যে আপনার এলাকায় কোনও ব্যক্তি কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতার মুখে কোনও উস্কানিমূলক কথা বসিয়ে নকল ভিডিয়ো তৈরি করে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফেসবুকে পোস্ট করল। সেক্ষেত্রে আপনার এলাকায় দাঙ্গা লেগে যাওয়া অসম্ভব নয়। যেহেতু FakeApp-এর সাহায্যে তৈরি এই ভিডিয়োগুলি দেখতে এতটাই আসল যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, ফলে তার ফল হবে ভয়াবহ। আবার উলটোটাও হতে পারে যে, কোনও আসল ভিডিয়োকে সাধারণ মানুষ মনে করবে নকল, সেটি FakeApp-এর সাহায্যে সেটি তৈরি করা হয়েছে।

চেষ্টা চলছে

সুতরাং আগামী দিনে FakeApp যে Fake News-এর মাধ্যমে আমাদের জীবনে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে ইতিমধ্যে এনিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে US Defense Advanced Research Projects Agency। তারা এমন প্রযুক্তি আবিষ্কারের চেষ্টা করছে যার সাহায্যে AI প্রযুক্তি তথা FakeApp-এর সাহায্যে তৈরি নকল ভিডিয়োগুলিকে সাধারণ মানুষ সহজেই চিনে নিতে পারে। আশা করব তারা দ্রুত এই প্রযুক্তি তৈরি করে ফেলবে, না হলে আগামী দিনে বড় বিপদের মুখে পড়তে হবে আমাদের। 

তাই সবশেষে টেকনোবিটসের পাঠকদের কাছে অনুরোধ, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় (হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ইউটিউব ইত্যাদি) যা দেখবেন, যা পড়বেন তা সহজে বিশ্বাস করবেন না। যে খবরটি পড়ছেন বা যে ভিডিয়োটি দেখছেন, সেটি আর কোনও বড় খবরের কাগজ বা টিভি চ্যানেলের ওয়েবসাইটেও পাবলিশ হয়েছে কি না, তা আগে দেখে নিন। যদি মনে হয় খবরটি ভুয়ো তাহলে যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই খবরটি বা ভিডিয়োটি পাবলিশ হয়েছে তাদেরকে বিষয়টি জানান বা রিপোর্ট করুন। আপনার যে এলাকায় বাড়ি সেখানকার স্থানীয় থানাতেও বিষয়টি জানাতে পারেন। এটা করা উচিত আমাদের নিজেদের স্বার্থেই, না হলে কে বলতে পারে, হয়তো আগামী দিনে আমি বা আপনিও গুগলের সেই ইঞ্জিনিয়ারের মতো ফেক নিউজের শিকার হব। আর একটি অনুরোধ, ফেক নিউজ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পোস্টটি হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে শেয়ার করুন।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি মিস করতে না চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজ ফলো করুন (ফেসবুক পেজের লিঙ্ক এই ব্লগসাইটেই রয়েছে)। ফেসবুক পেজের Follow বাটনটি ক্লিক করুন, তারপর See first অপশনে ক্লিক করুন। এছাড়া ইমেলে যদি টেকনোবিটসের নতুন ব্লগগুলির আপডেট পেতে চান, তবে ইমেল সাবস্ক্রিপশন অপশনে গিয়ে নিজের মেল আইডি সাবমিট করুন। ধন্যবাদ।

4 comments:

  1. স্যার আপনার এড্স গুলো অন্য কোনো এডসেন্স এপ্রুভ একাউন্ট থেকে নেওয়া, না আপনার teknowbits.blogspot.কম। এডসেন্স এপ্রুভ করেছে প্লিজ জানবেন। আর ব্লস্পটে কে এডসেন্স এপ্রুভ করার জন্য কি অনেক বেশি ট্র্যাফিক দরকার ?

    ReplyDelete
  2. অন্য কোনও অ্যাকাউন্টের কোড নয়, আমার টেকনোবিটস ব্লগ সাইটটি গুগল অ্যাডসেন্সের দ্বারা অ্যাপ্রভড। গুগলের অ্যাডসেন্সের অ্যাপ্রুভাল পাওয়া খুবই কঠিন। অ্যাডসেন্সের অ্যাপ্রভাল পাওয়ার জন্য বেশি ট্রাফিক প্রয়োজন, কিন্তু আরও অনেক শর্ত থাকে। প্রথম শর্ত হল ব্লগসাইটের কনটেন্ট অরিজিনাল হতে হবে, অন্য কোনও সাইট থেকে কপি পেস্ট করে কনটেন্ট পোস্ট করলে গুগল ধরে ফেলবে। সাইবার ল’ইয়ারের সঙ্গে কথা বলে ব্লগসাইটের জন্য নিজস্ব প্রাইভেসি পলিসি এবং টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনের ড্রাফট তৈরি করে তা ব্লগে পোস্ট করতে হবে। সাইট ম্যাপ থাকা প্রয়োজন। ব্লগ সাইটে কনটেন্টের মধ্যে ছবি কম এবং টেক্সট বেশি থাকা প্রয়োজন। যে ছবিগুলি পোস্ট করা হবে সেগুলির যেন কপিরাইট ভায়োলেশন না হয়। ব্লগসাইটে প্রাথমিকভাবে অন্তত ৫০টি বা তার বেশি পোস্ট বা কনটেন্ট থাকা প্রয়োজন। ব্লগসাইটে কোনও থার্ড পার্টি সফটওয়্যার বা অ্যাপের ডাউনলোড লিঙ্ক দেওয়া যাবে না ইত্যাদি। গুগলের অ্যাড সেন্স সাইটে গিয়ে তাদের নিয়মাবলী বিস্তারিত জেনে নিন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মিনিমাম কতগুলো ট্রাফিক প্রত্যেক দিন আসলে গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করা যাবে ?

      Delete
    2. এই বিষয়ে গুগলের নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই, এটা সম্পূর্ণ গুগলের মর্জির উপর নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে কোনও নতুন সাইটের ট্রাফিক প্রথমদিকে কম থাকলেও গুগল যদি মনে করে সাইটটি আগামী দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সেক্ষেত্রে সাইটটিকে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল দেয়।

      Delete

জনপ্রিয় পোস্ট