19 Jul 2018

জানেন কি, ব্রাউজারকে অ্যান্টিভাইরাস হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব?


Image Credit: Pixabay
এখন ইন্টারনেটের দুনিয়ায় যে ব্রাউজারগুলি রয়েছে তাদের মধ্যে
বয়সে গুগল ক্রোম সবচেয়ে ছোটো। গুগল কোম্পানি তাদের ক্রোম ব্রাউজার লঞ্চ করেছিল ২০০৮ সালে সেপ্টেম্বরে। অর্থাৎ হিসেব করলে এখনও তার বয়স ১০ বছরও হয়নি। অন্যদিকে মোজিলা কোম্পানি তাদের ফায়ারফক্স ব্রাউজার লঞ্চ করেছিল ২০০৪ সালের নভেম্বরে। বয়সে সবচেয়ে বড় মাইক্রোসফট কোম্পানির ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার লঞ্চ করা হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। 








ছোটো হলেও জনপ্রিয়

কিন্তু গুগল ক্রোম বয়সে সবার ছোটো হয়েও গত ৯ বছরে বাকি ব্রাউজারগুলি থেকে জনপ্রিয়তায় অনেকটাই এগিয়ে। এর একটা কারণ অবশ্যই অ্যান্ড্রয়েড ফোন, যেখানে বাই ডিফল্ট ক্রোম ব্রাউজার ইনস্টলড থাকে। কিন্তু শুধু এটাই একমাত্র কারণ নয়, ক্রোম ব্রাউজারের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এর দ্রুত নেট সার্ফিং ক্ষমতা এবং সিকিউরিটি সিস্টেম। তাই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পাশাপাশি অধিকাংশ ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপেও ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহৃত হয়। 


সিকিউরিটি ফিচার

গুগল তাদের ব্রাউজারের সিকিউরিটি সিস্টেম নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। তাই তারা গত এক বছরে তাদের ব্রাউজারে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি ফিচার অ্যাড করেছে, যা এখনও পর্যন্ত অন্য ব্রাউজারে নেই। কিন্তু যেটা আশ্চর্যের, তা হল এত গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিকিউরিটি ফিচার অ্যাড করলেও গুগল বিষয়টি নিয়ে সেভাবে প্রচার করেনি। ফলে ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহারকারী অনেক গ্রাহকই জানেন না বিষয়টি। 

ক্রোম ক্লিন-আপ

প্রথম ফিচারটি হল ক্রোম ক্লিন-আপ। এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও ব্রাউজারে এই ফিচারটি নেই। এই ফিচারটি আসলে একটি অ্যান্টিভাইরাস ফিচার। অনেকেই তাঁদের কম্পিউটারে পেইড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করেন না। বিভিন্ন কোম্পানির অ্যান্টিভাইরাসের ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করেন। কিন্তু ট্রায়াল ভার্সন কখনোই আপনার কম্পিউটারকে পুরোপুরি সুরক্ষা দেয় না, কারণ এই ধরণের ভার্সনকে নিয়মিত আপডেট করা যায় না। কিন্তু অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট করা প্রয়োজন। অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট না করা হলে সেটি নতুন নতুন ভাইরাস, ম্যালওয়্যার থেকে আপনার কম্পিউটারকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। 

এসেট

ক্রোমের ক্লিন-আপ অ্যান্টিভাইরাস ফিচারটি নিয়মিত আপডেট হবে। তা ছাড়া এই ফিচারটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোনও টাকাও খরচ করতে হবে না। ক্রোম ক্লিন-আপ ফিচারে যে অ্যান্টিভাইরাসটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি তৈরি করেছে এসেট্ (এসেট মিশরের এক দেবীর নাম যিনি স্বাস্থ্য, প্রেম ও বিয়ের প্রতীক) কোম্পানি। ইউরোপের স্লোভাকিয়ার এই কোম্পানিটি ৩০ বছরের পুরানো। ১৯৮৭ সালে প্রথম তারা অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করেছিল। এসেট্ি কোম্পানির তৈরি অ্যান্টিভাইরাস (যা মূলত নড নামে পরিচিত) খুবই পাওয়ারফুল। আমাদের দেশে হয়তো এসেট্-এর অ্যান্টিভাইরাস খুব কম লোকই ব্যবহার করে, কিন্তু এই কোম্পানির ইন্টারনেট সিকিউরিটি বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার স্যুটগুলি যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই বর্তমানে বিশ্বের ২২০ টি দেশের ১১ কোটির বেশি লোক এসেট্ কোম্পানির অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করেন। 

স্ক্যানিংয়ের পদ্ধতি 

প্রথমে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন। এবার ব্রাউজারের উপরে একেবারে ডানদিকে যে তিনটি ভার্টিকাল (উলম্ব) ডট রয়েছে সেখানে ক্লিক করুন। যে মেনু লিস্ট ওপেন হবে সেখানে Settings অপশনে ক্লিক করুন। এবার স্ক্রিন স্ক্রল ডাউন করে একেবারে নীচে দেখুন Advanced অপশন রয়েছে। তাতে ক্লিক করুন। নতুন যে মেনু লিস্ট ওপেন হবে সেখানে একদম নীচে রয়েছে Clean Up Computer অপশন। সেটিতে ক্লিক করুন। নতুন একটি বক্স ওপেন হবে, সেখানে দেখুন Find and remove harmful softwares অপশনের পাশে রয়েছে Find বাটন। সেটিতে ক্লিক করলে ক্রোম ব্রাউজারের এসেট অ্যান্টিভাইরাস আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করতে শুরু করবে। পুরো কম্পিউটার স্ক্যানিংয়ের জন্য কিছুটা সময় লাগবে। 
অ্যাপগুলিকেও স্ক্যান করবে

এসেট অ্যান্টিভাইরাস আপনার কম্পিউটারে সমস্ত ফাইল স্ক্যান করে দেখবে কোথাও কোনও ভাইরাস, ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার, ব়্যানসামওয়্যার ইত্যাদি লুকিয়ে রয়েছে কি না। শুধু তাই নয়, আপনার কম্পিউটারে যে সমস্ত অ্যাপ বা সফটওয়্যার রয়েছে সেগুলি গোপনে আপনার কম্পিউটার থেকে ডেটা চুরি করছে কি না, সেটাও স্ক্যান করে দেখবে এই অ্যান্টিভাইরাস। যদি স্ক্যানিংয়ের পর আপনার কম্পিউটারে সন্দেহজনক কিছু মেলে, তাহলে অ্যান্টিভাইরাস সেটি রিমুভ করবে এবং স্ক্যানিং রিপোর্টে সেই বিষয়টি উল্লেখ করবে। আপনার কম্পিউটারে স্ক্যানিংয়ে কোনও ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার পাওয়া গেলে আপনি সেই স্ক্যানিং রিপোর্ট গুগল কোম্পানিকে পাঠাতে পারবেন। গুগল কোম্পানিকে স্ক্যানিং রিপোর্ট পাঠানোর অপশনও রয়েছে ক্রোম ব্রাউজারের এই ফিচারটিতে। অপশনটির নাম Report details to Google। এই অপশনটি বাই ডিফল্ট অন করা থাকে। 

অন্য পদ্ধতি

অ্যাডভান্সড সেটিংসে না গিয়েও আপনি ক্রোম ব্রাউজারের ক্লিন আপ ফিচারের সাহায্যে কম্পিউটার স্ক্যান করাতে পারবেন। সেজন্য প্রথমে ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন। এবার ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে টাইপ করুন chrome://settings/cleanup এবং এন্টার প্রেস করুন। ক্রোম ব্রাউজারের ক্লিন আপ উইনডো ওপেন হবে। সেখানে আগের মতোই ফাইন্ড অপশনে ক্লিক করে কম্পিউটার স্ক্যান করতে পারবেন।

সীমাবদ্ধতা

ক্রোম ব্রাউজারের এই অ্যান্টিভাইরাস যথেষ্ট পাওয়ারফুল। এটি নিয়মিত আপডেট হয়। এবং এই অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কোনও টাকা দিতে হবে না। কম্পিউটার অফলাইন থাকলেও অর্থাৎ ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও এটি কাজ করবে। তবে একটা সমস্যা রয়েছে। সেটা হল, এই ক্লিন আপ ফিচার কিন্তু আপনার কম্পিউটারকে রিয়েল টাইম প্রোটেকনশন দিতে পারবে না।

রিয়েল টাইম প্রোটেকশন

ভালো অ্যান্টিভাইরাসের অন্যতম বৈশিষ্ট হল রিয়েল টাইম প্রোটেকশন। আপনি যদি কোনও ভালো কোম্পানির পেইড অ্যান্টিভাইরাস কম্পিউটারে ব্যবহার করেন, তবে সেটি আপনার কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনকে রিয়েল টাইম প্রোটেকশন দেবে। অর্থাৎ ধরুন, আপনি কোনও ফাইল ডাউনলোড করবেন। সেই ফাইলটিতে ভাইরাস রয়েছে। যে মুহূর্তে আপনি ফাইলটি ডাউনলোড করার জন্য ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করবেন, সঙ্গে সঙ্গে আপনার পেইড অ্যান্টিভাইরাস আপনাকে সতর্ক করে জানিয়ে দেবে যে, ফাইলটি সন্দেহজনক, সেটিতে ভাইরাস থাকতে পারে। কিংবা ফাইলটি ডাউনলোড করার পরেই সেটিকে রিমুভ করবে বা কোয়াব়্যান্টাইন করবে। আপনি যখন ইন্টারনেট সার্ফ করছেন, তখন গোপনে কোনও ভাইরাস যদি আপনার কম্পিউটারে বা মোবাইল ফোনে হামলা চালানোর চেষ্টা করে, সঙ্গে সঙ্গে পেইড অ্যান্টিভাইরাস সেই হামলা ঠেকিয়ে দেবে বা আপনাকে সতর্ক করবে। এটাকে বলে রিয়েল টাইম প্রোটেকশন সিস্টেম। 
কিন্তু ক্রোম ব্রাউজারের অ্যান্টিভাইরাসে কোনও রিয়েল টাইম প্রোটেকশন সিস্টেম নেই। আপনি যখন ক্লিন আপ ফিচারের ফাইন্ড অপশনে ক্লিক করবেন, শুধু তখনই এই অ্যান্টিভাইরাস আপনার কম্পিউটার স্ক্যান করবে। তবে দাম দিয়ে কেনা আর বিনা পয়সার জিনিসের মধ্যে এটুকু পার্থক্য তো থাকবেই।

সাইট আইসোলেশন ফিচার

কয়েক দিন আগে গুগল ক্রোম তাদের ব্রাউজারে নতুন একটি সিকিউরিটি ফিচার অ্যাড করেছে, সেটি হল Site Isolation ফিচার। ক্রোম ব্রাউজারের ৬৭ নম্বর আপডেটে এই ফিচারটি অ্যাড করা হয়েছে। এই ফিচারটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

স্পেকট্যর ও মেল্টডাউন

আমরা অনেকেই কম্পিউটারে যখন অনলাইনে কাজ করি, নেট সার্ফ করি তখন ব্রাউজারে একাধিক ট্যাব ওপেন করা থাকে। ধরুন, আপনি ব্রাউজারে ‘A’, ‘B’, ও ‘C’ তিনটি ট্যাব একসঙ্গে ওপেন করে কাজ করছেন। ধরা যাক, ট্যাব ‘A’-তে আপনার মেল অ্যাকাউন্ট ওপেন করা আছে, ট্যাব ‘B’-তে আপনার নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্ট ওপেন করা আছে। এবার ধরুন ট্যাব ‘C’-তে আপনি যে সাইটটি ওপেন করেছেন সেটি একটি বিপজ্জনক সাইট, কিন্তু সাইটটি যে বিপজ্জনক তা আপনি জানেন না। এক্ষেত্রে ‘C’ ট্যাবে খোলা ওই সাইটটি গোপনে আপনার অন্য দুটি ট্যাবে যে দুটি সাইট ওপেন করা আছে (মেল অ্যাকাউন্ট ও নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্ট), সেই সাইট দুটি থেকে সমস্ত তথ্য চুরি করতে পারে। এই ধরনের সাইবার অ্যাটাককে বলা হয় স্পেকট্যর ও মেল্টডাউন অ্যাটাক।
এই ধরণের সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গুগল কিছু দিন আগে তাদের ক্রোম ব্রাউজারে সাইট আইসোলেশন ফিচার অ্যাড করেছে। আপনি যখন কম্পিউটারে একাধিক ট্যাব ওপেন করে কাজ করবেন, তখন এই ফিচারটি প্রতিটি ট্যাবে ওপেন করা ওয়েবসাইটগুলিকে আলাদা আলাদা ভাবে গার্ড করে রাখবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় স্যান্ডবক্স প্রসেস। ফলে কোনও সাইট চেষ্টা করলেও অন্য সাইট থেকে তথ্য চুরি করতে পারবে না।

মোবাইলে সুরক্ষা

যাঁরা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাঁদের জন্যও প্লে স্টোরে গুগলের বিশেষ সিকিউরিটি ফিচার রয়েছে। প্লে স্টোর অ্যাপটি ওপেন করুন। এবার Menu ট্যাপ করুন। যে অপশনগুলি শো করবে সেগুলির মধ্যে ট্যাপ করুন Play protect। এবার সেখান থেকে Scan device for security threat অপশনটি টার্ন অন করুন।

টেকনোবিটসের এই ব্লগটি পড়ে যদি ভালো লাগে তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করুন। কমেন্ট করুন ব্লগের নীচে বা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে।


টেকনোবিটসের ব্লগগুলি যদি নিজের ফেসবুক নিউজ ফিডে পেতে চান, তবে টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে গিয়ে Follow বাটন ক্লিক করে তারপর See first অপশনটিতে ক্লিক করুন। ইমেল সাবস্ক্রিপশনের  জন্য টেকনোবিটসের ব্লগ সাইটে নিজের ইমেল আইডি সাবমিট করে রেজিস্ট্রেশন করুন।



2 comments:

জনপ্রিয় পোস্ট