21 Jan 2018

হরেক কাজে স্মার্ট ফোন


টেকনোবিটসের পাঠকদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয় ‘সুইস আর্মি নাইফ’ কী, তা জানেন। সুইস আর্মি নাইফ হল পেনসিল কাটার ছুরির মতো দেখতে একটি যন্ত্র, কিন্তু তার মধ্যে শুধু ছুরি নয়, সেই সঙ্গে রয়েছে কাঁচি, সাঁড়াশি, আঁতশ কাচ, ঠাণ্ডা পানীয়র বোতলের ছিপি খোলার যন্ত্র, নখ কাটার যন্ত্র এবং আরও অনেক কিছু। 
Photo credit:Pixabay

সাধারণত সৈন্যরা, পর্যটকরা সুইস আর্মি নাইফ তাঁদের সঙ্গে রাখেন। কারণ সঙ্গে এটি থাকলে আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না। সুইস আর্মি নাইফের মাধ্যমেই অনেক কাজ করা সম্ভব।


সুইস আর্মি নাইফের কথা বললাম কেন? এর কারণ, আমার মতে বর্তমান যুগে সুইস আর্মি নাইফের ডিজিটাল ভার্সন হল স্মার্ট ফোন। সুইস আর্মি নাইফের প্রধান অংশটি হল এর নাইফ অর্থাৎ ছুরি যার সাহায্যে কোনো কিছু কাটা যায়। কিন্তু পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় আরও অনেক কাজ এর সাহায্যে আমরা করতে পারি। ঠিক তেমনি স্মার্ট ফোনের প্রধান কাজ হল কারও সঙ্গে কথা বলা।

কিন্তু সেই কাজের পাশাপাশি এর সাহায্যে আমরা দৈনন্দিন জীবনের আরও অনেক প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করতে পারি। না, আমি কিন্তু এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ করা, কিংবা গেম, গান শোনা ও ভিডিয়ো দেখার কথা বলছি না। আমি বলতে চাইছি এমন কিছু কাজের কথা যেগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সত্যিই প্রয়োজনীয়। সেগুলি আমরা কিন্তু স্মার্ট ফোনের সাহায্যে করতে পারি।


সেই কাজগুলি কী কী, সেটাই এবার জানাব টেকনোবিটসের পাঠকদের।


কাঠ মিস্ত্রি, ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রিরা তাঁদের কাজের প্রয়োজনে মেজারিং টেপ যেমন রাখেন, তেমনি অনেকেই বাড়িতে মেজারিং টেপ বা মাপার ফিতা রাখেন। এর সাহায্যে কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা মাপা যায়। ধরুন আপনি একটি খাট কিনবেন। কিন্তু সেটি ঘরের কোথায় ঠিকমতো রাখা যাবে, সেটা জানার জন্য আপনাকে খাটের মাপ এবং ঘরের মাপ মেজারিং টেপের সাহায্যে জানতে হবে। কিন্তু স্মার্ট ফোনের যুগে আর মেজারিং টেপের দরকার নেই। আপনার হাতের ফোনটিই সেই কাজ করে দেবে। এজন্য আপনার প্রয়োজন একটি বিশেষ অ্যাপ। প্লে স্টোরে এই ধরনের একাধিক অ্যাপ রয়েছে যেগুলি আপনার ফোনের ক্যামেরার সাহায্যে যে কোনও বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা সঠিকভাবে যেমন মাপতে সক্ষম, তেমনি কোনও বস্তু আপনার থেকে কত দূরে রয়েছে, সেটাও মেপে বলে দিতে পারে। প্লে স্টোরে এমন দুটি উল্লেখযোগ্য অ্যাপ হল মাল্টি মেজার টুল কিট এবং জিপিএস ফিল্ড এরিয়া মেজার।

মাত্র ১০ বছর আগেও ক্যামেরায় ফিল্ম ব্যবহার করে ছবি তোলা হত। খুঁজলে আমাদের অনেকের বাড়িতেই হয়তো পুরানো অনেক ফটোর ‘নেগেটিভ’ পাওয়া যাবে। পুরানো সেই নেগেটিভকে আপনি স্মার্ট ফোনের সাহায্যে সহজেই ডিজিটাল ফটোতে কনভার্ট করতে পারবেন। শুধু কনভার্ট করাই নয়, সেই নেগেটিভ যদি কোনো সাদা—কালো ছবির হয়, তাহলে সেই ছবিকে আপনি রঙিনও করতে পারবেন। এজন্য যে অ্যাপটি আপনার প্রয়োজন সেটি হল হেলমাট ফিল্ম স্ক্যানার।


দূরের আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা থেকে বিজয়ার প্রণাম জানানোর জন্য দুই দশক আগেও পোস্টকার্ডই ছিল প্রধান মাধ্যম। মনে আছে, ছোটবেলায় দূরের দিদিদের কাছ থেকে অনেক সময় পোস্টকার্ডে নববর্ষের শুভেচ্ছা পেতাম। পোস্টকার্ডের একদিকে দিদির নিজের হাতে আঁকা ছবি, আর উলটো দিকে (ঠিকানা লেখার জায়গার পাশে) নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তা লেখা থাকত। সেই দিন এখন আর নেই। তবু যদি কোনো প্রিয়জনকে আজও এইভাবে পোস্টকার্ডের মাধ্যমে স্পেশাল ভাবে শুভেচ্ছা জানাতে চান, তবে আপনার স্মার্ট ফোনের সাহায্যেই সেটা পারবেন। এজন্য আপনাকে যে অ্যাপটি ইনস্টল করতে হবে সেটি হল মাই পোস্টকার্ড অ্যাপ। এই অ্যাপটির মাধ্যমে আপনি যাঁকে পোস্টকার্ডে শুভেচ্ছা পাঠাবেন তাঁর ঠিকানা এবং পোস্টকার্ডে কোন ছবি থাকবে, তা সিলেক্ট করে অনলাইনে পোস্টাল চার্জ মিটিয়ে দিন। সেই ব্যক্তির ঠিকানায় আপনার পাঠানো পোস্টকার্ড পৌঁছে যাবে।
Photo credit: Pixabay

ব্লাড প্রেশার ও হার্ট রেট চেক করতে চান? চোখে কয়েকদিন ধরে দেখতে একটু সমস্যা হচ্ছে? জানতে চান আপনার চোখের দৃ্ষ্টিশক্তি স্বাভাবিক কিনা? কানে শুনতে সমস্যা হচ্ছে? শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক আছে কিনা জানতে চান? আপনার স্মার্ট ফোনের সাহায্যে এখন আপনি বাড়িতে বসেই এই সমস্ত তথ্য জেনে নিতে পারবেন (আমি বলছি না যে, ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। তেমন শারীরিক অসুবিধা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন)। এজন্য আপনার প্রয়োজন একটি বিশেষ অ্যাপ, যার নাম আইকেয়ার হেলথ্ মনিটর। এই অ্যাপটি ফোনে ইনস্টল করার পর সেটি ওপেন করুন এবং ফোনের রিয়ার ক্যামেরার উপর নিজের আঙ্গুলটি বেশ কিছুক্ষণ এমনভাবে চেপে ধরুন যাতে ক্যামেরার লেন্সটি পুরো ঢাকা থাকে। তাহলেই আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এই অ্যাপটি আপনাকে জানিয়ে দেবে।

ছোটবেলা থেকেই এই অধমের প্রযুক্তির বিষয়ে খানিকটা ঝোঁক রয়েছে। মনে আছে, যখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি তখন বাড়িতে বসে জুতোর বাক্স ব্যবহার করে প্রজেক্টর বানিয়ে ছিলাম। বাক্সের মধ্যে একদিকে একটি ১০০ ওয়াটের বাল্ব লাগানো ছিল। অন্যদিকে ফুটো করে সেখানে দুটো আঁতস কাচ এমন ভাবে লাগিয়ে ছিলাম যাতে সেগুলির মাঝখানের দূরত্ব প্রয়োজন মতো বাড়ানো বা কমানো যায়। বাল্ব এবং এবং আঁতস কাচের মাঝখানে নির্দিষ্ট জায়গায় সিনেমার সেলুলয়েড ফিল্ম রাখলে সামনের দেওয়ালে তার বড় ছবি ফুটে উঠত। সেই ছবি ছিল স্টিল, সিনেমার মতো নড়াচড়া করত না। কিন্তু তাতেই আমার আনন্দের সীমা ছিল না। স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে এখনও সেই পদ্ধতিতে অর্থাৎ খালি জুতোর বাক্স ব্যবহার করে আপনি বাড়িতেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন প্রজেক্টর। ফোনের ছোট স্ক্রিনে যে সিনেমাটি দেখছেন, সেটাই তখন সামনের দেওয়ালে সিনেমা হলের মতো বড় হয়ে ফুটে উঠবে। কীভাবে সেটা করবেন সেটা বিস্তারিত জানানোর জন্য টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজে একটি ইউটিউব ভিডিয়োর ডাউনলোড লিংক রয়েছে। সেটা দেখে নিন।

এমন কোনো রাজ্যে বা দেশে গিয়েছেন যেখানে দোকানের সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং থেকে শুরু করে সবকিছুই সেখানকার ভাষায় লেখা। আপনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। কোনও সমস্যা নেই। এক্ষেত্রেও অনুবাদকের কাজ করবে আপনার স্মার্ট ফোন। ফোনে গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপটি ইনস্টল করুন। এবার অ্যাপটি ওপেন করে ফোনের রিয়ার ক্যামেরা অন্য ভাষার কোনও লেখার দিকে ধরুন, সেই লেখা সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেবে গুগল ট্রান্সলেট।

কোনও অচেনা জায়গায় ঠিকানা খুঁজতে বা সঠিক রাস্তায় যাচ্ছি কিনা, তা জানতে আমরা অনেকেই এখন স্মার্ট ফোনে জিপিএস নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করি। যদি আপনি গাড়ি চালাতে চালাতে এই জিপিএস নেভিগেশন অ্যাপ ব্যবহার করেন, তবে সমস্যা হল আপনাকে কিছুক্ষণ পর পর রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের স্ক্রিনে জিপিএস ম্যাপের দিকে তাকাতে হবে। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু হাডওয়ে নামে একটি বিশেষ অ্যাপ রয়েছে যার সাহায্যে আপনি এই রকম পরিস্থিতিতে জিপিএস ম্যাপটিকে গাড়ির সামনের কাচে অর্থাৎ উইন্ডস্ক্রিনে প্রোজেক্ট করতে পারবেন। ফলে আপনাকে আর বারবার ম্যাপ দেখার জন্য ফোনের দিকে তাকাতে হবে না।

টেকনোবিটসের এবারের ব্লগে যে সমস্ত অ্যাপগুলির বিষয়ে আলোচনা করলাম সেগুলির লিংক আপনারা টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজের ‘ডাউনলোড’ নোটে পাবেন। ডাউনলোড নোটটি ফেসবুক পেজের একেবারে উপর রয়েছে।


যদি ব্লগটি পড়ে ভালো লাগে, তবে অবশ্যই ইমেলে বা ফেসবুকে শেয়ার করুন। আগামীতে টেকনোলজি সম্পর্কে আরও অজানা ও প্রয়োজনীয় তথ্য জানার জন্য টেকনোবিটসের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।


3 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. Apnar blog er ar ki proshongsa korbo Sir... Ekta somoy Computer chalate partam na, technology r Kono kichui jantam na, Ami 2013 theke "Techknowbits" portam regularly. Ajke Ami ja ja jene6i, ja ja sikhe6i, tar reen konodin chokate parbo na, Sob e apnar teaching er jonnoi Sir. Ekjon eknistho pathok hoye, obedient student hoye Sir ke ar ki ba bolte pari, ar ki ba dite pari, Dui haat jor kore Respect chara.

    ReplyDelete
  3. Osadharon Sir,apnar blog er tulona hoi na.

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট