বছরখানেক ধরে বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনের দুনিয়ায়
নানা জল্পনা চলছিল। এবার সেই জল্পনা সত্যি
হতে চলেছে। খুব শীঘ্রই দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাঙ ফোল্ডেবল মোবাইল ফোন
বাজারে আনবে।স্যামসাঙ
যে ফোল্ডেবল মোবাইল ফোন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিল, সেটা মোটামুটি সবারই জানা। যদিও অনেকেই ভেবেছিলেন যে, ফোল্ডেবল ফোন বাজারে আসতে এখনো বছর দুয়েক বাকি।
Photo Credit : Pixabay |
কিন্তু
স্যামসাঙ যে ইতিমধ্যে এমন ফোন তৈরি করে ফেলেছে এবং সেটা যে তারা আর মাত্র মাসখানেকের
মধ্যেই বাজারে আনতে চলেছে, সেটা প্রায় কেউই আশা করেননি। নিঃসন্দেহে মোবাইল ফোনের
দুনিয়ায় এটা একটা বড় চমক।
মোবাইল ফোন কোম্পানি কোনো নতুন ফোন বাজারে আনার আগে তার
উপর একটি বিশেষ পেজ তৈরি করে, যেখানে থাকে ফোনটির ডিটেইল স্পেসিফিকেশন, মডেল
নম্বর, দাম সহ বিভিন্ন তথ্য। কোম্পানি যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা মাসখানেকের
মধ্যে ফোনটি বাজারে লঞ্চ করবে, তখন তারা সেই ফোনটির উপর সেই বিশেষ পেজটি তৈরি করে
তাদের ওয়েবসাইটে পেস্ট করে। কিন্তু ওয়েবসাইটে পেস্ট করা হলেও পেজটিকে কিন্তু
পাবলিশ করা হয় না। সেক্ষেত্রে পেজটির পাবলিশিং শিডিউল অপশনে গিয়ে বিশেষ একটি তারিখ
সেট করা হয় (সাধারণত এই তারিখটি হয় ফোনটি যেদিন কোম্পানি লঞ্চ করবে তার দুই-তিন দিন আগের তারিখ) শিডিউল অনুসারে সেই বিশেষ দিনটিতে পেজটি পাবলিশড্ হয় এবং
তখন সাধারণ মানুষ কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে সেই পেজটি দেখতে পান।
স্যামসাঙ
কোম্পানিও তাদের ফোল্ডেবল মোবাইল ফোন সম্ভবত আর মাসখানেকের মধ্যেই লঞ্চ করতে
চলেছে। কারণ তারা ইতিমধ্যে তাদের তৈরি ফোল্ডেবল ফোনটির উপর বিশেষ ওয়েব পেজ তৈরি
করে ফেলেছে এবং সেটি তাদের ওয়েবসাইটে পেস্টও করেছে। কিন্তু সম্ভবত স্যামসাঙ
কোম্পানির ওয়েবসাইট অ্যাডমিন সেই পেজটি পেস্ট করার পর তার শিডিউল ডেট সেট করতে
ভুলে গিয়েছিলেন। তাই গতকাল সেই পেজটি স্যামসাঙের ওয়েবসাইটে পাবলিশড্ হয়ে যায় এবং
সেটি সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে।
স্যামসাঙ একটি বহুজাতিক কোম্পানি, তাই তাদের
বিভিন্ন দেশের জন্য আলাদা আলাদা ওয়েবসাইট রয়েছে। ফোল্ডেবল ফোনের বিষয়টি পাবলিশড্
হয়েছে তাদের দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য তৈরি ওয়েবসাইটে। সেখানে যা তথ্য দেওয়া হয়েছে তা
থেকে জানা গিয়েছে যে, ফোল্ডেবল ফোনটির মডেল নম্বর হল SM-G888N0। এর মধ্যে ‘NO’ মানে হল ফোনটি প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার
বাজারেই স্যামসাঙ লঞ্চ করবে। পরবর্তীতে ক্রেতারা কেমন সাড়া দেয় তা দেখে ফোনটি
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও লঞ্চ করা হবে। ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোল্ডেবল ফোনটির (যাকে বলা
হচ্ছে Galaxy X) ডিজাইন দেখে মনে হচ্ছে ফোনটিকে পুরোপুরি দুই
ভাঁজ করা অর্থাৎ ফোল্ড করা যাবে না। ফোনটির শুধু একটি দিকের কিছুটা অংশ ফোল্ড করা
যাবে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে ফোনটির জন্য স্যামসাঙ ইতিমধ্যে Bluetooth
এবং WiFi সার্টিফিকেট পেয়ে গিয়েছে অর্থাৎ
ফোনটিতে ওই দুটি ফিচার থাকছেই। কিন্তু ফোনটিতে কী প্রসেসর থাকবে সেই সম্পর্কে কোনো
তথ্য ওয়েবসাইটে নেই। তবে আমার ধারণা এই ধরনের হাই এন্ড সেগমেন্টের স্পেশাল এডিশনের
ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ প্রসেসর থাকা উচিত। কিন্তু ৮৪৫ প্রসেসর অফিশিয়ালি
লঞ্চ হতে এখনও আরও কিছুটা দেরি, তাই স্যামসাঙ যদি তাদের Galaxy X ফোনটিকে মাসখানেকের মধ্যে লঞ্চ করতে চায়, তবে তারা এই ফোনে ৮৪৫ প্রসেসর
ব্যবহার করতে পারবে না, সেক্ষেত্রে তাদের ৮৩৫ প্রসেসর ব্যবহার করতে হবে।
আগামী
জানুয়ারি মাসের ৯ থেকে ১২ তারিখ আমেরিকার লাস ভেগাসে CES (Consumer Electronics Show) রয়েছে। প্রতিবছর কনজিউমার টেকনোলজি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে CES
আয়োজন করা হয়, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা কোম্পানিগুলি
তাদের নতুন পণ্যগুলি অফিশিয়ালি লঞ্চ করার আগে ক্রেতাদের সামনে হাজির করে। সম্ভবত
স্যামসাঙ কোম্পানিও লাস ভেগাসের CES-এ Galaxy X ফোনটি ক্রেতাদের সামনে হাজির করবে।
আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে যখন
মোবাইল ফোনের ব্যবহার সদ্য শুরু হয়েছিল, তখন বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা
চলত কে কত ছোটো মাপের ফোন তৈরি করতে পারে। তখন মোবাইল ফোন ছিল আক্ষরিক অর্থেই
‘মুঠো ফোন’। অর্থাৎ হাতের মুঠোর মধ্যেই সেই ফোন পুরোটা এঁটে যেত। ছবিটা পালটে গেল
২০০৭ সালের পর থেকে, যখন অ্যাপল বাজারে নিয়ে এল স্মার্ট ফোন। মোবাইল ফোন তখন আর
শুধু কথা বলা ও এসএমএস পাঠানোর যন্ত্র থাকলো না, সেটি তখন মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে
বাকি বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার এক নতুন যন্ত্রে পরিণত হল, যার সাহায্যে শপিং
থেকে চ্যাটিং সবকিছুই করা সম্ভব। আর তাই ‘মুঠো ফোন’-এর ধারণা
থেকে বেরিয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের সাইজ ক্রমশ বাড়তে শুরু করল — চার ইঞ্চি থেকে
সাড়ে চার ইঞ্চি হয়ে এখন স্ক্রিনের স্ট্যান্ডার্ড সাইজ দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ
ইঞ্চিতে। আর সেটাও যাদের কম মনে হয়, তাঁদের জন্য রয়েছে পৌনে সাত থেকে সাড়ে সাত
ইঞ্চির Mi Max-এর মতো ফ্যাবলেট। আর ফ্যাবলেটেও না পোষালে
রয়েছে ট্যাব। কিন্তু স্ক্রিনের সাইজ বড় হওয়ার ফলে ফোন ক্যারি করার ক্ষেত্রে
সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফোনের সাইজ ক্রমশ বড় হচ্ছে ঠিকই কিন্তু প্যান্টের পকেটের
সাইজ তো আর বাড়ছে না। আর সর্বদা হাতে ফোন বহন করাও সহজ নয়। তাই গত কয়েক বছর ধরে
বিভিন্ন কোম্পানি ফোল্ডেবল বা ভাঁজ করা সম্ভব এমন ফোন তৈরির চেষ্টা করে চলেছে। এর
জেরে স্ক্রিনের সাইজ বড় হলেও সেটি ফোল্ড করে সহজেই পকেটে বহন করা সম্ভব হবে।
ফ্লিপ
ফোন বা ফোল্ডেবল ফোনের ধারণাটা অবশ্য নতুন নয়। স্মার্ট ফোনের আগের যুগে অনেক
কোম্পানি ফ্লিপ ফোন তৈরি করতো। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে ফোনের একটি অংশে থাকতে স্ক্রিন
এবং অন্য অংশে থাকতো বাটন প্যানেল। কিন্তু টাচ ফোনের ক্ষেত্রে এমন ফোন তৈরি করাটা
বেশ জটিল কারণ এক্ষেত্রে বাটন প্যানেল বলে আলাদা কিছু নেই, পুরোটাই স্ক্রিন। তবে শেষ
পর্যন্ত চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে, যার উদাহরণ স্যামসাঙের Galaxy X। সুতরাং আগামী দিনে ফের যে ফোনের সাইজ ছোটো হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।
No comments:
Post a Comment