29 Nov 2017

আত্মহত্যা ঠেকাতে ফেসবুকের এআই টুল


⇒  ঘটনা ১ 

Photo credit: Pixabay
মুম্বইয়ের কলেজ ছাত্র অর্জুন ভরদ্বাজ ড্রাগের নেশায় জড়িয়ে পড়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অর্জুন মুম্বইয়ের তাজ হোটেলের উনিশ তলায় একটি ঘর ভাড়া নেয়। হোটেলের ঘরে ঢুকে সে ল্যাপটপ চালিয়ে ফেসবুকে লগইন করে। তারপর ‘ফেসবুক লাইভ’ অপশন অন করে। এবার সে মদের গ্লাস ও সিগারেট হাতে ফেসবুক লাইভ-এ বন্ধুদের লেকচার দেয় কীভাবে আত্মহত্যা করতে হয়।

লেকচার দেওয়া শেষ হলে অর্জুন হোটেলের ঘরের জানালা দিয়ে নিচে ঝাঁপ দেয়। ফেসবুক লাইভ-এ গোটা ঘটনাটির অর্থাৎ অর্জুনের আত্মহত্যার সাক্ষী ছিল তার বন্ধুরা।


⇒ ঘটনা ২

১৪ বছরের নাকিয়া ভেনান্ট আমেরিকার মিয়ামিতে বাবা-মার সঙ্গে থাকতো। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের এক রবিবার রাত তিনটা নাগাদ নাকিয়ার বাবা-মা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন বাড়ির সদর দরজার কড়া নাড়ে পুলিশ। অত রাতে দরজা খুলে পুলিশ দেখে নাকিয়ার বাবা-মা হতবাক। পুলিশ অফিসার গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে, ‘আপনাদের মেয়ের সাংঘাতিক বিপদ। সে এখন কোথায়?’
‘আমার মেয়ের বিপদ? সে তো পাশের ঘরে ঘুমোচ্ছে!’ নাকিয়ার মা এই জবাব দিলেও সন্তুষ্ট হন না পুলিশ অফিসার।
‘ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, আপনার কথাই যেন ঠিক হয়। কিন্তু পাশের ঘরে নয়, আগে চলুন বাড়ির বাথরুমে।’ পুলিশ অফিসার নাকিয়ার মা-কে নির্দেশ দেয়।
বাথরুমে গিয়ে দেখা যায় গলায় স্কার্ফ পেঁচানো অবস্থায় নাকিয়ার নিথর দেহ শাওয়ারের রড থেকে ঝুলছে।
ঘটনাটি এই যে, নাকিয়ার বাবা-মা যখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলেন, তখন বাথরুমে গিয়ে ফেসবুক লাইভ অন করে আত্মহত্যা করেছিল নাকিয়া। ফেসবুকে নাকিয়ার আত্মহত্যা লাইভ দেখেছিল যে বন্ধুরা, তাঁদেরই কেউ পুলিশে খবরটা দিয়েছিল।

⇒ ফেসবুকে হতাশা

দেশটা ভারত হোক বা আমেরিকা, ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করার এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে অনেকেই নানা কারণে জীবনের প্রতি গভীর হতাশা থেকে এমন অনেক পোস্ট করেন, যা খুবই উদ্বেগজনক।
‘এই জীবন রেখে আর লাভ নেই’, ‘বেঁচে থাকার কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না’ কিংবা ‘আমার দ্বারা জীবনে কিচ্ছু হবে না’...এমন অনেক পোস্ট আমরা আজকাল অনেকের টাইমলাইনে দেখতে পাই। কেউ কেউ টাইমলাইনে আবার হাতের ধমনী কাটার, ব্লেডের, বা রক্তের ছবিও পোস্ট করেন। এই ধরণের পোস্ট সাধারণত তাঁরাই করেন, যাঁরা কোনো কারণে জীবনের উপর আস্থা হারিয়ে গভীর মানসিক বিষাদে বা অবসাদে ভুগছেন। তাঁদের অনেকেই পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেন বা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সঠিক সময়ে যদি মনোবিদদের মাধ্যমে তাঁদের কাউন্সেলিং করা সম্ভব হয়, যদি তাঁদের বন্ধু বা অভিভাবকরা সেই সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ান এবং সঠিক পরামর্শ দেন, তবে আত্মহত্যাপ্রবণ সেই ব্যক্তিদের অধিকাংশকেই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

⇒ ব্যবস্থা নিল ফেসবুক

ফেসবুকে নিজের আত্মহত্যার লাইভ সম্প্রচার কিংবা টাইমলাইনে আত্মহত্যামূলক পোস্টের সংখ্যা দিনের পর দিন ক্রমশ বাড়তে থাকায় চিন্তায় পড়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। সমস্যার সমাধানে এবার তারা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) টুলসের সাহায্য নিতে শুরু করেছে। এআই টুল কীভাবে কাজ করবে সেই বিষয়ে পরে বলছি, তার আগে আসুন জেনে নেওয়া যাক আপনার কোনো ফেসবুক ফ্রেন্ড যদি এমন মানসিক অবসাদের শিকার হয়, তবে আপনি কী করবেন।

⇒ বন্ধুদের টাইমলাইনে নজর রাখুন


This photo is a property of teknowbits.blogspot.com
ফেসবুকে কারো টাইমলাইনে কারও কোনো পোস্ট দেখে যদি আপনার মনে হয় সেই ব্যক্তি মানসিক বিষাদে ভুগছেন, কিংবা তিনি আত্মহত্যা করার কথা ভাবছেন তবে সতর্ক হন। নিজের হোম পেজে সেই পোস্টের উপরে ডানদিকে তিনটি ডটের উপর ক্লিক করলে অপশন আসবে ‘গিভ ফিডব্যাক অন দিস পোস্ট’। আর অন্যের টাইমলাইনে তেমন পোস্টের উপরে ডানদিকে তিনটি ডটের উপর ক্লিক করলে অপশন আসবে ‘রিপোর্ট পোস্ট’।

‘গিভ ফিডব্যাক অন দিস পোস্ট’ অপশনে ক্লিক করলে এবার একাধিক অপশন শো করবে, সেগুলির মধ্যে পরপর ক্লিক করুন ‘সুইসাইড অর সেল্ফ ইনজুরি’ » ‘রিপোর্ট পোস্ট’ » ‘আই ডোন্ট থিঙ্ক ইট শুড বি অন ফেসবুক’ » ‘সি মোর অপশনস্’ » ‘ইট শোজ্ সামওয়ান হার্মিং দেমসেলভস্ অর প্ল্যানিং টু হার্ম দেমসেলভস্’
‘রিপোর্ট পোস্ট’ অপশনে ক্লিক করলে যে সমস্ত অপশন শো করবে সেগুলির মধ্যে পরপর ক্লিক করুন ‘আই ডোন্ট থিঙ্ক ইট শুড বি অন ফেসবুক’ » ‘সামথিং এলস্’ » ‘ইট শোজ্ সামওয়ান হার্মিং দেমসেলভস্ অর প্ল্যানিং টু হার্ম দেমসেলভস্’
‘ইট শোজ্ সামওয়ান হার্মিং দেমসেলভস্ অর প্ল্যানিং টু হার্ম দেমসেলভস্’ অপশনে ক্লিক করলে যে অপশনগুলি আসবে সেগুলি হল ‘অফার হেল্প অর সাপোর্ট’। এই অপশনে ক্লিক করে আপনি সেই ব্যক্তিকে (ধরা যাক তাঁর নাম A) প্রাইভেট মেসেজ পাঠিয়ে জানাতে পারবেন যে, তাঁকে আপনি সাহায্য করতে চান। 
দ্বিতীয় অপশনটি হল ‘কনট্যাক্ট এ ফ্রেন্ড’। এই অপশনে ক্লিক করে আপনি আপনার কোনো ফেসবুক ফ্রেন্ডকে (যিনি ‘A’ ব্যক্তিকে চেনেন) মেসেজ পাঠিয়ে ‘A’ ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন বা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, কীভাবে আপনারা দুজন ‘A’-কে সাহায্য করবেন।
তৃতীয় অপশনটি হল ‘লার্ন হাউ টু টক টু ‘A’ অ্যাবাউট দিস’। এই অপশনে ক্লিক করলে ফেসবুকের নতুন একটি পেজ ওপেন হবে যার উপরে লেখা রয়েছে ‘হোয়াট শুড আই ডু ইফ সামওয়ান পোস্টস সামথিং অ্যাবাউট সুইসাইড অর সেল্ফ-ইনজুরি?’। ফেসবুকের এই পেজের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, আপনার কোনো বন্ধু যদি আত্মহত্যা করার কথা ভাবে, তবে তাঁকে কীভাবে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই পেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অপশন হল ‘ফাইন্ড এ লোকাল হেল্পলাইন ইন ইয়োর কান্ট্রি’। এই অপশনে ক্লিক করে আপনি যে দেশ সিলেক্ট করবেন, সেই দেশের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হেল্পলাইন নম্বর পাবেন। এই সংস্থাগুলি আত্মহত্যাপ্রবণ, অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে নানাভাবে সাহায্য করে। ভারতে এমন কতগুলি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হল ‘সাথ’, ‘স্নেহা’, ‘জীবন’, ‘প্রতীক্ষা’ ইত্যাদি। এই সংস্থাগুলির ইমেল আইডি, ফোন নম্বর আপনি ফেসবুকের সেই পেজটিতে পাবেন।
চতুর্থ তথা শেষ অপশনটি হল ‘আস্ক আস টু লুক অ্যাট দ্য পোস্ট’। এই অপশনে ক্লিক করলে ‘A’ ব্যক্তির সেই বিশেষ পোস্টটি ফেসবুকের বিশেষ টিমের কাছে চলে যাবে। তারা সেই পোস্টটি খুঁটিয়ে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে ‘A’ ব্যক্তিকে সাহায্য করা সম্ভব। ফেসবুকের এমন টিম ২৪ ঘন্টা ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই কাজ করছে।

⇒ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল

বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। এত গ্রাহকের মধ্যে কে কখন সুইসাইডাল পোস্ট করছে, তা সবসময় জানা সম্ভব নয়। তাই ফেসবুক লঞ্চ করেছে এক বিশেষ ধরণের এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) টুল। আর্টিফিশিয়ায় ইনটেলিজেন্স অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল এক বিশেষ ধরনের সফট্ওয়্যার যা ফেসবুকের গ্রাহকদের পোস্ট, লাইভ ভিডিয়ো, কমেন্ট, ফটো ইত্যাদি পরীক্ষা করে জেনে নিতে পারবে যে, কোনো পোস্টের মাধ্যমে ব্যক্তির (যিনি পোস্টটি করেছেন) আত্মহত্যামূলক মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে কিনা। যদি তেমন কিছু প্রকাশ পায় তবে এআই টুল তৎক্ষণাৎ বিষয়টি ফেসবুকের বিশেষ টিম (যাদের কথা আগেই বলেছি)-কে জানাবে। এরপর সেই টিম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

1 comment:

  1. Bisoyta sottie khub proyojonio. Evabe amra kichu taja pran ke bachate pari.

    ReplyDelete

জনপ্রিয় পোস্ট